মনের ক্ষোভ প্রতিহিংসা চরিত্রার্থ করার জন্যই খালেদার পর তারেককে টার্গেট করেছে: রিজভী

‘দেশে তো আওয়ামী বিচার হচ্ছে এখানে হচ্ছে শেখ হাসিনার বিচার এটা তো প্রকৃত আইনের বিচার না। আইনের শাসনকে তারা কালো কাপর দিয়ে জুড়ে রেখেছে। তাঁর যে মনের ক্ষোভ প্রতিহিংসা সেটার চরিত্রার্থ করার জন্যই খালেদা জিয়ার পর তাকে (তারেক) টার্গেট করেছে। আরও একটি রোডম্যাপ তিনি করেছেন। এটাতে কোনো লাভ হবে না। পৃথিবীর সব দেশ তো শেখ হাসিনার দেশের মতো অগণতান্ত্রিক দেশ না, নিষ্ঠুর নির্দয়ের দেশ না।’

‘তারেক রহমানকে দেশে ফেরানোর ব্যাপারে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাথে কথা হয়েছে’- প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এমন বক্তব্যের উদ্ধৃতি দিয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বুধবার (১৮ এপ্রিল) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা আহমেদ।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন, ‘কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারস সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা নিয়ে আমরা বারবার গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কারা কর্তৃপক্ষ কোনো উদ্যোগই গ্রহণ করছে না। বরং স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন-বেগম খালেদা জিয়াকে যথাযথ মর্যাদায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্য ডাহা মিথ্যাচার। সরকারি মেডিকেল বোর্ড দেশনেত্রীকে অর্থপেডিক বেড দেয়াসহ যেসব চিকিৎসার সুপারিশ করেছিল তা এখনও পর্যন্ত বাস্তবায়ন করা হয়নি। কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার কোনো চিকিৎসাই হচ্ছে না। বেগম জিয়া দীর্ঘদিন ধরে ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের দ্বারা যেসব চিকিৎসা সেবা পেতেন সে সুযোগ থেকেও তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। মনে হচ্ছে এর পেছনে সরকারি কোনো গভীর চক্রান্ত রয়েছে। জাল নথি তৈরি করে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় সরকারের নির্দেশিত রায়ে বেগম খালেদা জিয়াকে কারাবন্দি করার পর থেকে এখন পর্যন্ত তাঁর সাথে কারা কর্তৃপক্ষ ও সরকার যে ধরনের আচরণ করেছে এবং তাঁর চিকিৎসা নিয়ে যে টালবাহানা করছে তাতে আমরা দেশনেত্রীর জীবন নিয়ে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করছি।’

এসময় তিনি অবিলম্বে বেগম জিয়াকে তাঁর পছন্দানুযায়ী রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়ার জন্য আবারও জোর দাবি জানান।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে রয়েছেন। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ব্রিটেনের স্বনামধন্য টিভি চ্যানেল-ফোর এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশে বিরোধী দল ও মতের ব্যক্তিদের নিখোঁজ হওয়া নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি প্রশ্নটি এড়িয়ে যান। এটা যুগে যুগে স্বৈরশাসকদেরই একটা আচরণ। শেখ হাসিনার ভাগ্নী ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য টিউলিপ সিদ্দিকীকে ব্রিটেনের চ্যানেল ফোর এর পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুম-খুন ও নিখোঁজ নিয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন-বিশ্বের যেকোনো জায়গায় গুম-খুনের ঘটনা ঘটলে এর নিন্দা জানাই, বাংলাদেশও এর অন্তর্ভুক্ত। আরেক সাংবাদিক বলেন-ব্রিটেনে মানবাধিকার নিয়ে আপনি সোচ্চার, অথচ বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে আপনি চোখ বন্ধ করে রাখতে পারেন না। আপনার খালা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপনি একটা ফোন করলে অনেকের জীবন বেঁচে যেতো। টিউলিপ বলেন-আমার খালার সঙ্গে আমি রাজনীতি নিয়ে কোনো কথা বলি না। তখন সাংবাদিক মন্তব্য করেন যে, এটা সত্য নয়, টিউলিপ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রীয় সফরসঙ্গী হয়ে রাশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে গিয়েছেন, তার এই বক্তব্য কি ডাবল স্ট্যান্ডার্ড নয়?’

রিজভী আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড নিয়ে সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেলেও একদিন প্রধানমন্ত্রীকে এর জবাব দিতেই হবে। বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের গুম, খুন, অপহরণ, বিচার বহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন চালিয়ে সরকার পতন ঠেকানো যাবে না। ২০১৬ সালে গ্রেফতার ও আটক নিয়ে সুপ্রিম কোর্ট পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উৎপীড়নের বিরুদ্ধে বিচারককে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দিয়ে রুল জারি করেছিল, কিন্তু সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনাকে শুধু অগ্রাহ্যই করছে না, বরং ঠান্ডা মাথায় বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে আইন বহির্ভূতভাবে গ্রেফতার, পুনঃগ্রেফতার, গ্রেফতার না দেখিয়ে আটক করে রাখাসহ অবিরাম নিষ্ঠুর পৈশাচিক নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি এর হাড়হিম করা ঘটনা হলো কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৩ নেতাকে চোখ বেঁধে মাইক্রোবাসে তুলে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া। সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী বিদ্যমান আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। তবে এসব বিষয়ে সরকার নিশ্চল, নিশ্চুপ এবং দুষ্কর্মের সহায়তাকারী। সুতরাং এই ঘটনা আইনের শাসনের চোখেই কালো কাপড় বাঁধার শামিল।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারমসের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম-মহাসচিব মুজিবুর রহমান সরোয়ার, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ।