পোকামাকড়ের মতো বিচারবহির্ভূত মানুষ হত্যার হিড়িক চলছে

সারাদেশে বন্দুক যুদ্ধের নামে মারণযজ্ঞ চলছে অভিযোগ করেছে বিএনপি। দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘গত তিন দিনে চার জেলায় বিচারবহির্ভূত বন্দুক যুদ্ধে নিহত হয়েছে ৭ জন। এই মাসে যেন পোকামাকড়ের মতো বিচারবহির্ভূত মানুষ হত্যার হিড়িক চলছে। গতরাতেও বরিশালে সাদা পোষাকের পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ নামে দু’জন নিহত হয়েছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো বারবার উদ্বেগ জানালেও তাতে সরকারের টনক নড়ছে না।

রবিবার (২০ মে) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, গত কয়েক দিন আগে জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা বাংলাদেশের গুম-খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে এবং অবিলম্বে তা বন্ধের দাবি জানিয়ে সেসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছে। কিন্তু অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, বর্তমানে দেশে যেন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যার নামে কিলিং প্র্যাকটিস করছে। সরকারের বিচারবহির্ভূত হত্যার মূল উদ্দেশ্য দেশকে স্থায়ী দুঃশাসনের বজ্র আঁটুনিতে বেঁধে ফেলা, আর সেজন্য জনগণকে আতঙ্কিত করে রাখা। তারা যেন যেন ভোগ-লালসায় অস্থির থাকা এই অবৈধ সরকারের আগামী একতরফা নির্বাচনের নীল নকশার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহসী না হয়। আর এজন্য সরকার বিনা বিচারে হত্যার দণ্ডাজ্ঞা ধরিয়ে দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। আমি অবিলম্বে বন্দুকযুদ্ধের নামে বিচার বহির্ভূতভাবে মানুষ হত্যা বন্ধের জোর দাবি জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এই সরকারের আমলে সংঘটিত সকল বিচারবহির্ভূত হত্যার তদন্ত দাবি করছি।

বিএনপি আসুক না আসুক, যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে, কে আসলো আর না আসলো তাতে কিছু আসে যায় না, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মতো বিএনপি নির্বাচনে না আসলে আমাদের কিছু করার নেই। তাছাড়া খালেদা জিয়ার সঙ্গে নির্বাচনের সম্পর্ক কি?’ গতকাল দেয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আমি বলতে চাই-বিশাল সম্পর্ক আছে। দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রীকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখা গভীর ষড়যন্ত্র। এই বক্তব্য জবরদস্তিমূলক একতরফা নির্বাচনেরই ইঙ্গিতবহ। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া যে ক’টি আসনে দাঁড়িয়েছেন তিনি কখনই সেই নির্বাচনে পরাজিত হননি। কিন্তু বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পরাজিত হয়েছেন। সেজন্য বেগম জিয়ার জনপ্রিয়তায় প্রধানমন্ত্রীর এতো অসুয়া, এতো বিদ্বেষ। আর এজন্যই বেগম খালেদা জিয়াকে নির্বাচন থেকে দূরে সরাতে এতো ষড়যন্ত্র। আমি ওবায়দুল কাদের সাহেবের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, বিএনপি চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া মানেই জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক, বেগম খালেদা জিয়া মানেই বিএনপি, বেগম খালেদা জিয়া মানেই গণতন্ত্র। বেগম খালেদা জিয়া জনগণের সাথে কখনো প্রতারণা করেননি। জনগণের প্রতি যখন যে ওয়াদা করেছেন সেটি পালন করেছেন নির্দিধায়। প্রদত্ত অঙ্গীকারের কখনো বরখেলাপ করেননি, কিন্তু পদে পদে জনগণের সঙ্গে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন স্বৈরাচারের শ্রেষ্ঠতের শিরোপা পাওয়া বর্তমান প্রধানমন্ত্রী।

ওবায়দুল কাদেরের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনি কী ভুলে গেছেন ৯৬ এর নির্বাচনের কথা, ১০ টাকা কেজি চালের কথা, ঘরে ঘরে চাকরির দেয়ার কথা? আমরা কাউকে মাইনাস করতে চাই না, কিন্তু যারা অন্যকে মাইনাস করতে চায় তারা প্রাকৃতিক নিয়মে নিজেরাই মাইনাস হয়ে যায়। সুতরাং আইন আদালতসহ সবকিছু কব্জা করে বেগম খালেদা জিয়াকে জোর করে সাজা দিয়ে আপনাদের ক্ষমতার ঝাড়বাতির রোসনাই আর বেশী দিন থাকবে না। এবারে আপনাদের পতনের বিষন্ন রাগিনী বাজতে শুরু করেছে।

তিনি আরও বলেন, এই পবিত্র মাহে রমজানেও দেশজুড়ে লোডশেডিংয়ের পাশাপাশি চলছে গ্যাস ও পানির তীব্র সংকট। গ্যাস সংকটে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চুলা জ্বলছে না, ফলে সেহেরী ও ইফতারী তৈরী করতে মানুষ হিমশিম খাচ্ছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে পানি সংকট। আর এ কারণে মানুষ রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ওজু কিংবা গোসলের পানিও পাচ্ছে না। বিভিন্ন এলাকায় পানির জন্য হাহাকার চলছে, হাঁড়ি পাতিল নিয়ে মানুষ রাস্তায় বিক্ষোভ করছে। গ্রামে গ্রামে চলছে ভয়াবহ বিদ্যুৎ বিপর্যয়। সেখানে এখন বিদ্যূৎ যায় না, মাঝে মধ্যে আসে। এমনকি ইফতার, সেহেরী ও তারাবীর নামাজের সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ দেয়ার সরকারি ঘোষণা জনগণের সঙ্গে খাঁটি প্রহসন। প্রধানমন্ত্রীর মুখে তুবড়ি ছোটানো উন্নয়ন সড়ক-মহাসড়কের খানাখন্দে লুটোপুটি খাচ্ছে। আওয়ামী সরকার উন্নয়ন প্রতিবন্ধী। এখন এদেশে প্রকৃত উন্নয়ন দুরে থাকা মানুষের ন্যুনতম নাগরিক সেবাটুকুও ধ্বংস হয়ে গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ-দপ্তর সম্পাদক মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।