‘গ্রেনেড মামলায় চক্রান্ত করে বিএনপি নেতাদের জড়ানো হয়েছে’

একুশে আগস্ট গ্রেনেড মামলায় তারেক রহমানসহ বিএনপির নেতাদের ‘চক্রান্ত’ করে জড়ানো হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ওই মামলায় সঠিক তদন্ত হলে সত্য বেরিয়ে আসতো দাবি করে তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিকভাবে পুরো বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাদের জড়ানো হয়েছে।’

মঙ্গলবার (৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি’র ‘সাগর-রুনি মিলনায়তনে’ এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ওই দুর্ঘটনার পর (একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা) বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া সেখানে যেতে চেয়েছিলেন। বিরোধী দলীয় নেতার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তাকে সেদিন যেতে দেয়া হয়নি। এই ঘটনার পরপরই আমাদের তৎকালীন সরকার সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য সবরকম ব্যবস্থা করেছিলো। বিএনপি সরকারই মুফতি হান্নানকে গ্রেফতার করেছিলো’।

তিনি বলেন,  ‘ঘটনার তদন্ত করার জন্য এফবিআই এবং ইন্টারপোলকে নিয়ে আসা হয়েছিলো। তিনবার চার্জশীট দেয়া হয়েছিলো। আজকের প্রধানমন্ত্রী তখন কিন্তু বিএনপির তারেক রহমান ও আবদুস সালাম পিন্টুকে জড়িয়ে কথা বলেননি। এক এগারোতে তিনি যখন সাব-জেলে ছিলেন তখন মামলার আইও তাকে যখন জিজ্ঞেসা করতে যান। তখন তিনি বিএনপি ও তারেক রহমনাকে দোষারোপ করেননি। তিনি দোষারোপ করেছিলেন সেনাবাহিনীকে।’

আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্ত ভিন্ন দিকে প্রবাহিত হয়েছে দাবি করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এক-এগারোর সরকারের সময়ে চার্জশীট দেয়া হয়েছিলো। সেখানে তারেক রহমানের নাম ছিলো না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরই গোটা পরিস্থিতি বদলে গেল। ৬১ জন স্বাক্ষী হওয়ার পর আইও পরিবর্তন করে নতুন করে তদন্ত করে আইও দেয়া হলো অবসরপ্রাপ্ত এক পুলিশ কর্মকর্তাকে। যিনি চাকরি হারিয়েছিলেন, পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নমিনেশনও চেয়েছিলেন। তিনি এতো বছর পরে মুফতি হান্নানকে ৪১০ দিন রিমান্ডে নিয়ে অমুনাষিক নির্যাতন করে তার কাছ থেকে জবাবনবন্দি নিয়েছে’।

ওই ঘটনায় প্রকৃত আসামিকে না ধরে আওয়ামী লীগ বিএনপির ওপর দোষ চাপাচ্ছে উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত ছিলো। তা না করে তারা রাজনৈতিকভাবে পুরো বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে তারেক রহমানসহ বিএনপি নেতাকের জড়ালো। এখন তারই সূত্র ধরে একই রেকর্ড বাজাচ্ছে যে, এর সঙ্গে বিএনপি নেতারা জড়িত। প্রতিটি ঘটনায় তারা একই কাজ করেছেন। প্রকৃত আসামী না ধরে সুষ্ঠু তদন্ত না করে বিএনপির ওপর দোষা চাপাচ্ছে’।

তিনি বলেন, ‘হলফ করে বলতে পারি, তারেক রহমান, আবদুস সালাম পিন্টুসহ বিএনপির কোনো নেতাই এর সঙ্গে জড়িত ছিলো না। কারন যে কোনো হত্যাকান্ডের একটি মোটিভ থাকে। সেই ঘটনায় বেনিফিসিয়ালি কে হয়েছে? আওয়ামী লীগ হয়েছে। আওয়ামী লীগ এটিকে ইস্যু করে বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলছে, বিএনপি ধ্বংস করছে।’

