শেখ হাসিনার ঠাট্টা-তামাশার প্রতিক্রিয়ায় কামাল হোসেনের ভাষ্য

সম্প্রতি যুক্তফ্রন্ট নামে বাংলাদেশে নতুন একটি রাজনৈতিক জোটের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। গণফোরাম সভাপতি ও সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন এবং সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর যৌথ নেতৃত্বে সদ্য-গঠিত এই জোটকে শক্তিশালী করতে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ড. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, বাংলাদেশের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি)’র একাংশের নেতা আ.স.ম আব্দুর রব, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আহ্বায়ক আ ব ম মোস্তফা আমিন, ডাকসুর সাবেক ভিপি সুলতান মো. মনসুর ও রবের স্ত্রী তানিয়া রব সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ একযোগে কাজ করার কথা জানিয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে যুক্তফ্রন্ট গঠনের পর কামাল হোসেনের গণফোরাম এবং আবদুল কাদের সিদ্দিকীর কৃষক, শ্রমিক, জনতা লীগকে যুক্ত করার চেষ্টায় রয়েছেন জোটটির নেতারা। এ লক্ষ্যে গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর বেইলি রোডে ড. কামাল হোসেনের বাসায় আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠক করে জোট গঠনের কথা সাংবাদিকদের জানানো হয়।

তবে নতুন এই যুক্তফ্রন্ট নিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা-সমালোচনা ও নানা গুঞ্জন। রবিবার (২ সেপ্টেম্বর) গণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন এই জোট নিয়ে এক প্রকার ঠাট্টা-তামাশাই করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা বেশ আলোচনার জন্ম দিয়েছে। পত্র-পত্রিকায়, ও সোস্যাল মিডিয়াতেও প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য নিয়ে চর্চা হচ্ছে।

নবগঠিত এই জোট প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন- ‘কামাল হোসেন যখন গরম বক্তৃতা দেবেন, তখন ধরে নেবেন তার প্লেন রেডি।’

সরকারপ্রধানের এমন মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে ড. কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘এসব নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। শেখ হাসিনা যে নতুন জোটকে স্বাগত জানিয়েছেন সেটা ইতিবাচক। আমরা তো প্রধানমন্ত্রীর সমর্থনে কিছু করিনি, স্বাধীনভাবে করেছি। তাই এ বিষয়ে তিনি প্রশ্ন তুলতেই পারেন।’

জোটের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নে প্রধানমন্ত্রীর করা মন্তব্য প্রসঙ্গে ড. কামাল আরও বলেন, ‘মানুষ এটা ভালোভাবেই জানে যে ২০০৮ সালে আমরা কী করেছিলাম। আমাদের জোটে যারা আছেন ২০০৮ সালে নির্বাচন হওয়ার ব্যাপারে তাদের কী অবদান সেটা সবাই জানেন। ভোটার তালিকা বাতিল করার জন্যে আমি মামলা করেছিলাম। তখন এক কোটি ৪৪ লাখ ভোট বাতিল করা হলো। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করালাম। ইয়াজউদ্দিন আহমদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদ থেকে সরালাম। তখন আমাদের বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতার মামলা হলো। এসব অবদানের কথা তো অনস্বীকার্য।’

জোট নেতাদের লক্ষ্যের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নতুন জোট চাইছে বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে কার্যকর গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে। যদি জনমত নেয়া যায় তাহলে দেখবেন যে ১০০% সমর্থন জোটের পক্ষে আছে।’

দেশের বর্তমান ও নিকট অতীতের কথা তুলে ধরে কামাল হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বাংলাদেশে গত চার/পাঁচ বছরে গণতন্ত্রের কথা শুধু মুখেই বলা হয়েছে। কিন্তু সেরকম কিছুই করা হয়নি। মনোনীত লোকজনদের নিয়ে সংসদ বানানো হয়েছে। অথচ সংসদীয় গণতন্ত্রের নাম-গন্ধও কেউ পায়নি।’

সংসদীয় গণতন্ত্র ও দেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক ধারা ফেরাতে তাঁর জোট কতটা ভূমিকা রাখতে পারবে জানতে চাইলে কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের শক্তি শূন্য বলে ধরে নিচ্ছি। কিন্তু জনগণের সেই শক্তি আছে। আমাদের কথাবার্তা তো জনগণের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। জনমত যাচাই করে দেখেন তারা পরিবর্তন চাচ্ছে।’

এদিকে রবিবারের সংবাদ সম্মেলনে সদ্য-গঠিত জোটের কয়েকজন নেতাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা ও তাদের নিয়ে ছড়াও কেটেছেন প্রধানমন্ত্রী। যুক্তফ্রন্টের নেতাদের ইঙ্গিত করে ওই সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘বাংলাদেশে কিছু মানুষ আছে যারা গণতন্ত্রের কথা বলেন। কিন্তু তারা অগণতান্ত্রিক উপায়ে ক্ষমতায় আসার চেষ্টা করেন। তারা উত্তর পাড়ার (ক্যান্টনমেন্ট) দিকে তাকিয়ে থাকেন।’

তবে শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য তাদের ব্যাপারে প্রযোজ্য নয় বলেও মনে করেন কামাল হোসেন।

একইসময় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘আদৌ নির্বাচন হবে কিনা যারা বলেন তারা হয়তো বসে আছেন…কোন কিছু হলে সব উত্তর পাড়ার দিকে তাকিয়ে বসে থাকে। এটাই তো বাস্তবতা। যেমন আমার বাবাকে হত্যা করেছে। যিনি এই দেশটা স্বাধীন করে দিয়ে গেলেন তাঁকে যারা খুন করতে পারে তো সেদেশে কি না হতে পারে!’

প্রধানমন্ত্রীর এমন বক্তব্যের জবাবে কামাল হোসেন বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা যা করেছি সেটা তো গোপনে করিনি। আমি মামলা করে সব ভুয়া ভোটার বাতিল করলাম, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করলাম- এসব উত্তর পাড়ার কোনও ব্যাপার নয়। তাদের সাথে আমাদের কোনও দিন সম্পর্ক ছিল না।’

সবশেষ ড. কামাল হোসেনের কাছে জানতে চাওয়া হয় তাদের নবগঠিত যুক্তফ্রন্ট বিএনপির সঙ্গে কোনও ধরনের রাজনৈতিক ঐক্যে যাবে কিনা। উত্তরে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আমাদের কোনও কথা হয়নি। তবে নীতিগত ইস্যুতে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। আজ রাজনৈতিক ঐক্য হলে সেটি তখন দেখা যাবে।’ খবর বিবিসির।