বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০ চলচ্চিত্র

বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০ চলচ্চিত্র

প্রতিনিয়ত চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে। একেকটি চলচ্চিত্রের পেছনে শত শত মিলিয়ন ডলার খরচও হচ্ছে। এত ব্যয়ের চলচ্চিত্র আবার পুঁজি তুলে কয়েক গুণ লাভও করছে। বাংলাদেশে অবস্থা খারাপ হলেও বহির্বিশ্বে, বিশেষ করে হলিউড বলিউডে চলচ্চিত্রের বাজার বেশ জমজমাট। একটার পর একটা চলচ্চিত্র তৈরি হচ্ছে যাদের খরচ একটার চেয়ে আরেকটার বেশি। ২০০ মিলিয়ন ডলারের কমে একশন, সায়েন্স ফিকশন হয় না বললেই চলে।

যে চলচ্চিত্র আজকে সবচেয়ে বেশি বাজেটের বলে স্থান করে নিয়েছে এক বছর পর সেখানে স্থান করে নিতে পারে অন্য কোনো চলচ্চিত্র। এখন পর্যন্ত (মে ১১, ২০১৭) বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল ১০টি সিনেমা সম্পর্কে সংক্ষেপে তুলে ধরছি এখানে। আর হিসেবের সুবিধার্থে উল্লেখ রাখছি  মিলিয়ন = ১০ লক্ষ

. পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: অন স্ট্রেঞ্জার টাইড (২০১১)

২০১১ সালে নির্মিত এই সিনেমাটি এখন পর্যন্ত হলিউডের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সিনেমা। এতে খরচ হয়েছিল আনুমানিক ৩৭৮.৫ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। এটি পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান সিরিজের চতুর্থ সিনেমা। বিশ্ববিখ্যাত অভিনেতা জনি ডেপের আইকনিক চরিত্র ‘ক্যাপ্টেন জ্যাক স্প্যারো’ এই সিরিজেরই চরিত্র। সমুদ্রের দস্যু নাবিক, ময়লা-নোংরা পোশাক, উদ্ভট সাজগোজ, ভীতু, হাস্যকর এই চরিত্রটি অনেকেরই প্রিয়। বিশ্ববিখ্যাত ওয়াল্ট ডিজনি প্রোডাকশন ছিল এই সিনেমার প্রযোজক। উল্লেখ্য মুভিটি বক্স অফিসে আয় করেছিল প্রায় ১.০৪ বিলিয়ন ডলার।

. পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: এট ওয়ার্ল্ডস এন্ড (২০০৭)

ব্যয়বহুল সিনেমার তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা সিনেমাটিও পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান সিরিজের। এটি এই সিরিজের ৩য় চলচ্চিত্র। এর বাজেট ছিল ৩০০ মিলিয়ন ডলার। বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রায় ২ হাজার ৩৪০ কোটি টাকা। এটি ব্যবসায়িক দিক থেকে বেশ লাভও করে। ইতিহাসের অন্যতম ব্যবসাসফল সিনেমা এটি। বক্স অফিসে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি আয় হয়েছিল। এই সিরিজের মুভিগুলোতে অভিনয়ের চ্যালেঞ্জও ছিল বেশি। দুর্গম স্থানে করতে হয়েছে এই সিনেমার শুটিং। সরঞ্জামাদি, কলাকুশলীদের নিয়ে দুর্গম স্থানে শুটিং করা বেশ কষ্টসাধ্য। চ্যালেঞ্জিং কাজ তারা করেছে এবং সে অনুসারে সফলতাও পেয়েছে।

. অ্যাভেঞ্জার্স: এজ অব আলট্রন (২০১৫)

 ‘মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্স’-এর ১১ তম চলচ্চিত্র এটি। ধরণের দিক থেকে এটি সায়েন্স ফিকশন, সুপারহিরো ও অ্যাকশন ধাঁচের। মার্ভেলের সিনেমাটিক ইউনিভার্সে বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় সুপারহিরো মুভি আছে। যেমন আয়রন ম্যান, ক্যাপ্টেন আমেরিকা, থর, হাল্ক ইত্যাদি। এদেরকে নিয়ে আলাদা আলাদা মুভি আছে।

