গাজীপুর সিটি নির্বাচন নিয়ে গভীর নীলনকশার বিভৎস আভাস ফুঁটে উঠছে

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নিয়ে ক্ষমতাসীন মহলের এক গভীর নীলনকশার বিভৎস আভাস ফুঁটে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। সদ্য শেষ হওয়া খুলনা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য খুলনার ভোটারদের সাথে ‘শ্রেষ্ঠ তামাশা’বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

সোমবার সকাল সাড়ে ১১টায় রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন তিনি।খুলনা সিটি নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের ফলেই সিটি করপোরেশন নির্বাচনে খুলনার মানুষের সমর্থন মিলেছে। এই নির্বাচন নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছিলেন তাদের দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এমন সুষ্ঠু নির্বাচন দেশে কবে হয়েছে?প্রধানমন্ত্রীর এসব বক্তব্যের কঠোর সমালোচনা করেন রিজভী বলেন, ভোটারবিহীন প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য, খুলনার ভোটারদের সঙ্গে শ্রেষ্ঠ তামাশা। অবৈধ ক্ষমতার দৌরাত্মে ভোটারদের অধিকার বঞ্চিত করে এখন তাদেরকে প্রধানমন্ত্রী তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করছেন।

তিনি বলেন, ভোটচুরির নতুন মডেলের এই নির্বাচনে খুলনা সিটির অর্ধেকেরও কম ভোটার ভোট কেন্দ্রে যেতে পারেনি। যারাও গিয়েছেন তারা ভোট দিতে পারেননি। এমন এক নির্বাচন হয়েছে যে নির্বাচনের পর লজ্জায় আজও নির্বাচন কমিশন কোন আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া দিতে পারেনি।

রিজভী বলেন, যে নির্বাচনে ভোট ডাকাতি ও কারচুপির জন্য বাংলাদেশসহ বিশ্ব মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড় বইছে। যে নির্বাচনে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে জাল ভোট প্রদানসহ নানা অনিয়মের তদন্ত দাবি করছে জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নয়ন সহযোগি প্রতিষ্ঠানগুলো। যে নির্বাচনে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্র বাবার সঙ্গে ভোট দিতে পারে, মরা মানুষ ভোট দিতে পারে, সন্ত্রাসীরা কেন্দ্র দখল করে লাইন ধরে সিল মারতে পারে সে নির্বাচন নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় এটাই প্রমাণিত হলো যে, ভোট ডাকাতির হুকুমদাতা সরকারের শীর্ষ নেতারা। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে আগামী নির্বাচনও হবে খুলনা মডেলে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য প্রমাণ করে তাঁর অধীনে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়া হবে বিরোধী দলগুলোর জন্য আত্মঘাতী।

এমপি-মন্ত্রীরা নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করে না প্রধান মন্ত্রীর দেয়া এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করে তিনি বলেন,’এ বক্তব্য যে কতটা নির্লজ্জ মিথ্যাচার তার আরও একটি উদাহারণ হলো গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে গতকাল গাজীপুরের টঙ্গিতে এক স্থানীয় এমপির বাসায় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি’র সভাপতিত্বে এমপি-মন্ত্রীদের এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড.আব্দুর রাজ্জাক এমপি, কর্ণেল ফারুক খান এমপি, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ (এমপি), ডা. দীপু মনি (এমপি), জাহাঙ্গীর কবির নানক (এমপি), মহিলা ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকী (এমপি), কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধূরী এমপিসহ মন্ত্রী এমপিরা। যা নির্বাচনী আচরণবিধির সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

তিনি অভিযোগ করে আরও বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজিব আহসান ও ছাত্রদল উত্তরের সভাপতি মিজানুর রহমান রাজ আবারও জিজ্ঞাসাবাদের নামে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। এর আগেও অনেকবার তাদেরকে রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। তরুণ সমাজকে ভীত করার জন্যই রাজিব ও রাজের উপর এ নির্যাতন। আমি অবিলম্বে তাদের রিমান্ড প্রত্যাহার করে মুক্তির জোর দাবি জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন,যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন,সহ-দপ্তর সম্পাদক সম্পাদক মুনির হোসেন,তাইফুল ইসলাম টিপু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।