“সঠিক তদন্ত যদি করা হতো, দোষীদের বের করার চেষ্টা করা হতো, তাহলে আসল সত্য বেরিয়ে আসতো। রাজনৈতিকভাবে তারেক রহমানকেসহ বিএনপি নেতাদের যুক্ত করে এটাই প্রমানিত হয়েছে সরকার রাজণৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের জড়িয়েছে”, বলেন বিএনপির মহাসচিব।

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি ও শহীদ জিহাদের ২৮তম শাহাদাদ বার্ষিকী উপলক্ষে এই স্মরণসভার আয়োজন করে ‘শহীদ জিহাদ স্মৃতি পরিষদ’।

একুশে আগস্ট গেনেড হামলার মামলায় তারেক রহমানের নাম উঠে আসায় বিষয়টিকে ‘চক্রান্ত’ হিসেবে অভিহিত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই চক্রান্ত শুরু হয়েছে জিয়াউর রহমানকে হত্যার মধ্য দিয়ে। পরে এক এগারোর পর থেকে আবার শুরু হয়েছে। বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী দর্শনকে নির্মুল করে দিয়ে এবং তার ধারক-বাহক খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে রাজনৈতিকভাবে হেয় করে রাজনীতি থেকে দুরে সরিয়ে রাখাই উদ্দেশ্য। এখন শুরু হয়েছে শারীরিরকভাবে তাদেরকে সরিয়ে দেয়া।’

‘দীর্ঘদিন বলেছি, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া খুবই অসুস্থ। তাকে ইউনাইটেড হাসপাতালে নিয়ে যান। তারা শোনে নাই। এখন কি হয়েছে…আজকে তিনি এতো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন যে, তিনি পঙ্গু হয়ে পড়তে পারেন’।

‘সরকার আইন দিয়ে, শক্তি দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে ফেলেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুর বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ খুব খারাপ জিনিস। এটি মগজের মধ্যে ঢুকে যায়। তখন দেখা যায় সরকার যা চায় জনগণ একটা সময় তাই করছে। পৃথিবীতে এমন দেশ আছে যাদের নেতা হাসলে তারা হাসে, নেতা কাদলে তারা কাদে। আমাদের দেশে প্রায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এখন নেতা হাসলে আমাদের লোকজন হাসতে থাকে, ওনার চোখে পানি আসলে সবাই কাদতে থাকে। এটা শুরু হয়েছে।’

আগামী নির্বাচনে সরকারি চাকরিজীবিদের প্রিজাইডিং অফিসার করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ন্ত্রণ করতেই এটি করা হচ্ছে। কারন এরা সরকারি চাকরিজীবী হওয়ায় কেউ-ই সরকারের কথার বাইরে যেতে পারবে না’।

বর্তমান সময়কে ‘গভীর সংকটকাল’ অভিহিত করে তিনি সবাইকে সরকারের আচরণের প্রতিবাদ করতে রাস্তায় নামার আহবান জানান।

তিনি বলেন, ‘সবাইকে বেরিয়ে এসে প্রতিবাদ করার দরকার। রাজপথে আসতে হবে এর বিকল্প নেই। কেউ আপনাকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে না, এই সরকারকে সরিয়ে দেবে না; যতক্ষণ না পর্যন্ত জনগণ সরিয়ে দিচ্ছে। আমাদের কাজ জনগণকে সংগঠিত করে উদ্ভুদ্ধ করে রাজপথে নামা। কোনো শর্টকার্ট পদ্ধতি নেই। জনগণকে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। কারন জনগণের শক্তি ছাড়া শক্তিশালী কিছু নেই।’

বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ডাকসু’র প্রাক্তন ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমের সঞ্চালনায় স্মরণ সভায় বিএনপি ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী, সমাজকল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, ডেমোক্রেটিক লীগের  সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি’র জাগপার সাধারণ সম্পাদক খন্দকার লুৎফর রহমান, যুগ্ম-সাধারন সম্পাদক আসাদুর রহমান খান আসাদ প্রমুখ বক্তব্য দেন।