বঙ্গবন্ধুর দেখানো পথেই সফলতা চান ড. কামাল

জনগণের ঐক্যের ওপর নির্ভর করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেখানো পথকে পাথেয় করে সফল হতে চান সদ্য গঠিত ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের’ অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন।

তিনি বলেছেন, ‘জনগণের ঐক্য গড়ে উঠলে কোনও স্বৈরাচার টিকতে পারে না। অতীতে প্রমাণ হয়েছে বাঙালিরা ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ তাদের দাবিয়ে রাখতে পারে না। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন কিভাবে ভয়কে জয় করে জনগণের ঐক্যের ওপর ভরসা করতে হয়।’

ড. কামাল বলেন, ‘জনগণের ঐক্যের ওপর নির্ভর করে সব ধরনের রাজনৈতিক দাবি পূরণ করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। আমরা সেটিকে পাথেয় করে এগিয়ে যেতে চাই।’

শনিবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর প্রেসক্লাবের তৃতীয় তলায় ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের’ আত্মপ্রকাশের ঘোষণা অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় অভিন্ন ৭ দফা দাবি আর ১১ লক্ষ্যের কথা জানিয়ে জোটের ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মাহমুমুদ রহমান মান্না।

বক্তব্যের শুরুতে ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘একাত্তরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কিভাবে পরিস্থিতি সাহসের সঙ্গে এবং জনগণকে সঙ্গে নিয়ে মোকাবিলা করেছেন বিশ্বের বুকে নজির হয়ে আছে। বঙ্গবন্ধু আমাকে কিছু না দিলেও একটি জিনিস দিয়েছেন, শিখিয়েছেন কিভাবে জনগণের ওপর নির্ভর করে দাবি আদায় করতে হয়।’

এ প্রসঙ্গে গণফোরাম সভাপতি আরও বলেন, ‘তাঁর (শেখ মুজিব) শক্তি ছিলো জনগণের শক্তি। বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে কেউ তাদের দাবিয়ে রাখতে পারেনি। এটা ব্ঙ্গবন্ধুই প্রথম দেখিয়েছেন। কেউ যদি বলে আপনাকে গুলি করবো, করুক। আমি ভয় পাই না। বঙ্গবন্ধু শিখিয়েছেন একজন মুসলমান হিসেবে যখন মৃত্যু আসবে তখনই মৃত্যু হবে। এর আগেও হবে না পরেও না।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে প্রবীন এই বর্ষীয়ান আইনজীবী বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ৭২ এর সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে, এই দেশের মালিক জনগণ। গণতন্ত্র তাদের অধিকার।  সুতরাং বৈধভাবে একটি সরকার গঠন করতে হলে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। একজন ক্ষুদ্র আইনজীবী হিসেবে আমি সেটি বুঝি।’

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ গড়তে সব দলমত, রাজনৈতিক দল, সংগঠন, পেশাজীবীদের ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের’ সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান ড. কামাল। সেইসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত দলিলে বলা আছে তিনি কোন বাংলাদেশ চেয়েছেন। আমরা সেই বাংলাদেশই গড়তে চাই। আর সেই পথে কোনও ধরনের আপস করবো না আমরা।’

ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জনগণের ঐক্য হলে দুর্নীতিবাজরা পালিয়ে যাবে। তারা পালিয়ে যাক। আমাদের কিছু করার নেই। আমাদের যেন বাধা দেয়া না হয়।’

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে নতুন স্বপ্নের সূচনা হলো জানিয়ে অনুষ্ঠানে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আজ নব সূচনার দিন। এই ঐক্যের মধ্য দিয়ে গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার নতুন সূচনা হলো। আমরা মুক্ত দেশ, মুক্ত মত প্রকাশের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। নতুন আঙ্গিকে এই লড়াই শুরু হলো। অনেকে এই ফ্রন্টের বাইরে রয়েছেন। তাদের কাছে আহ্বান আসুন ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের বাংলাদেশ গঠনে সম্পৃক্ত হই।’

অনুষ্ঠানে ড.খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ, জেএসডির সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মঈনুল হোসেন, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা:জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসিন মন্টু, কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, জেএসডির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ ৭ দফা দাবি ও ১১ লক্ষ্যকে সামনে রেখে সংবিধান প্রণেতা ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করলো ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট’। যেখানে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টে যুক্ত হয়েছে ঐক্য প্রক্রিয়া, নাগরিক ঐক্য ও জেএসডি। শনিবার (১৩ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টায় জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলন থেকে ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে’র ব্যানা‌রে বৃহত্তর এ জাতীয় ঐক্যপ্রক্রিয়ার এ ঘোষণা দেয়া হয়।

৭ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির মুক্তি, গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও ডিজিটাল নিরাপত্তাসহ সব কালো আইন বাতিল করা। এছাড়াও নির্ধারণ করা হয়েছে ১১টি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।