সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ক্ষমতার উৎস কোথায় ছিল?

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, রাজনীতির অঙ্গনে যিনি অত্যন্ত ক্ষমতাধর হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তার ক্ষমতার মূল্যায়ন অনেকেই করতেন তার পারিবারিক রাজনৈতিক বন্ধনের সূত্র ধরে।

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পিতা ফজলুল কাদের চৌধুরী অল ইন্ডিয়া মুসলিম স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশনের সাধারণ সম্পাদক থেকে মুসলিম লীগের সভাপতি হয়েছিলেন । পাকিস্তানের স্পিকার এবং ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টও হয়েছিলেন একদিনের। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি কারাবন্দি হন। কারাগারেই মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ফজলুল কাদের চৌধুরীর পিতা আবদুল জব্বার চৌধুরী ও দাদা বক্সে আলী চৌধুরী। বাংলাদেশের পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ অঞ্চলজুড়ে শেকড়ের মতো ছড়িয়ে চট্টগ্রামের এ চৌধুরী পরিবারের আত্মীয়তা।   বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গেও  ছিল গভীর সম্পর্ক এ পরিবারের। ফজলুল কাদের চৌধুরীর বড় ছেলে বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। এরশাদ সরকারের সাবেক এ মন্ত্রী বিএনপি সরকারের সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা ছিলেন। নির্বাচন করেছেন ওআইসি মহাসচিব পদেও। মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে কিছুদিন আগে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হয়েছে।
পারিবারিক ও বৈবাহিক সূত্রে সালাউদ্দিন কাদের কয়েকটি কিংবদন্তি রাজনৈতিক পরিবারের আত্মীয়। তার দাদা শ্বশুর হলেন মাওলানা আবদুস সোবহান। যার নামে ঢাকার সোবহানবাগের নামকরণ। নানা শ্বশুর ফরিদপুরের বিখ্যাত চৌধুরী আবাদ আল্লা জহিরউদ্দিন লাল মিয়া। লাল মিয়ার মেয়ে জামাই আলমগীর মোহাম্মদ আদেল হলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শ্বশুর। ফলে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ তার মামা শ্বশুর। এ সূত্রে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সঙ্গে তৈরি হয়েছে তার দূরবর্তী সম্পর্ক। সালাউদ্দিন কাদেরের চাচা শ্বশুর হচ্ছেন জাতীয় পার্টির সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ আদেল। আবার জাহাঙ্গীর আদেলের শ্বশুর হলেন পাকিস্তানের সাবেক গভর্নর মোনায়েম খান। ফজলুল কাদের চৌধুরীর তৃতীয় ছেলে গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী সাবেক এমপি এবং বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক। গিয়াসউদ্দিন কাদেরের শ্বশুর হলেন বঙ্গবন্ধু সরকারের প্রতিরক্ষা সচিব ও সাবেক কেবিনেট সচিব ভাষাসৈনিক মুজিবুল হক। ফজলুল কাদের চৌধুরীর মেজো ছেলে প্রয়াত সাইফুদ্দিন কাদের চৌধুরী। তার নানা শ্বশুর হলেন দেশভাগের পর পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে ঢাকায় আসা মুসলিম লীগের নেতা ও দার্শনিক আবুল হাসিম। আর আবুল হাসিমের ছেলে হলেন এক সময়ের কট্টর বামপন্থি রাজনীতিক ও বুদ্ধিজীবী বদরুদ্দিন উমর। সে হিসেবে বদরুদ্দিন উমর ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর সম্পর্ক তালই-পুতরার। সাইফুদ্দিন কাদেরের শ্বশুর বাড়ির দিক থেকে নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের সঙ্গে দূরসম্পর্কীয় আত্মীয়তা তৈরি হয়েছে চট্টগ্রামের এ চৌধুরী পরিবারের। ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছোট ছেলে জামালউদ্দিন কাদের চৌধুরী। তিনি হলেন প্রখ্যাত বিজ্ঞানী ড. কুদরত-ই-খুদার নাতিন জামাই। ফজলুল কাদের চৌধুরীর আপন ভাতিজা হলেন আওয়ামী লীগের এমপি ফজলে করিম চৌধুরী। আবার সালাউদ্দিন কাদেরের খালাতো ভাই হলেন শিল্পপতি  সালমান এফ রহমান। সালমান এফ রহমানের পিতা ব্যবসায়ী ও মুসলিম লীগ নেতা প্রয়াত ফজলুল রহমান। তার নিকট আত্মীয় বিএনপি সরকারের সাবেক মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা ও আওয়ামী লীগ সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। আবার সালাউদ্দিন কাদেরের দুই খালাতো ভাই হলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধান দুই বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী ও সৈয়দ জে আর মোদাচ্ছির হোসেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফুফা হলেন ভাষাসৈনিক ও এইচআরসি গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা হেদায়েত হোসেন চৌধুরী। তার দুই ছেলে হলেন আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী ও এইচআরসি গ্রুপের চেয়ারম্যান সাঈদ হোসেন চৌধুরী। সালাউদ্দিন কাদের ও সাবের হোসেন পরস্পর মামাতো-ফুফাতো ভাই। অন্যদিকে সাবের হোসেন চৌধুরীর দুই ফুফাতো ভাই হলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী ও বিএনপি সরকারের আমলে ব্যর্থ ক্যুর অভিযোগে চাকরিচ্যুত সেনাপ্রধান মে. জেনারেল (অব.) নাসিম বীরবিক্রম। মুসলিম লীগের জাঁদরেল নেতা হামিদুল হক চৌধুরী ও সাংবাদিক জহুর হোসেন চৌধুরী হলেন সম্পর্কে সাবের হোসেন চৌধুরীর চাচা। আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এইচ এম আশিকুর রহমান এমপি হলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফুফাতো বোনের জামাই। আর বিএনপি নেতা ও সাবেক মন্ত্রী মিজানুর রহমান সিনহা হলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বোনের ভাসুর।

এছাড়া মুসলিম বিশ্বে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছিল ব্যপক পরিচিতি। তবে ক্ষমতা, পারিবারিক বন্ধন বা পরিচিতি , কিছুই তাকে মৃত্যুদণ্ড থেকে রক্ষা করতে পারেনি!