‘তারেক রহমান আওয়ামী সরকারের আক্রোশের শিকার’

দেশে এখন অন্ধকার শ্বাসরোধী পরিবেশের কারণে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস এবার দলটি যথাযথভাবে পালন করতে পারেনি বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সমকালীন রাজনীতির সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস এবারে যথাযথভাবে পালন করতে পারিনি আমরা। কারণ দেশে এখন অন্ধকার শ্বাসরোধী পরিবেশ। তারেক রহমানের ওপর সরকারের ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের ধারা এখনও বয়ে চলেছে। নানাভাবে তাঁকে বিপর্যস্ত-বিপন্ন করার জন্য সরকার কুটচাল চেলেই যাচ্ছে। তথাকথিত আইনি প্রক্রিয়ার নামে মিথ্যা মামলা ও অন্যায় সাজা দিয়ে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা পূরণের গতি অব্যাহত আছে।

‘আওয়ামী সরকারের বর্ধিতাংশ ১/১১ সরকার। সুতরাং ১/১১ সরকারের হস্তান্তরের ক্ষমতা ধারণ করার পর থেকে তারেক রহমানের ওপর আরও নানাভাবে নিপীড়ন-নির্যাতনের বহুমাত্রার অভিনব প্রয়োগ দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে। ১/১১ সরকার যে মামলায় তারেক রহমানের নাম অভিযোগপত্রে দিতে পারেনি। ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সেই মামলায় সম্পূরক চার্জশিট দিয়ে তারেক রহমানের নাম দেয়া হয়েছে। সুতরাং এই নাম দেয়া সরকারের প্রতিহিংসার চরিতার্থেরই নামান্তর। অর্থাৎ নির্দোষ তারেক রহমান আওয়ামী সরকারের আক্রোশের শিকার।’

সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজ ৩ সেপ্টেম্বর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১১তম কারামুক্তি দিবস। ১১/১ মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের অসাংবিধানিক সরকারের নির্দেশে ২০০৭ সালে ৭ মার্চ তারেক রহমানকে গ্রেফতার করা হয়। আটকের পরে তাঁর বিরুদ্ধে চালানো হয় অপপ্রচারের ধারাবর্ষণ।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিনের কর্তৃত্ববাদী সরকার গণতন্ত্র ও ভিন্নমত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধা দিয়ে তারেক রহমানকে ঘিরে বিছাতে থাকে নানা চক্রান্তজাল। মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে তারেক রহমানকে হেয় করার জন্য রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করা হয়। অথচ দেশের কোথায়ও তাঁর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ বা মামলা ছিল না। দিনের পর দিন রিমান্ডের নামে নিষ্ঠুর নির্যাতন করা হয়। পৈশাচিক, শারিরীক অত্যাচারে তাঁকে গুরুত্বর জখম করা হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নিমর্ম অত্যাচারে তারেক রহমান মুক্তির পরও হাসপাতালের বিছানা থেকে উঁঠতে পারেননি।’

তিনি বলেন, ‘তারেক রহমানের ওপর নির্দয়-নির্যাতন দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রকারীদের প্রতিহিংসার প্রকাশ। জাতীয়তাবাদী শক্তিকে নেতৃত্ব শূন্য ও সামগ্রিকভাবে বিরাজনীতিকরণের ব্লু-প্রিন্ট বাস্তবায়নের জন্যই সে সময় বিএনপি চেয়ারপারসনকে মিথ্যা ও কাল্পনিক মামলায় গ্রেফতার এবং চক্রান্তমূলক বানোয়াট মামলায় আটক করে তারেক রহমানকে শারীরিকভাবে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। যে অভিযোগগুলো তাঁর বিরুদ্ধে করা হয়েছিল সেগুলো পরবর্তীতে বানোয়াট ও বানানো গল্প হিসেবে প্রমাণ হতে থাকে। আর সেজন্য জনগণ বিশ্বাস করে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা ও সাজা দেয়া হয়েছে তা গভীর ষড়যন্ত্রমূলক।’

তিনি বলেন, ‘দেশের বিপুল জনপ্রিয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অন্যায় বিচারে কারাবন্দি। প্রতিহিংসা চরিতার্থের নেশায় উম্মাদ সরকার দেশনেত্রীকে হয়রানি ও হেনস্তা করার জন্য বানোয়াট মামলা এবং পরিকল্পিত আইনি প্রক্রিয়ার নামে তাঁকে সাজা দেয়া হয়েছে। এক ব্যক্তির অদম্য ক্রোধ ও হিংসার চরম বহিঃপ্রকাশ ঘটছে জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ওপর।’

তিনি আরও বলেন, ‘এক ভয়ঙ্কর রাজনৈতিক অস্থিরতা দেশে বিরাজমান। গুম-খুন, লুটপাট, আত্মসাত ও দখলের মহাসমারোহে গণতন্ত্রকে বন্দি করা হয়েছে। বন্দি করা হয়েছে গণতন্ত্র স্বীকৃত বিরোধী দলের অধিকার, কথা বলা ও সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে। সারাদেশ আজ বন্দীশালায় পরিণত হয়েছে। দুঃশাসনের বিষাক্ত বলয়ে বন্দি দেশবাসী। এমতাবস্থায় আমরা সকলে তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস স্মরণ করছি। আমরা তাঁর দীর্ঘায়ু কামনা করছি। দুঃশাসনের অবসানে তাঁর অতিদ্রুত দেশে ফেরার জন্য দেশবাসীসহ সকলে প্রতীক্ষা করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুস সালাম আজাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।