অযোগ্যকে নেতা বানাবেন দুঃসময় হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না

ছাত্রলীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আপনাদের পূর্বসূরিদের কথা ভাবুন। নেতা বানিয়ে যাবেন, কিন্তু আপনি যখন বিদায় নেবেন, নতুনরা আপনাকে কি চোখে দেখবে? সেটা একবার ভেবে দেখুন। চিরদিন কারও পদ থাকে না। টাকা পয়সার কর্মী থাকবে না, আদর্শের কর্মীরা থাকবে। জবরদস্তি করে অযোগ্যকে নেতা বানাবেন, দুঃসময় এলে হাজার পাওয়ারের বাতি জ্বালিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্রের (টিএসসি) মিলনায়তনে বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বার্ষিক সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

সম্প্রতি কোটা বিরোধী আন্দোলনে ছাত্রলীগ কী ভূমিকা রেখেছে সে বিষয়ে ইঙ্গিত দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, সম্মেলনটি এই সময় আসলে অনেক চড়াই-উতরাই-এর মধ্য দিয়ে করতে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আমাদের দেশের বিদ্বেষপ্রসূত সাম্প্রদায়িক রাজনীতির অনুপ্রবেশ, ভিসির বাড়িতে বর্বরোচিত হামলার মধ্য দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে একটা কলঙ্কজনক অধ্যায় সংযোজিত হয়েছে।তিনি আরও বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন সাধারণ ছাত্র-ছাত্রীদের স্বতঃস্ফূর্ত আবেগকে আমি অনার করি। কিন্তু এই আবেগকে কেন্দ্র করে এদেশের রাজনীতির বিষফোঁড়া একটি দল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টা চালিয়েছে।

এই অশুভ শক্তির তৎপরতা এখনো অব্যাহত দাবি করে কোটা সংষ্কার আন্দোলনে নিজেদের রাজনৈতিক দূরভিসন্ধি বাস্তবায়নে ব্যর্থ হয়ে তারা এখন নতুন নতুন ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে বলেও দাবি করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা। সরকার ও আওয়ামী লীগ নিয়ে বিএনপির নেতাদের অব্যাহত মিথ্যাচারের ব্যাপারে বলেন, এরা হচ্ছে কনসামেট লায়ারস (পরিপূর্ণ মিথ্যাবাদী)। এই কনসামেট লায়াদের কথার জবাব দিয়ে এদেরকে অতটা লাইমটাইটে আনতে চাই না। এদের ভাষাই বলে দেয় এরা কোন ধরনের রাজনীতি করে। এদের ভাষাই বলে দেয় ভিসির বাড়িতে নগ্ন হামলার পেছনে তাদের যোগসাজেশ আছে, সেটা প্রমাণের অপেক্ষা রাখে না।

অনুপ্রবেশকারী পরগাছা যেন পার্টির নেতৃত্বে আর না আসে সেই দাবিও উত্থাপন করেন কাদের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, প্যারাসাইটদের (পরগাছা) জন্য ছাত্রলীগ কোনো দিনও কোনো সুযোগ দেবে না। সোহাগ-জাকির তারা এতোদিন ছাত্রলীগ চালিয়েছে। আমি তাদেরবে বলবো, ভাল কিছু করে যাও। ভাল নেতৃত্ব দিয়ে যাও তোমাদেরকে সবাই মনে রাখবে।

ছাত্রলীগের তরুণরা আগামী নির্বাচনে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার হিসেবে বাংলাদেশের প্রথমবারের মতো হওয়া ভোটারদের সংগঠিত করবে এবং আগামী দিনে সংগঠনে নেতৃত্বের ক্যারিশমা দরকার, যোগ্যতা দরকার, মেধা দরকার ও সাহস দরকার বলে জানান ওবায়দুল কাদের।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক কালের ঘটনার পাশাপাশি দুর্ঘটনাও ঘটেছে স্বীকার করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ছাত্র সংগঠন। তোমাদের ভূমিকাটা কি ছিল? সেটা তোমরা বিশ্লেষণ করে মূল্যায়ন করবে। আমি কিছু মন্তব্য করতে চাই না। মূল্যায়নের ভার তোমাদের উপর ছেড়ে দিলাম। তোমরাই তোমাদের কাজের, তোমাদের অতীতের মূল্যায়ন ও বিশ্লেষণ করবে। আত্মবিশ্লেষণ ও আত্ম সমালোচনা করবে। তার মধ্যে অতীতের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে নির্ভুল পথযাত্রা নিশ্চিত করবে।

সামনে কঠিন দায়িত্ব। সামনে অনেক ঝড়। তুফান অনেক ভারী। আজকে সকাল বেলার তুফানের চেয়েও ভারী বলে উল্লেখ করেন কাদের।আওয়ামী লীগ প্রধান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার উপর আস্থা রেখে সংগঠনের নেতা-কর্মীদের সামনের দিনগুলোর কঠিন যাত্রায় হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে নিজেদের অর্পিত দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান।

ঢাবি শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনের ব্যাপারে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিকেলে সাবজেক্ট কমিটি বসবে। নিয়ম অনুযায়ী সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম প্রস্তাব হবে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সাবজেক্ট কমিটির মাধ্যমে নামগুলো আসুক, এটাই আমরা চাই। ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলন ১২ (মে) শেষ হবে। ১১ তারিখ বিকেলে আমাদের দলের নেত্রী সম্মেলনের উদ্ধোধন করবেন। আশা করছি, এর মধ্যে ছাত্রলীগ নতুন কমিটির পাওয়ার জন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করবে।

সন্মেলনের উদ্ধোধন ঘোষণা করেন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ। সংগঠনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার বিদায়ী সভাপতি আবিদ আল হাসানের সভাপতিত্বে এবং বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন প্রিন্সের পরিচালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে আওয়ামী লীগের যুগ্মসাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম বক্তব্য রাখেন। এ ছাড়া প্রধানবক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন।