ডিজিটাল বাংলাদেশের একজন কারিগর হতে চাই: অসীম কুমার উকিল

আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক  সম্পাদক অসীম কুমার উকিল
আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক  সম্পাদক অসীম কুমার উকিল

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংস্কৃতিক  সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার সন্তান অসীম কুমার উকিল। তিনি  ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়  থেকে  ১৯৮০  সালে  পরিসংখ্যানে  বি এস সি (অনার্স) এবং ১৯৮১  সালে  এম এস সি ডিগ্রী  লাভ  করেন । অসীম  কুমার উকিল  ১৯৭৮-১৯৮০  জগন্নাথ  হল  শাখার  প্রচার  সম্পাদক, ১৯৮০-১৯৮১ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়  কেন্দ্রীয়  ছাত্র/ছাত্রী  সংসদ  (ডাকসু) এর  নির্বাচিত  সদস্য, ১৯৮১-১৯৮৩  ছাত্রলীগ  জগন্নাথ  হল  শাখার সভাপতি, ১৯৮৩-১৯৮৬ ঢাকা  বিশ্ববিদ্যালয়  শাখার  যুগ্ম  আহবায়ক , ১৯৮৪-১৯৮৬  কেন্দ্রীয়  ছাত্রলীগের  সহ-প্রচার সম্পাদক, ১৯৮৬-১৯৮৯ প্রচার  সম্পাদক  এবং  ১৯৮৯-১৯৯৩  ছাত্রলীগের  কেন্দ্রীয়  সাধারণ  সম্পাদকের  দায়িত্ব  পালন করেন। ১৯৯৩-২০০২ সালে  বাংলাদেশ   আওয়ামীলীগের  কেন্দ্রীয়  কমিটির  সহ-সম্পাদক, ২০০২-২০০৯  ও  ২০০৯-২০১২ এবং  ২০১২-২০১৬  সালে  ধারাবাহিকভাবে  তিনবার  উপ প্রচার  সম্পাদক  হিসেবে  দায়িত্ব  পান । বর্তমানে  তিনি বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের  সাংস্কৃতিক  সম্পাদকের  দায়িত্ব  পালন  করছেন। সমসাময়িক  রাজনীতি, সাংস্কৃতিক  অঙ্গনে  কার্যক্রম, আগামী নির্বাচন  নিয়ে  তিনি  কথা  বলেছেন  পলিটিক্সনিউজের  নির্বাহী  সম্পাদকের  সাথে।

পলিটিক্সনিউজঃ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। এই দায়িত্বে থেকে কি কাজ করছেন?

অসীম কুমার উকিলঃ আমার দেশের অগ্রগতি, উন্নয়ন ও গণতন্ত্রের কাঠামোগুলো শক্তিশালী করার মূল অন্তরায় হচ্ছে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ।  জঙ্গি শাসন, স্বৈরশাসন সবকিছু সমূলে উৎপাটন করার সবচেয়ে বড় অস্ত্র হচ্ছে সংস্কৃতি। আমি সেই জায়গাতেই কাজ করছি। কাজের পরিধি অনেক বড়। আমি আমার কাজ দুই ভাগ করে নিয়েছি।

প্রথমত জেলা উপজেলা সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল আবৃত্ত হয় শিল্পকলা একাডেমীকে ঘিরে। শিল্পকলা একাডেমী গুলো সেভাবে সচল নয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমী এবং উপজেলা শিল্পকলা একাডেমী যদি আমি সচল করতে পারি তাহলে প্রকৃত অর্থে এটা একটা বড় জাগরণ তৈরি করবে, এই জাগরণ কুপমন্ডুকতা মুক্ত করবে।

দ্বিতীয়ত বাংলার যে হাজার বছরের ইতিহাস ঐতিহ্য সংস্কৃতি আছে, তা নিয়ে গবেষণা করা , গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরি করে সবাইকে নিয়ে সমন্বিত ভাবে কিভাবে উন্নতি করা যায় সে কাজগুলো করছি।

পলিটিক্সনিউজঃ আগামী নির্বাচনের জন্য আন্তর্জাতিকভাবে এবং দেশের অভ্যন্তরীণ দিক থেকে আওয়ামীলীগের জন্য কি চ্যালেঞ্জ আছে বলে মনে করেন?

অসীম কুমার উকিলঃ আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সম্পর্ক গুলো অবশ্যই একটা চ্যালেঞ্জ, এর চাইতেও বড় চ্যালেঞ্জ আমার দলের অভ্যন্তরীণ সাংগঠনিক কাঠামো।  আমরা অত্যন্ত সতর্কতার সাথে বিষয়গুলোকে হ্যান্ডেল করছি এবং বিষয়গুলোতে আমাদের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি আছে বলে আমার মনে হয়।

স্বাধীনতা সংগ্রামের ভারতের ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। স্বাধীন বাংলাদেশ দাড়িয়েও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনে ভারতের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। দিনে দিনে অন্যান্য জায়গাগুলোর আন্তর্জাতিক প্রভাব বলয় বৃদ্ধি পেয়েছে ।  চীনের যেমনে আছে, রাশিয়ার আছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য সবারই আছে।  আমাদের কূটনৈতিক সফলতা এক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কৃতিত্বের দাবি রাখে।

আমার কাছে এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মনে হয় আমাদের দলের দলীয় সংহতি। ক্ষমতায় অনেক দিন থাকলে দলের মধ্যে গা-ছাড়া ভাব থাকে, প্রত্যাশা ও প্রাপ্তির মধ্যে ফারাক থাকে। যার ফলে সংকট তৈরি হয়। সেক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করছি দলীয় সংহতি সুসংহত করতে। দলীয় শৃঙ্খলা, দলীয় সংহতি বলতে প্রার্থী বাছাই একটা বড় বিষয়।  এটাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ ।

পলিটিক্সনিউজঃ আওয়ামীলীগের প্রতিনিধি দলের সর্বশেষ চীন সফরে আপনি ছিলেন। রোহিঙ্গাদের বিষয়ে তাদের মনোভাব কেমন দেখেছেন?

