মৃত্যুর কাছে হার মানলো মুক্তামনি

মৃত্যুর কাছে হার মানলো মুক্তামনি

অবশেষে মৃত্যুর কাছে হার মাননো সাতক্ষীরার শিশু মুক্তামনি।সকাল আটটার দিকে সাতক্ষীরার কামারবায়সা এলাকায় নিজ বাড়িতে মারা গেছে ১১ বছরের শিশুটি। মুক্তামনি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশদাহ ইউনিয়নের দক্ষিণ কামারবায়সা গ্রামের ইব্রাহিম হোসেনের মেয়ে। তিনি বলেন, কাল থেকে খুব অসুস্থ ছিল মুক্তামনি। সারা শরীরে যন্ত্রণা ছড়িয়ে পড়ে। আজ ভোরে একবার বমি করে। এরপর পানি খেতে চাইল। পানি আনতে আনতে সব শেষ।

মুক্তামনির মা আসমা খাতুন জানান, সাতক্ষীরা সদর উপজেলার কামারবায়সা গ্রামের নিজবাড়িতে মুক্তামনি মারা যায়। এ সময় তার মা-বাবা ছাড়াও বোন হীরামনি ও ছোট ভাই মিকাঈল উপস্থিত ছিল। উপস্থিত ছিল তার দাদি ও দু’জন প্রতিবেশী। মুক্তামনির পোষা শালিক পাখিটাও এ দুঃসংবাদে ছটফট করতে থাকে। যে পাখিটি মুক্তামনির সাথেই কথা বলতো।সবাইকে ডাকতো।

প্রাণপ্রিয় মেয়ের মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না মুক্তামনির বাবা ইব্রাহিম হোসেন ও তার মা আসমা খাতুন।কান্নায় ভেঙে পড়েছেন আত্মীয়-স্বজনসহ প্রতিবেশীরা। তাদের আর্তনাদে গ্রামের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছে।

এখন আর কিছুই চাওয়ার নেই উল্লেখ করে মুক্তামনির শোকার্ত বাবা ইব্রাহিম হোসেন বলেন, ওর জন্য দেশের প্রধানমন্ত্রী পর্যন্ত চেষ্টা করেছেন।এমন কোনো কিছু নেই যা সরকার করেনি। আমি সবার প্রতি কৃতজ্ঞ। এখন মুক্তামনির মাগফিরাত কামনা ছাড়া আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই।জন্মের দেড় বছর পর শিশু মুক্তামনির দেহে একটি ছোট মার্বেলের মতো গোটা দেখা দেয়। এরপর থেকে সেটি বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে নিয়েও তার কোনো চিকিৎসা হয়নি।

প্রসঙ্গত, বিরল রোগে আক্রান্ত হওয়ার খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে প্রধানমন্ত্রী মুক্তামনির চিকিৎসার সকল দায়িত্ব গ্রহণ করেন। গত বছরের ১২ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয় তাকে। সেখানে মুক্তামনির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়ে নেতৃত্ব দেন প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা. সামন্ত লাল সেন। ডা. সেন মুক্তামনির হাতে, পায়েসহ সমগ্র শরীরে অস্ত্রোপাচার করেন। রোগ নির্ণয় করে প্রকাশ করেন তার রক্তনালীতে টিউমার রয়েছে। ফলে তার পচা ঘায়ে আক্রান্ত মোটা হাতটি কেটে ফেলতে হবে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর অনুরোধে হাতকাটার সিদ্ধান্তটি বাতিল করে প্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচার শেষে ২৪ ডিসেম্বর বাড়িতে ফেরত দেয়া হয়।বাড়িতে কিছুদিন আগে মুক্তামনির অবস্থার অবনতি হয়। হাতের ক্ষতস্থানে আবারো পচনের লক্ষণ দেখা যায়, সেই ছিলো সঙ্গে জ্বর।