আওয়ামী লীগ কারো দ্বারস্থ হয় না, কারো অযাচিত হস্তক্ষেপও মেনে নিবে না

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে রাজনীতি করা ব্যক্তিত্ব, বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদের কন্যা ড. শাম্মী আহমেদ । আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন, সাম্প্রতিক নানা ইস্যু নিয়ে পলিটিক্স নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের মুখোমুখি হয়েছেন। কথা বলেছেন আমাদের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলকের সাথে।

পলিটিক্সনিউজঃ আওয়ামীলীগের আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন । কতটা চ্যালেঞ্জিং?

ড.শাম্মী আহমেদঃ ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন শেখ হাসিনার সাথে কাজ করবো। আমি মনে করি আমি অনেক ভাগ্যবান। নেত্রী পাশে থাকলে আমাদের জন্য কোনো কিছুই চ্যালেঞ্জিং না ।

পলিটিক্সনিউজঃ নির্বাচনের আগে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের দৌড়-ঝাপ দেখা যায় । তাদের কাছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ধর্ণা দেন। বিষয়টা কিভাবে দেখেন?

ড.শাম্মী আহমেদঃ আমরা যেটা দেখছি যে, আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল বিদেশীদের দ্বারস্থ হচ্ছে। কিন্তু আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কী হবে, কে ক্ষমতায় আসবে, কে ক্ষমতায় যাবে তা তো একমাত্র নির্ধারণ করবে এদেশের জনগণ। আর তা হবে ভোটের মাধ্যমে। এখানে বিদেশীরা হস্তক্ষেপ করে কিছু করতে পারবে না। এক সময় হয়তো কিছু অসাধু রাজনীতিকের কারণে বিদেশীদের মাধ্যমে নানা ইন্ধন উস্কানি দেয়ার চেষ্টা হতো। কিন্তু আজকের ডিজিটাল যুগে মানুষ অনেক সচেতন। এখানে দূতাবসের কাজ আমাদের বিষয়ে নাক না গলানো, আমাদের আভ্যন্তরিন বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করা। আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অনেক কূটনৈতিক সাফল্য রয়েছে। আওয়ামী লীগ কারো দ্বারস্থ হয় না এবং কারো অযাচিত হস্তক্ষেপও মেনে নিবে না।

পলিটিক্সনিউজঃ খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তার মুক্তির জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে কোন প্রতিক্রিয়া বা চাপ এসেছে কিনা?

ড.শাম্মী আহমেদঃ আমার জানামতে আমরা কোনো প্রতিক্রিয়া পাইনি। খালেদা জিয়া একটি বড় দলের নেত্রী। তার প্রতি সম্মান রেখেই বলছি, উনি কিন্তু রাজনৈতিক কারণে কারাবন্দি হননি। এখানে আওয়ামী লীগের মতো রাজনৈতিক দল কী করতে পারবে? এখানে আওয়ামী লীগের কিছুই করার নেই। এ ক্ষেত্রে বহির্বিশ্বের কাছ থেকেও আমরা কোনো চাপ পাইনি।। আর কেউ প্রতিক্রিয়া দেয়ারও কথা না। এ দেশে আইনের শাসন আছে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত তা সবাই বুঝে। উনি দুর্নীতি করেছেন, সাজা পেয়েছেন। আর কারাগারে রাষ্ট্র কর্তৃক যা সুযোগ সুবিধা পাওয়ার উনি তা পাচ্ছেন।

পলিটিক্সনিউজঃ বিভিন্ন লবিস্ট গ্রুপ আন্তর্জাতিকভাবে সরকার বিরোধী প্রচারণায় কাজ করছে বলে শোনা যায় । বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামী মানবতা বিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে লবিস্ট নিয়োগ করেছিল বলে সরকার সংশ্লিষ্ট মহল থেকে নানা সময় অভিযোগ করা হয়েছে । একে মোকাবেলা করার জন্য আওয়ামীলীগ কিভাবে কাজ করছে?

ড.শাম্মী আহমেদঃ দেখুন জামায়াতে ইসলামী লবিষ্ট নিয়োগ করেছে এটা অনেকেই জানে। যুদ্বাপরাধীদের যখন বিচার হচ্ছে তখনও তারা লবিষ্ট নিয়োগ করে অনেক কিছু করতে চেয়েছিলো। আমি বলবো আপনি যদি সত্যে ও সঠিক পথে থাকেন তাহলে কোনো চাপ প্রয়োগই চাপ নয়। আমাদের সরকার অন্যায় কিছু করলে অবশ্যই সচেতন মহল থেকে প্রেশার আসতো। একটি ঘটনা বলি, আমি কিছুদিন আগে জেনেভা গিয়েছিলাম জাতিসংঘ আয়োজিত একটি সেমিনারে অংশ গ্রহণ করতে। তখন জার্মানির কিছু সাংবাদিক এ ব্যাপারে আমাকে প্রশ্ন করেছিলো। তখন আমিই তাদের উলটো প্রশ্ন করেছিলাম, আপনারা যদি এত বছর পর হিটলারের বিচার করতে পারেন তাহলে আমরা কেন মানবতা বিরোধীদের বিচার করতে পারবো না।

যখন কোনো বাধা আসবে তখন সততার সাথে মোকাবেলা করতে হবে । আর আমাদের কোনো কিছু লুকানোর নেই। জামায়াতে ইসলামী স্বাধীনতা বিরোধী ছিলো এটাতো সবাই জানে। তাদের অবৈধ টাকা আছে, লবিষ্ট নিয়োগ করছে। আমি দৃঢতার সাথে বলবো আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি জনগণ। এই জনগণ যতক্ষণ সাথে থাকবে ততক্ষণ কেউ ষড়যন্ত্র করে জয়ী হতে পারবে না । অতীতেও পারেনি ভবিষ্যতেও পারবে না ।

পলিটিক্সনিউজঃ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন যুক্তরাজ্য , যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম দেখা যায়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশে কার্যক্রম নেই । কেন?

ড.শাম্মী আহমেদঃ দক্ষিণ এশিয়ার কোন দেশে কিন্তু বাংলাদেশের কেউ স্থায়ীভাবে বসবাস করেন না । ভারত গেলে কেউ চিকিৎসা কিংবা ভ্রমণে যান। যারা কোথাও স্থায়ীভাবে বসবাস করেন তারা ওখানে রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরী করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে আমাদের স্থায়ী বসবাস করার কোনো লোক নেই বলেই সেখানে আওয়ামী লীগ বলেন, কিংবা অন্যান্য দল বলেন, কার্যক্রম গড়ে উঠেনি। হওয়ার কোনো প্রয়োজন আছে বলেও আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি না।

পলিটিক্সনিউজঃ আপনার পেশাজীবন সম্পর্কে জানতে চাই।

ড.শাম্মী আহমেদঃ ১৯৯৫ এর শেষ দিকে রেড ক্রিসেন্ট এর মাধ্যমে কাজ শুরু করি। এরপর ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটিতে কাজ করি। দেশের বাহিরে মাস্টার্স ও পিএইচডি লাভ করি। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক রেডক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের উপদেষ্টা ছিলাম।

পলিটিক্সনিউজঃ আপনার বাবা মহিউদ্দিন আহমেদ তো বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন । তার সম্পর্কে জানতে চাই ।

ড.শাম্মী আহমেদঃ আমার বাবা অত্যন্ত সহজ সরল একজন মানুষ ছিলেন। সৎ একজন মানুষ। তার মতো সৎ রাজনীতিবিদ খুবই কম আছে । ঐ সময়ে যারা বঙ্গবন্ধুর সক্রিয় কর্মী ছিলেন বাবা ছিলেন তাদের একজন। আমার বাবার কাছে আল্লাহর পরে যদি কেউ থেকে থাকে তা ছিলো একমাত্র বঙ্গবন্ধু। বাবার কাছে বঙ্গবন্ধুর অনেক গল্প শুনেছি। ১৬ কোটি মানুষের নেত্রী শেখ হাসিনার মাঝে আমি বঙ্গবন্ধুকে খুঁজে পাই।

পলিটিক্সনিউজঃ জনগনের জন্য কাজ করতে জনপ্রতিনিধি হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ড.শাম্মী আহমেদঃ রাজনীতি যারা করেন তারা আশা রেখেই রাজনীতি করেন, একদিন তারা জনপ্রতিনিধি হবেন। আমি মনে করে জনপ্রতিনিধি হলে কাজ করার সুযোগটা বেশী থাকে। তখন আপনি সরাসরি সরকারের সাথে সম্পৃক্ত থাকেন। এলাকার সব সমস্যা তুলে ধরতে পারেন। মন্ত্রীদেরও বলার সুযোগ থাকে।
অবশ্য জনপ্রতিনিধি হলে শুধু এরিয়া কেন্দ্রিক আর পলিটিক্যাল লিডার হলে পুরো দেশ নিয়ে ভাবতে হয়, কাজ করতে হয়। আমি মনে করি জনপ্রতিনিধি না হয়েও কাজ করার সুযোগ আছে যদি আপনি কাজ করতে চান।

পলিটিক্সনিউজঃ ধন্যবাদ আমাদের সময় দেয়ার জন্য।
ড.শাম্মী আহমেদঃ আপনাকেও ধন্যবাদ ।