অসীম কুমার উকিলঃ বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাথে চীনের সম্পর্ক কখনোই মধুর ছিল না। গত ১০ বছরের সম্পর্ক উন্নয়ন হয়েছে, অগ্রগতি হয়েছে এবং এগিয়ে যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ এবং কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়না (সিপিসি)র মধ্যে সম্পর্ক গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। আমাদের এবারের যাওয়াটা রোহিঙ্গা বিষয় নিয়ে ছিলনা তবে তারা রোহিঙ্গা ইস্যু টা সহানুভূতির সাথে বিবেচনা করবে বলে আমাদেরকে আশ্বস্ত করেছে। শরণার্থীরা আমাদের দেশের অর্থনীতির জন্য বোঝা, দেশের অর্থনীতিতে বিরাট প্রভাব ফেলে। আমরা চীনে অবস্থানকালীন সময়েই চীন রোহিঙ্গাদের জন্য বেশ বড় একটা ত্রাণসামগ্রী অর্ডার  দিয়েছে এবং আমরা দেশে আসার আগেই সেটা দেশে এসে পৌঁছেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে চীনের ভূমিকা, ভারতের ভূমিকা, সোভিয়েত ইউনিয়নের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।  রোহিঙ্গা সমস্যা রাতারাতি সমাধান করা সম্ভব না,  সময় লাগছে। আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।

পলিটিক্সনিউজঃ জোটগত রাজনীতি নিয়ে মূল্যায়ন কি?

অসীম কুমার উকিলঃ আমাদের জোটের মৃত্যু থাকবে না। তারা কোথাও যাবে না, তাদের কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই এবং আমরাও ছাড়বো না।  মুক্তিযুদ্ধের চেতনার পক্ষে সবগুলো শক্তিকে আমরা একই প্ল্যাটফরমে আনার চেষ্টা করছি।

পলিটিক্সনিউজঃ রাজনীতিতে এমন কিছু দেখছেন যা দেখে মনে হচ্ছে, এমনটা হওয়া উচিত নয়…

অসীম কুমার উকিলঃ দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির জন্য দায় দায়িত্ব রাজনীতিবিদদের। আমরা কেন সিইসি এপয়েন্টমেন্টের একটা নীতিমালা আজও তৈরি করতে পারলাম না? গত তিন-চার বছর যাবত বিচারপতি নিয়োগ হচ্ছে না। সিইসি এপয়েন্টমেন্ট  এবং জাস্টিস  এপয়েন্টমেন্টের নীতিমালা গণতন্ত্রের ভিত্তি। এটা তৈরি করতে না পারলে আবারো সামরিক শাসনের হুঙ্কার আসবে।

পলিটিক্সনিউজঃ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনার নির্বাচনী এলাকা নেত্রকোনার-৩ নিয়ে আপনার কি ভাবনা এবং আপনি মনোনয়ন নিয়ে কতটা আশাবাদী?

অসীম কুমার উকিলঃ আমি উন্নত-সমৃদ্ধ ডিজিটাল বাংলাদেশের একজন কারিগর হতে চাই। কারিগরি বলতে আমি বুঝি আধুনিক মন মানসিকতা সম্পন্ন শিক্ষিত রুচিশীল ব্যক্তি। আমি এলাকার সামগ্রিক উন্নয়ন করতে চাই। উন্নয়নের প্রথম ধাপ হচ্ছে কানেক্টিভিটি। আমি আমার এলাকার প্রতিটি গ্রামে যাওয়ার সড়ক ব্যবস্থা উন্নত করতে চাই। সম্পূর্ণ সেনেটারী সিস্টেমটাকে ডেভেলপ করতে চাই। প্রত্যেকের বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুৎ দিতে চাই। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে সত্যিকার অর্থে মানুষ গড়ার কারিগর হয়, তা করতে চাই।  আমি মনে করি এই জায়গাগুলোতে কাজ করতে পারলে ক্ষুধা, দারিদ্র,  সন্ত্রাসমুক্ত বাংলাদেশ হয়ে যাবে।  আমার ছেলেরা প্রকৃত শিক্ষিত হলে তারা ইন্টারভিউতে  চাকরি পাবে। বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঠিক থাকলে শিক্ষিত ছেলেরা গ্রামে কৃষি, পোল্ট্রি, ডেইরিতে মনোযোগ দিতে পারবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থাকলে গ্রামের কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য শহরের সহজে পৌঁছে যাবে। এর সুফল সবাই ভোগ করবে।

মনোনয়ন নিয়ে আমি আশাবাদী। আমরা দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি অনুগত। দলীয় সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। আমার একটা বড় প্লাস পয়েন্ট অপু। কর্মীরা মনে করে অপু উকিল কর্মীদের মনের কথা বলে।  আমার এলাকায় আমার চেয়ে অপুর ফ্যান বেশি। দলের বাইরেও তার অনেক ভক্ত আছে । আমি আশা করি আগামী নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু কন্যা আমাকে মনোনয়ন দেবেন এবং এ আসনটি আমি নেত্রীকে উপহার দিতে পারবো।