গোরস্থানেও পুলিশ দরকার, যদি মৃতরা এসে ঝামেলা করে!’

বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নামে ‘উদ্ভট’ ‘মিথ্যা’ ও ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ মামলার সমালোচনা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান বলেছেন, যারা মারা গেছে তারাও নাকি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে?

তিনি বলেন, ‘আমরা যখন মিছিল-মিটিং করি, বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ মোতায়েন করা হয় যাতে কোনো ঝামেলা না হয়। দেশের অবস্থা এমন হয়েছে; এখন দেখা যাচ্ছে গোরস্থানে পুলিশ মোতায়েন করা দরকার, যদি মৃতরা এসে ঝামেলা করে!’

জাতীয় প্রেস ক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে মঙ্গলবার (১৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে এক সংহতি নজরুল ইসলাম খান এ সব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশ লেবার পার্টি এ সমাবেশের আয়োজন করে।

রাজধানীর চকবাজার থানা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল আজিজুল্লাহ মারা যান ২০১৬ সালের মে মাসে। মৃত্যুর প্রায় ২৮ মাস পর তাকে একটি মামলার আসামি করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তিনি কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় পুলিশকে লক্ষ্য ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। সম্প্রতি এই মামলার বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়েছে।

মৃত ব্যক্তিকে মামলার আসামি করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বিএনপির প্রবীণ এ নেতা বলেন, ‘দেড় বছর আগে যিনি মারা গেছেন তিনি নাকি পুলিশের ওপর ইটপাটকেল ছুড়েছেন। আগস্ট মাসে মারা গেছেন যিনি, তিনি নাকি সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশকে আক্রমণ করে। যারা জীবিত আছে তারাই শুধু এ সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করে না, যারা মারা গেছে তারাও লড়াই করে!

‘গত কয়েকদিনে কয়েক হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে’ এমন দাবি করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, কী অদ্ভূত একটি দেশ, এ দেশের জন্যই কি মুক্তিযুদ্ধ করলাম? পত্রিকায় এসেছে পরিবেশ দূষণে মৃত্যুর হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ এই দেশে। কিন্তু এই হিসাব কেউ করে নাই, যে রাজনৈতিক দূষণে বিশ্বে বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি মানুষ মারা যায়। এই দূষণে মারা গেছে গত কয়েকবছরে কয়েক হাজার মানুষ। গত কয়েকদিনেই হাজার হাজার মামলা দেওয়া হয়েছে, লাখ লাখ আসামি করা হয়েছে। আমাদের মিটিংয়ের অনুমতি দেওয়া হয়, আমাদের কর্মীরা আসার সময় গ্রেফতার হন কিংবা যাওয়ার সময় গ্রেফতার হন। মিটিংয়ে আসলে তাদের ফিরে যাওয়ার উপায় থাকে না।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের নিউইয়র্ক যাওয়া নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাদের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, হাছান মাহমুদ সাহেব মাঝেমধ্যে উল্টাপাল্টা কথা বার্তা বলেন। যার কারণে তাদের দলের নেত্রী সাজেদা চৌধুরীও প্রকাশ্যে মিটিংয়ে বলেছিলেন, দেশের মধ্যে বহু বেয়াদপ দেখেছি, এ রকম দেখি নাই। হাছান মাহমুদ বলেছিলেন যে, ফখরুল ইসলাম সাহেব সাহেব জাতিসংঘে কারও দাওয়াতে যাননি, এটি মিথ্যাচার করা হয়েছে। নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তর। আমাদের এখানে যে সচিবালয় আছে এখানে কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট ছাড়া, পাশ ছাড়া যেতে পারবেন? মির্জা ফখরুল যে এখন থেকে নিউইয়র্ক গেলেন, সেখানে জাতিসংঘের মহাসচিবের প্রতিনিধি তার সঙ্গে কথা বললেন কোনো দাওয়াত ছাড়া? এ রকম তো হয় না কখনও। এর আগে এক সহকারী মহাসচিব এসেছিলেন তারানকো (অস্কার ফার্নান্দেজ তারানকো)। তার সঙ্গে দুই জোটের শীর্ষ নেতারা দেখা করেছেন।’

পুরান ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার ‘অসুস্থতার’ বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়াকে সুস্থ রাখার দায়িত্ব সরকারের। ব্রিটিশ আইন থেকে বলা হয়েছে, আপনি যখন জেলখানায় ঢোকেন তখন আপনার ওজন মাপা হয়। জেল থেকে বের হওয়ার সময় ওজন মেপে যদি কম পাওয়া যায় তাহলে আপনি তাদের বিরুদ্ধে মামলা করে দিতে পারবেন। অর্থাৎ যারা সরকারের হেফাজতে থাকবে, তাদের নিরাপত্তা এবং সুস্থতা দেখার দায়িত্ব সরকারের। খালেদা জিয়া ক্রমান্বয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তিনি কোনো সাধারণ নাগরিক নন। আমি সরকারকে অনুরোধ করব, খালেদা জিয়ার চিকিৎকসা যেন কোনো বিশেষায়িত হাসপাতালে করা হয়।’

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, বাংলাদেশের লেবার পার্টির চেয়ারম্যান ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান প্রমুখ।
সূত্র ঃ সারাবাংলা