হ্যানসি ক্রনিয়ে: অধিনায়ক থেকে খলনায়ক

হ্যানসি ক্রনিয়ে: অধিনায়ক থেকে খলনায়ক

ক্রিকেট ইতিহাসে স্মরণীয় অধিনায়কদের একজন হয়ে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকার হ্যানসি ক্রনিয়ে। তার কথা ক্রিকেটপ্রেমীরা মনে রেখেছে তিনটি কারণে। একটি হলো তার অধিনায়কত্বের নৈপুণ্য, দ্বিতীয়টি আরেক বিখ্যাত ক্রিকেটার আজহারউদ্দিনের সহায়তায় ম্যাচ পাতানো, আর তৃতীয়টি তার করুণ মৃত্যু। অলরাউন্ডার এই ক্রিকেটারের খ্যাতি-কুখ্যাতিতে মোড়ানো জীবন নিয়েই আজকের লেখা।

দক্ষিণ আফ্রিকার ব্লুমফনটেনে ১৯৬৯ সালের ২৫শে সেপ্টেম্বর ইউয়ি ক্রনিয়ে এবং সান মারি ক্রনিয়ের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন হ্যানসি ক্রনিয়ে। তার যখন জন্ম, তখন সবেমাত্র দক্ষিণ আফ্রিকা বর্ণবাদের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ হয়।

আশির দশকে ব্লুমফনটেন শহরের সবচেয়ে নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গ্রে কলেজে অধ্যয়নরত ছিলেন দুই সহোদর ফ্রান্স ক্রনিয়ে এবং হ্যানসি ক্রনিয়ে। সেসময় দুজনে মিলে গ্রে কলেজকে অনেক খেলায় জিতিয়েছেন। ছোট ভাই হ্যানসি ক্রনিয়ে স্কুলেও ক্রিকেট এবং রাগবি দলের অধিনায়ক ছিলেন। শুধুমাত্র খেলাধুলায় না, ক্লাসের সবচেয়ে বিচক্ষণ ছাত্র হিসেবেও তার সুনাম ছিল।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ভলসটেড তার ছাত্র হ্যানসি ক্রনিয়েকে নিয়ে অনেক আশাবাদী ছিলেন। একদিন ক্রনিয়ে নিজেই তাকে বলেছিল, ক্রিকেটের মক্কা লর্ডসে খেলার সুযোগ পেলে বিমানের টিকিট পাঠিয়ে দেবে স্যারকে। আকাশছোঁয়া স্বপ্ন দেখা বালক ক্রনিয়ে হয়তো ভুলেই গিয়েছিল তখনো তার দেশ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধ।

কিন্ত স্যারকে দেওয়া কথা পূরণ করতে স্বপ্নের পিছনে খুব দ্রুতই ছুটে চলেন ক্রনিয়ে। তিনি অরেঞ্জ ফ্রি স্টেইটের হয়ে ১৯৮৮ সালে ট্রান্সভালের বিপক্ষে প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেটে নিজের প্রথম ম্যাচ খেলেন, মাত্র ১৮ বছর বয়সে।

অরেঞ্জ ফ্রি স্টেইটে প্রথম মৌসুম ভালো-মন্দে কাটালেও তার বিচক্ষণতা দেখে কয়েক মৌসুম পরেই তাকে দলের অধিনায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ক্রনিয়ে  লাল বলের ম্যাচে মাত্র ১৯ গড়ে রান করলেও সাদা বলের ম্যাচে সবার নজর কেড়েছিলেন ৬০ এর উপর গড়ে রান করে।

নিষিদ্ধ থাকা দক্ষিণ আফ্রিকা ‘৯২ এর বিশ্বকাপের ঠিক আগেই আবারো ক্রিকেটে ফেরে। ফেরার পর ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলতে ভারত সফরে আসে দক্ষিণ আফ্রিকা, ঐ সিরিজে দলের সাথে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের জন্য আসেন হ্যানসি ক্রনিয়ে। এছাড়া তার মাদার তেরেসার সাথে দেখা করার বহুদিনের ইচ্ছেটাও পূরণ হয় ভারত সফরের মধ্য দিয়ে।

এরপর ক্রনিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম বিশ্বকাপ দলে জায়গা করে নেন, নিজের প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিডনিতে। ঐ আসরে ৮ ম্যাচ খেলে রান করেছিলেন ৩৪ ব্যাটিং গড়ে।

বিশ্বকাপের পর দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে যায়, ঐ সফরেও দলের সাথে ছিলেন ক্রনিয়ে। দক্ষিণ আফ্রিকা নির্বাসন কাটিয়ে প্রথম টেস্ট খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে, সেই ম্যাচেই দলে জায়গা করে নেন তিনি।

তখনকার সবচেয়ে শক্তিশালী দল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে জিততে জিততে হেরে গিয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকা, শেষ দিনে ২০০ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে এক পর্যায়ে দক্ষিণ আফ্রিকার ছিল ২ উইকেটে ১২২ রান, সেখান থেকে মাত্র ১৪৮ রানে অল আউট হয়ে যায় প্রোটিয়ারা।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এরপর দুর্দান্ত সময় কাটাতে থাকেন ক্রনিয়ে। ভারতের বিপক্ষে ১৯৯২-৯৩ মৌসুমে ঘরের মাটিতে ওয়ানডে এবং টেস্ট সিরিজে দুই ফরম্যাটেই ব্যাটে-বলে তিনি ছিলেন অসাধারণ। টেস্টে নিজের ক্যারিয়ারের ৫ম ইনিংসে ভারতের বিপক্ষে ৪১১ বলে ১৩৫ রান করে নির্বাসনের পর দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম জয় নিশ্চিত করেন ক্রনিয়ে।

নেতৃত্ব দেওয়ার অসাধারণ প্রতিভা নিয়ে জন্মানো ক্রনিয়ের প্রতিভা দেখানোর জন্য বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে হয়নি। নিয়মিত অধিনায়ক কেপলার ওয়েসলেসের ইনজুরির কারণে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক হিসাবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ১৯৯৩-৯৪ মৌসুমে সিডনিতে দলকে নেতৃত্ব দেন তিনি।

ক্রনিয়ে  যখন দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেন, তখন অস্ট্রেলিয়ার জয়ের জন্য মাত্র ১১৭ রানের প্রয়োজন ছিল, তিনি দেরি না করে ডোনাল্ডকে সরিয়ে বল তুলে দেন ডি ভিলিয়ার্সের হাতে। ডি ভিলিয়ার্স ঐ ইনিংসে ৬ উইকেট শিকার করে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫ রানের জয় এনে দেন।

ফর্মের তুঙ্গে থাকা ক্রনিয়ে শিক্ষককে দেওয়া কথা ভুলেন নি, ১৯৯৪ সালে লর্ডসে নামার আগে কলেজের প্রধান শিক্ষকের ঠিকানায় বিমানের টিকেট পাঠিয়ে দেন তিনি।

হ্যানসি ক্রনিয়ে  আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বুদ্ধিদীপ্ত অধিনায়কদের মধ্যে অনেকের চোখেই সবার উপরে থাকবেন। অধিনায়ক হিসেবে তার পরিসংখ্যান সে কথাই বলে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১৮টি টেস্ট সিরিজে নেতৃত্ব দিয়ে জয় পেয়েছেন ১৩টি সিরিজে, যার বিপরীতে পরাজয় মাত্র ৪টি সিরিজে। ওয়ানডেতে ১৩৮ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়ে ৯৯টি জয় এনে দিয়েছেন দলকে, পরাজিত হয়েছেন ৩৫ টি ম্যাচে।

তবে বিশ্বকাপে এলেই খেই হারিয়ে ফেলত তার দল। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ম্যাচ টাই হওয়ার পর দুর্ভাগ্যজনকভাবে ডোনাল্ড রান আউট হলে অস্ট্রেলিয়াকে জয়ী ঘোষণা করা হয়। আজ অবধি বিশ্বকাপের ইতিহাসে অন্যতম হৃদয় বিদারক ঘটনা এটি। এছাড়া ১৯৯২ সালে বৃষ্টি আইনের মারপ্যাঁচে পড়ে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ১ বলে ২২ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে হবার কারণে অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন।

শেষ ওভারে ৯ রানের দরকার ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার, বল হাতে আসেন ফ্লেমিং। ফ্লেমিংয়ের করা প্রথম দুই বলে দুটি চার হাঁকিয়ে ম্যাচ টাই করেন ল্যান্স ক্লুজনার। এরপর তৃতীয় বলে রান নিতে গিয়ে রান আউট থেকে বেঁচে যান ডোনাল্ড। এরপরের বলে আবারো স্ট্রেইট ড্রাইভ করে দৌড় শুরু করেন ক্লুজনার, এবার সবাইকে বিস্মিত করে দাঁড়িয়ে থাকেন ডোনাল্ড। শেষ পর্যন্ত ২ বল বাকি থাকতে অল আউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। দক্ষিণ আফ্রিকার চেয়ে ভালো রানরেট থাকার কারণে ফাইনালে উঠে যায় অস্ট্রেলিয়া।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মাত্র ৮ বছরের ক্যারিয়ারে হ্যানসি ক্রনিয়ে অর্জন করেছিলেন অনেক কিছু। পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৬৮টি টেস্ট ম্যাচে ৩৬.৪১ ব্যাটিং গড়ে ৩,৭১৪ রানের পাশাপাশি শিকার করেছেন ৪৩টি টেস্ট উইকেট। আর ১৮৮ টি ওয়ানডে ম্যাচে ৩৮.৬৪ ব্যাটিং গড়ে ৫,৫৬৫ রান করার পাশাপাশি শিকার করেছেন ১১৪ উইকেট।

পরিসংখ্যান দেখে হ্যানসি ক্রনিয়েকে বিচার করা যাবে না, কারণ পরিসংখ্যান যা বলে তার চেয়ে কয়েকগুণ ভালো ক্রিকেটার ছিলেন তিনি। আধুনিক যুগের ব্রাডম্যান শচীন টেন্ডুলকার গার্ডিয়ানকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারে সবচেয়ে বেশি ভুগেছেন হ্যানসি ক্রনিয়ের বলে। টেন্ডুলকারের ভাষ্যমতে, “হ্যান্সির বোলিং মোকাবেলা করা ছিল বেশ কঠিন। ও বোলিংয়ে এলে বুঝতে পারতাম না, কী করব?” ডোনাল্ড, পোলকদের মতো দুর্দান্ত বোলার থাকার পরেও লিটল মাস্টার সবচেয়ে কঠিন বোলার হিসাবে ক্রনিয়ের নামটাই উল্লেখ করেছিলেন। এতেই বোঝা যায়, শুধুমাত্র পরিসংখ্যান দেখে তাকে বিচার করা ঠিক হবে না।

ভালো সময় বোধহয় বেশিদিন স্থায়ী হয় না, ক্রনিয়ের ক্ষেত্রেও তা-ই হলো। সবকিছু ঠিকঠাক ভাবেই চলছিল তার, কিন্তু হঠাৎ করেই ভারতীয় পুলিশ ক্রনিয়ের ১৯৯৬ সালে ম্যাচ পাতানোর সম্পৃক্ততা নিয়ে তথ্য ফাঁস করে।

তৎকালীন ভারতীয় অধিনায়ক আজহারউদ্দিনের মাধ্যমে ভারতীয় জুয়াড়ি মুকেশ গুপ্তার থেকে টাকা নিয়ে ম্যাচ ছাড়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তিনি। যদিও পরে কিং কমিশনের সাথে কনফারেন্সে জানান, টাকা নিয়েছেন ঠিকই কিন্তু পাতানো ম্যাচ খেলেনি তার দল। কিছুদিন আগে আজহারউদ্দিনের জীবনী নিয়ে বানানো মুভিতেও দেখা যায়, আজহারউদ্দিন টাকা নিলেও পাতানো ম্যাচ খেলেননি।

হ্যানসি ক্রনিয়ের সাথে ম্যাচ পাতানোর সাথে অভিযুক্ত আরো তিন আফ্রিকান ক্রিকেটার হলেন হার্শেল গিবস, হেনরি উইলিয়ামস এবং নিকি বোয়ে। হার্শেল গিবস এবং হেনরি উইলিয়ামস জুয়াড়িদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন এই বলে যে গিবস ২০ রানের কম করবেন এবং উইলিয়ামস বোলিংয়ে ৫০ রানের বেশি খরচ করবেন। কিন্তু ঐ ম্যাচে হার্শেল গিবস ৭৪ রান করেন এবং উইলিয়ামস নিজের দ্বিতীয় ওভার করার সময় ইনজুরিতে পড়েন। তবুও তাদেরকে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয় ক্রিকেট থেকে। ক্রনিয়েকে নিষিদ্ধ করা হয় আজীবনের জন্য।

টাকার বিনিময়ে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ক্রিকেটবিশ্বে কম ঘটেনি। কিন্তু জনসম্মুখে যেসব ঘটনা প্রকাশ পেয়েছে সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আশ্চর্যজনক ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক হ্যানসি ক্রনিয়ের বিরুদ্ধে ম্যাচ পাতানোর অভিযোগ প্রমাণিত হবার ঘটনাটি।

কিন্তু হ্যানসি ক্রনিয়ে কে এখনো তার শৈশবের গ্রে স্কুলের বালকরা জাতীয় বীর বলে সম্মান করে। তার ক্রিকেট ক্যারিয়ার হতে শুরু করে মৃত্যুটাও ছিল রহস্যজনক।

ক্রনিয়ের নেতৃত্বে খেলা ক্রিকেটাররাও তার মতিগতি বুঝতেন না। তার অধীনে খেলা মার্ক বাউচার তার জীবনী ‘থ্রু মাই আইস’ বইয়ে ক্রনিয়ে  সম্পর্কে বলেছেন, “ওকে বোঝা কঠিন ছিলো। একদিন হাসছে, অন্যদিন রসিকতা করছে আবার কোনো দিন রেগে আগুন।

