আগে খালেদাকে মুক্তি তারপর আলোচনা তারপর অন্য কিছু

আগে খালেদাকে মুক্তি তারপর আলোচনা তারপর অন্য কিছু

আগে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে, তারপর আলোচনা তারপর অন্য কিছু সরকারকে হুশিয়ারী দিয়ে এমন কথা বলেছেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবির কাছে কোনো আপস নেই। এই যে স্বৈরাচার আমাদের বুকের ওপর চেপে বসেছে তাকে পরাজিত করে একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

শনিবার বিকেলে বরিশাল হেমায়েত উদ্দিন কেন্দ্রীয় ঈদগাহ মাঠেবিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নি:শর্ত মুক্তির দাবিতে বরিশালে বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে শুক্রবার রাত সাতে দশটার দিকে সমাবেশের অনুমতি দেয় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ (বিএমপি)। এদিকে মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে সমাবেশ ঘিরে ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা নেয়া হয়। বিভিন্ন পয়েন্টে গাড়ি থামিয়ে চেক করা হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির ১০ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, দানবটা কে? তখন জনতার পক্ষ থেকে বলা হয়, হাসিনা হাসিনা। তখন মির্জা ফখরুল বলেন, এখন দাবি একটাই। একদফা এক দাবি হাসিনা তুই কবে যাবি।এখন থেকে এই একটাই স্লোগান।

মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম খালেদা জিয়া গণতন্ত্রের মাতা এই দেশের মানুষের মুক্তির জন্য যিনি আজীবন লড়াই করেছেন সেই নেত্রীর মুক্তির জন্যে আপনারা আজ এখানে এসেছেন। গতকাল কারাগারে দেশনেত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তাকে যখন বললাম কালকে বরিশালে জনসভা করতে যাচ্ছি তিনি তখন বললেন, বরিশালের জনগনকে আমার সালাম জানাবেন। বরিশালের মানুষ সংগ্রামী লড়াকু। তারা গণতন্ত্রের লড়াইয়ে আছে, দেশনেত্রীর সঙ্গে আছে। যখন গণতন্ত্রের জন্য দেশনেত্রীর এখানে আসার কথা তখন তিনি কারাগারে আবদ্ধ আছেন। যে কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে সেখানে আর কোনো বন্দি রাখা হয় না। শ্যাতসেতে একটি কারাগারে তাকে রাখা হয়েছে। যিনি দেশের মানুষের জন্য লড়াই করেছেন তাকে আজ ভালভাবে রাখা হয়নি। তিনি চিকিৎসার জন্য নিজস্ব চিকিৎকদের সুযোগ দেয়ার দাবি করলেও সে সুযোগ দেয়া হয়নি।

মির্জা ফখরুল বলেন, শেখ হাসিনা আবারো ভোট ছাড়া প্রধানমন্ত্রী হতে চান। কিন্তু আমরা বলতে চাই ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচন হবে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন। কিন্তু তিনি তার কথা রাখেননি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের এদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়নি। এবার যদি ভোট দেয়ার সুযোগ পায় তাহলে শেখ হাসিনাকে এদেশের মানুষ আস্তাকুরে নিক্ষেপ করবে। এই ভয়ে দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।

উপস্থিত জনতার উদ্দেশে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, কষ্ট করে ঝুঁকি নিয়ে এই জনসভায় এসেছেন। যখন দেশে স্বৈরাচার নেমে আসে, যখন দেশে দুর্নীতি হয়, তখন জনগণের কাছে যেতে হয়। আমরা আজকে সেই জনগণের সামনে এসে হাজির হয়েছি। আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আমরা তার মুক্তি চাই। ২০১৪ সালে এই সরকার জবরদস্তি করে ক্ষমতায় এসে সেই মসনদ টিকিয়ে রাখার জন্য খুন, গুম, হত্যা যা দরকার সব চালিয়ে যাচ্ছে।তিনি বলেন, আজকে স্বৈরাচারী এরশাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি পায়। কিন্তু বিএনপিকে অনুমতি দেয় না। কারণ বিএনপি জনসভা করলে লাখ লাখ মানুষের ঢল নামে। তাই ভয় পায়। তিনি আরো বলেন, আমরা কি এদেশে রোহিঙ্গা হয়ে গেছি। আমরা আর রোহিঙ্গা হয়ে বাঁচতে চাই না। রক্তের পথ বেয়ে এই দেশে গণতন্ত্র আসবে কেউ ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।আমরা প্রায়ই শুনি এই সরকার অনেক জনপ্রিয়। এত যদি জনপ্রিয় হয় তাহলে আমরাও আপনাকে ভোট দেব। আপনি যদি জনপ্রিয় হন তাহলে নিরপেক্ষ একটা সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন। বিএনপির দাবি অনুযায়ী নয় আওয়ামী লীগ ও জামায়াতের দাবি অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে একটা ভোট দেন।

বেগম খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে উল্লেখ করে মির্জা আব্বাস বলেন, ৭১ সালে একবার জেলের তালা ভাঙা হয়েছিল। ১৯৯০ সালে এরশাদের সময় জেলে তালা ভাঙা হয়েছিল। সেদিন আমি এবং মোস্তফা মহসিন মন্টুকে মুক্ত করা হয়েছি। ঝড় উঠলে সামাল দিতে পারবেন না। আটকে রাখার চেষ্টা করবেন না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, আওয়ামী লীগ বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল। তাদের পুনরায় রাজনীতি করার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। আমার বেগম খালেদা জিয়াকে শুধু মুক্ত করেই আনবো না, আমরা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে দেশে আবার গণতন্ত্র ও বহুদলীয় গণতন্ত্র পুন প্রবর্তন করবো। ৭১ সালে যখন পাক হানাদার বাহিনী আক্রমন করেছিল। তখন আওয়ামী লীগ পালিয়ে গিয়েছিল। আর জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছিলেন। আসুন আজ নতুন শপথ করে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করা পর্যন্ত আমরা আর ঘরে ফিরে যাব না।

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সমাবেশ প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন স্থানে বাধা দেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে। তারপরও এই জনসমুদ্র বন্ধ করতে পারেনি। তিনি বলেন, দুর্নীতি আজ একটি দলের কাছে সীমাবদ্ধ। যে দলটি একদলীয় শাসন চালাচ্ছে। এ সরকারের সময় দুর্নীতি কমবে না। বেগম খালেদা জিয়া শুধু বাংলাদেশের নেতা নয়, এখন তিনি বিশ্ব নেতা। তার নেতৃত্বেই হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করা হবে।

বিএনপিরযুগ্ম-মহাসচিব ও বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি অ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ারের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর প্রতিক, সেলিমা রহমান, এরয়ার ভাইস মার্শাল অব. আলতাফ হোসেন চৌধুরী, বরকত উল্লাহ বুলু, অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন, সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস জাহান শিরিন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক এবিএম মোশাররফ হোসেন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুল হক নান্নু, নির্বাহী কমিটির সদস্য মেজবাহ উদ্দিন ফরহাদ, নাজিম উদ্দিন আলম, আবুল হোসেন খান, হাফিজ ইব্রাহিম, ভোলা জেলা বিএনপির সভাপতি গোলাম নবী আলমগীর, পিরোজপুর জেলা বিএনপির সভাপতি গাজী নুরুজ্জামান বাবুল, ঝালকাঠী জেলা সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম নুপুর, বরগুনা জেলার সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আলিম উদ্দিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, ছাত্রদলের সহসভাপতি এজমল হোসেন পাইলট প্রমুখ।

এছাড়াও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল আউয়াল মিন্টু, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান, মাহবুবুল হক নান্নু , বিএনপি নেতা কাজী রওনাকুল ইসলাম টিপু, অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম সজল, হায়দার আলী লেলিন, দুলাল হোসেন, অ্যাডভোকেট মাহমুদ হোসাইন আল মামুন, যুবদলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান,বরিশাল মহানগর বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন,বরিশাল জেলা যুবদলের সভাপতি অ্যাডভোকেট পারভেজ আকন বিপ্লব, বরিশাল মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত দপ্তর সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহমুদ হোসেন মামুন, ছাত্রদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাছরিন, সমাজ সভা বিষয়ক সম্পাদক আব্দুর রহিম, ছাত্রদল নেতা ইকবাল হোসেন আসিফসহ বিএনপি ও তার অঙ্গ সহযোগি সংগঠনের লক্ষাধিক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন।