‘কারাগারেও দৃঢ় মনোবলে খালেদা জিয়া’

কারাগারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মনোবল দৃঢ় রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে বিপন্ন ও অতিষ্ঠ করার জন্য সরকার কারাকর্তৃপক্ষ দিয়ে নিষ্ঠুরতার যে আবহ তৈরি করেছে তার মধ্যেও বেগম জিয়ার মনোবল দৃঢ় রয়েছে’।

মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেন,‘কুরবানি ঈদের আগে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি মেলেনি। অন্যায়ভাবে তাঁকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। আরেকটি একতরফা নির্বাচন আয়োজনের জন্য শেখ হাসিনার একমাত্র প্রতিপক্ষ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াকে বন্দি রাখা হয়েছে। আইনি প্রক্রিয়ার নামে আওয়ামী সরকারি প্রক্রিয়ায় বেগম জিয়ার ওপর নামিয়ে আনা হয়েছে জুলুম ও অত্যাচার। অবৈধ সরকার নিজেদের নিরাপদ রাখতেই এ জুলুম ও অত্যাচার’।

তিনি বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) বহুদলীয় গণতন্ত্র ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বিপদ মনে করে। তাই গণতন্ত্রে স্বীকৃত মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বয়ে যাওয়া আন্দোলনের আপসহীন নেত্রীকে নিয়ে তাদের যত ভয় ও আতঙ্ক। আতঙ্ক মুক্ত হতেই তারা বেগম জিয়াকে মুক্ত রাখেনি।আওয়ামী শাসকগোষ্ঠী শুধু তাঁকে আটক করেই ক্ষান্ত হয়নি, তাঁকে বিপর্যস্ত করতে কারাগারেই নানামুখী নির্যাতন করা হচ্ছে। তাঁর কক্ষ শুধু জরাজীর্ণ ধুলোবালিতে আকীর্ণ নয়, স্যাঁত-স্যাঁতে মেঝেতে কীটপতঙ্গের উপদ্রব বিভৎসরুপ ধারণ করেছে’।

বিএনপির এই মুখমাত্র হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন,‘দেশনেত্রীকে কারাগারে আটকে রেখে এদেশে একতরফা নির্বাচন হবে না। শূন্য কেন্দ্রে ভোটারবিহীন ইলেকশনের নামে সিলেকশন হতে দেয়া হবে না। অবিলম্বে বানোয়াট মামলা প্রত্যাহার করে ঈদের আগেই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে’।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে সরকারের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা যৌক্তিক সংস্কারের মাধ্যমে মেধার ওপর গুরুত্বারোপের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবিকে বার বার অগ্রাহ্য করেছে সরকার। কোটা সংস্কারের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী কোটা বিলুপ্তির ঘোষণা দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে সে ঘোষণা বাস্তবায়িত করা হলো না। প্রতারিত হলো কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীরা। সরকারিবাহিনী ও সশস্ত্র ছাত্রলীগের ক্যাডাররা রড, বাঁশের লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করলো কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর। হাত-পা কোমর ভেঙ্গে দেয়া হলো শিক্ষার্থীদের। ক্যাম্পাস নিষ্পাপ ছাত্র-ছাত্রীদের রক্তে রঞ্জিত হলো। গ্রেফতার ও রিমান্ডে অবর্ননীয় নির্যাতনের শিকার হলো তারা। এখন আবার সচিব পর্যায়ের কমিটি প্রায় সর্ব পর্যায়ের কোটা তুলে দেয়ার প্রস্তাব করেছে। কিন্তু আদালতের রায়ের কথা উল্লেখ করে কোটা সংস্কারের আরও প্রলম্বিত করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে’।

তিনি বলেন, ‘কোটা নিয়ে আদালতের কোন রায় নেই, পর্যবেক্ষণ আছে। আন্দোলতরত শিক্ষার্থীরা কোটা বাতিল চায় না, তারা কোটা সংস্কার চায়। কিন্তু আবারও সব কোটা বাতিল করার প্রস্তাব মানেই আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আবারও প্রতারণার কৌশল অবলম্বন। এটিও আরেকটি প্রহসন’।

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী সরকার প্রতারণা ছলনার ওপর শাসন দণ্ড অবৈধভাবে ধরে রেখেছে। সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক দুর্নীতি ও রক্তে পাতের উপর এ সরকার দাঁড়িয়ে আছে। সরকার দেশকে নিরব নিস্তব্ধ করতেই পছন্দ করে। কথা বলা, প্রতিবাদ সমালোচনা শুনলেই কাণ্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ভোটারবিহীন সরকার চায় তাদের হুকুমেই সবাইকে মেনে চলতে হবে। সেজন্য তারা নির্মূলের নীতি বাস্তবায়ন করছে।  আর এ কারণেই মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে নিরাপদ সড়কের দাবিতে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রক্তাক্ত করা হয়েছে, রক্তে ভিজিয়ে দেয়া হয়েছে তাদের স্কুল ড্রেস’।

আন্দোলন দমাতে নির্বিচারে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, রিমান্ডে নিয়ে অকথ্য নির্যাতন করা হচ্ছে এবং তাদের জামিন দেয়া হচ্ছে না। অথচ প্রধানমন্ত্রী দুদিন আগে বলেছেন শিক্ষার্থীদের আন্দোলন তাদের পথ দেখিয়েছে। একদিকে প্রশংসা আরেক দিকে বর্বোরচিত দমন-পীড়ন এক অদ্ভুত দ্বিচারি সরকার। শিশু-কিশোরদের সাথেও প্রতারণা করতেও এরা বেপরোয়া’।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেইে নির্দয় বিবেকহীন নিপিড়ক ছাড়া আর কোন বৈশিষ্টই অর্জন করতে পারেনি। একের পর মানবধিকার লঙ্ঘন করে নারকীয় ঘটনার মাধ্যমে এক হানাদারী শাসন কায়েম করেছে জনগণের ওপর। বিরোধী দলহীন, প্রতিবাদহীন সভা-সমাবেশহীন দেশকে বিরান ভূমিতে পরিণত করার চেষ্টা চালাচ্ছে এ অবৈধ সরকার’।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু, মুনির হোসেন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।