রসিকতার ছলে নাকি সতীর্থদের ম্যাচ পাতানোর কথা বলেছিলেন ক্রনিয়ে। মার্ক বাউচার জানান, “একবার ক্রনিয়ে ক্যালিস, ক্লুজনার এবং আমাকে ম্যাচ ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে দুই লাখ ডলার পাওয়া যাবে, এমন প্রস্তাব দেয়। তখন আমরা সবাই ব্যাপারটা রসিকতা মনে করে হেসে উড়িয়ে দেই।

ক্রনিয়েকে যে ম্যাচে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয় ঐ ম্যাচ সম্পর্কে মার্ক বাউচার বলেন, “নাগপুরের ঐ ম্যাচে ক্রনিয়ে আমাকে ঠিক স্ট্যাম্পের পিছনে দাঁড় করিয়ে লেগ স্ট্যাম্পের অনেক বাহিরে বল করছিলেন, যাতে করে বাই চার রান হয়। কিন্তু তার মতো বোলারের লেগ স্ট্যাম্পের এতো বাহিরে বল করা অসম্ভব ছিল। ওর এইরকম অনিশ্চিত মনোভাব দেখে আমার সন্দেহ হত।

মার্ক বাউচার আরও বলেন, “হ্যানসি ক্রনিয়ে  ধরা পড়েছিল, ও নিশ্চয়ই দোষী ছিল। তবে তার ঘটনা থেকে যে শিক্ষা নেয়া দরকার ছিল, তা কিন্ত নেয়া হয়নি। কোনো দেশই ম্যাচ পাতানোর বিষয়টি খুব গুরুত্ব দিয়ে দেখে না। প্রকৃত ব্যবস্থা নেয় না।

কিং কমিশনের সামনে প্রকাশ্যে কান্নার ভিডিও ফুটেজ দেখে বাউচার ও জন্টি রোডস আইসিসির দুর্নীতিবিরোধী কমিটিকে প্রশ্ন করেছিলেন, গত ১০ বছরে আপনারা কি শুধু একজন ক্রনিয়েকেই দোষী ভাবছেন? বাউচারের মতে, “একা ক্রনিয়ে দোষী ছিলেন, এটা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য ছিল না।

ব্যক্তি হ্যানসি ক্রনিয়ে বরাবরই রহস্যজনক ছিলেন, ভারতে ম্যাচ ম্যাচ পাতানোর কীর্তি ফাঁস হওয়ার পরে ডারবানের এক হোটেলে মিটিং ডেকে ক্রনিয়ে সতীর্থদের বলেছিলেন, তিনি একেবারেই নির্দোষ, তাকে অন্যায়ভাবে ফাঁসানো হচ্ছে। পরদিনই টিম ম্যানেজার গুলাম রাজা মারফত টিমের বাকিরা জানতে পারেন, দক্ষিণ আফ্রিকা বোর্ডের কাছে নিজের দোষ স্বীকার করে নিয়েছেন ক্রনিয়ে ।

বিখ্যাত ক্রিকেটারদের ম্যাচ পাতানোর ঘটনা প্রমাণিত হবার পর অন্যদের যেভাবে তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের শিকার হতে হয়েছে, ক্রনিয়ের ক্ষেত্রে ততটা ঘটেনি। রহস্যজনক এবং মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণেই ক্রিকেটবিশ্বে সবার কাছ থেকে আলাদা একটা সহানুভূতি পেয়েছিলেন তৎকালীন বিশ্বসেরা অধিনায়কদের একজন ক্রনিয়ে ।

জীবনটাকে নতুন করে গড়ে নেওয়ার জন্য ‘বেল ইকুইপমেন্ট’ কোম্পানির হিসাবরক্ষণ বিভাগে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। চাকরির একবছর তখনো পূর্ণ হয়নি, সাপ্তাহিক ছুটি স্ত্রীর সাথে কাটাবেন বলে চেপে বসেন একটা ছোটো কার্গো প্লেনের একমাত্র যাত্রী হিসাবে। প্লেনে ক্রনিয়ে ছাড়াও আরো দু’জন পাইলট ছিলেন।  ক্রিকেট ছেড়ে তার নতুন জীবন শুরু করার আগেই শেষ হয়ে যায়, বিমানটি পাওয়া যায় বিধ্বস্ত অবস্থায়। ২০০২ সালের পহেলা জুন বিমান দুর্ঘটনায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন ক্রনিয়ে।

জুয়াড়িদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে জুয়াড়িদের কথামত না খেলা এবং সেই সময়কার দক্ষিণ আফ্রিকার কোচ বব উলমার ২০০৭ সালে হোটেল রুমে মারা যাওয়ার পর অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে, হ্যানসি ক্রনিয়ের মৃত্যুর কারণ কি শুধুই দুর্ঘটনা নাকি অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে আছে এর পেছনে? আজও সমাধান হয়নি সে প্রশ্নের। তথ্যসূত্রঃroar.media