মার্ভেল টিম এদের সবাইকে একত্র করেছে একটি মুভিতে। প্রথম মুভিটির নাম দ্য অ্যাভেঞ্জার্স। বিভিন্ন মুভিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সুপারহিরোদের একত্র করে বলা যায় তারা একটা বৈপ্লবিক কাজ করে ফেলেছে। সুপারহিরোদের এই মিলনমেলা মানুষ পছন্দও করেছে খুব। প্রথম মুভির সফলতায় উৎসাহিত হয়ে অনেক টাকা বাজেট নিয়ে তারা নির্মাণ করে আরেকটি মিলনমেলা। সেটিই হচ্ছে এখানের এজ অব আলট্রন। এটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছিল ২৮০ মিলিয়ন ডলার।

. জন কার্টার (২০১২)

এতে খরচ পড়েছিল ২৬৩ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু খরচ বেশি হলেও সিনেমাটা খুব একটা ব্যবসা করতে পারেনি। ব্যক্তিগতভাবে নিজের কাছেও খুব একটা ভালো লাগেনি। মনে হয়েছে মুভিটা ভালো করার এবং সফল হবার অনেক সুযোগ ছিল। কিন্তু কোনো এক বা একাধিক কারণে তা করতে পারেনি। এটি ডিজনির অন্যতম ফ্লপ মুভি। কোনোরকমে ২৮৪ মিলিয়ন ডলার আয় করে এটি। পোস্ট প্রোডাকশনের খরচ বাদ দিলে এটি লোকসান ছাড়া আর কিছুই নয়।

ডিজনি কর্তৃপক্ষ এই সিনেমার লোকসানের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করে এবং তদন্তে বেরিয়ে আসে সিনেমা তৈরিতে অনেক দুর্নীতি হয়েছে। যে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে সিনেমার সেসবে এত বেশি খরচ যাবার কথা নয়।

. ট্যাঙ্গলড্‌ (২০১০)

এনিমেটেড চলচ্চিত্র। এতেই ব্যয় হয়েছিল ২৬০ মিলিয়ন ডলার। এনিমেটেড চলচ্চিত্রের মাঝে পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল। একটি  এনিমেটেড চলচ্চিত্র তৈরিতে কীভাবে এত অর্থ যায় সেটা আসলেই ভাবার বিষয়। সাধারণ চলচ্চিত্রে অভিনেতাদেরকে খুব বড় অংকের মূল্য পরিশোধ করতে হয়। কিন্তু এনিমেটেড চলচ্চিত্রের বেলায় সেটা করা লাগে না। এনিমেশনে কণ্ঠ দেবার জন্য অর্থ প্রদান করতে হয় কিন্তু তা স্বাভাবিক অভিনয়ের তুলনায় কম। স্বাভাবিক সিনেমায় ভিন্ন ভিন্ন লোকেশনে শুটিং করতে হয়। কিন্তু এনিমেটেড সিনেমায় তা করতে হয় না। কিন্তু ডিজনির এই চলচ্চিত্রে এত বেশি খরচ হয়েছিল সম্ভবত টানা ৬ বছর ধরে একটু একটু করে বানানোর ফলে। তাছাড়াও এতে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল তা বেশ ব্যয়বহুল ছিল। বক্স অফিসে এটি আয় করেছিল ৫৯১ মিলিয়ন ডলার।

. স্পাইডার ম্যান থ্রি (২০০৭)

মার্ভেল কমিকসের আরেকটি সুপারহিরো চরিত্র। স্পাইডার ম্যান সিরিজে এর আগে আরো দুইটি সিনেমা বের হয়েছিল। দেয়াল বেয়ে উঠার ক্ষমতা, জাল নিক্ষেপ করার ক্ষমতা, ক্ষিপ্র গতি, অসম্ভব শক্তিশালী, বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন এই চরিত্রটি বিশ্বের অনেকের কাছেই প্রিয়। এর স্রষ্টা আরেক বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তি ‘স্ট্যান লি’। এটি তৈরিতে ব্যয় হয়েছিল ২৫৮ মিলিয়ন ডলার। সময়ের প্রেক্ষাপটে পরিমাণটা বেশিই। তবে খরচ পুষিয়ে আয়ও করে নিয়েছিল ৮৯০ মিলিয়ন ডলার।

সপ্তম থেকে একাদশতম অবস্থানে আছে ৫টি চলচ্চিত্র। এই পাঁচটিতেই ব্যয় হয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার করে।

. হ্যারি পটার এন্ড দ্য হাফ ব্লাড প্রিন্স (২০০৯)

জে কে রাউলিং-এর উপন্যাস অবলম্বনে তৈরি হ্যারি পটার সিরিজের ষষ্ঠ মুভি এটি। প্রযোজনা করেছে ওয়ার্নার ব্রাদার্স। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের সবচেয়ে বেশি বাজেটের মুভি এটি। খরচ ২৫০ মিলিয়ন ডলার। খরচ অনুসারে আয়ও করে নিয়েছিল তেমনই। মাত্র পাঁচ দিনে ৪০০ মিলিয়ন ডলার উপার্জন করে নিয়েছিল। এই মুভির মোট আয় ৯৩৪ মিলিয়ন ডলার। ওয়ার্নার ব্রাদার্সের অন্যতম ব্যবসা সফল মুভি।

. দ্য হবিট: ব্যাটল অব দ্য ফাইভ আর্মিস (২০১৪)

বিশ্ববিখ্যাত এপিক ট্রিলজি ‘লর্ড অব দ্য রিংস’ এর আগের কাহিনী বিধৃত হয়েছে এখানে। জে. আর. আর. টলকিনের উপন্যাস ‘দ্য হবিট’ অবলম্বনে তিনটি মুভি তৈরি করা হয়েছে। এই মুভি সিরিজের তৃতীয় মুভিটি হচ্ছে এটি। ৩য় মুভিটি নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। তুলে নিয়েছে প্রায় চার গুণ অর্থ। বক্স অফিসে আয় করেছে ৯৫৬ মিলিয়ন ডলার। পরিচালক পিটার জ্যাকসন।

. ব্যাটম্যান ভার্সেস সুপারম্যান: ডন অব জাস্টিস (২০১৬)

এটি ডিসি কমিকস ইউনিভার্সের একটি মুভি। মার্ভেল কমিকস যেমন অ্যাভেঞ্জার্স সিরিজে আয়রন ম্যান, হাল্ক, থর, ক্যাপ্টেন আমেরিকা সহ কয়েকটি সুপারহিরো চরিত্রের ক্রস ওভার (একত্রীকরণ) করেছে তেমনই ডিসি কমিকসও ব্যাটম্যান ও সুপারম্যানের মাঝে ক্রসওভার করেছে এখানে। ব্যয় হয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। তার বিপরীতে আয় করেছে ৮৭৩ মিলিয়ন ডলার।

১০. ক্যাপ্টেন আমেরিকা: সিভিল ওয়্যার (২০১৬)

অ্যাভেঞ্জার্সের মতো এটিও মার্ভেল সিনেমাটিক ইউনিভার্সের একটি মুভি। এটি এই ইউনিভার্সের ১৩ তম মুভি। বলা যায় ২০১১ সালে নির্মিত ক্যাপ্টেন আমেরিকা: ফার্স্ট অ্যাভেঞ্জার্স এবং ২০১৪ সালে নির্মিত ক্যাপ্টেন আমেরিকা: দ্য উইন্টার সোলজার মুভি দুটির সিক্যুয়েল এটি। ২৫০ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নির্মিত এই মুভিটি আয় করে নিয়েছিল প্রায় ১.১৫ বিলিয়ন ডলার।

সংক্ষেপে আরো কয়েকটি ব্যয়বহুল মুভির তালিকা

১১. দ্য ফেইট অব দ্য ফিউরিয়াস (২০১৭) – ২৫০ মিলিয়ন ডলার

১২. স্পেকট্রা (২০১৫) – ২৪৫ মিলিয়ন ডলার

১৩. স্টার ওয়ার্স: দ্য ফোর্স এওয়েকেনস (২০১৫) – ২৪৫ মিলিয়ন ডলার

১৪. এভাটার (২০০৯) – ২৩৭ মিলিয়ন ডলার

১৫. দ্য ডার্ক নাইট রাইজেস (২০১২)- ২৩০ মিলিয়ন ডলার

১৬. দ্য ক্রনিকলস্‌ অব নারনিয়া: প্রিন্স ক্যাসপিয়ান (২০০৮) – ২২৫ মিলিয়ন ডলার

১৭. দ্য লোন রেঞ্জার (২০১৩) – ২২৫ মিলিয়ন ডলার

১৮. পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: ড্যাড ম্যানস চেস্ট (২০০৬) – ২২৫ মিলিয়ন ডলার

১৯. ম্যান অব স্টিল (২০১৩) – ২২৫ মিলিয়ন ডলার

২০. দ্য হবিট: ডেসোলেশন অব স্মাগ (২০১৩)- ২২৫ মিলিয়ন ডলার তথ্যসূত্রঃroar.media