ভোটে থাকলেন না আউয়াল মিন্টু, আলাল, সোহেল

দলের প্রত্যয়ন পেলেও মনোনয়নপত্র দাখিল করেননি বিএনপির প্রভাবশালী তিন নেতা আবদুল আউয়াল মিন্টু, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও হাবিব-উন নবী খান সোহেল।

একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে বুধবার ছিল রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন। এই তিনজন তা জমা না দেওয়ায় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারছেন না।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আউয়াল মিন্টুকে ফেনী-৩ আসনে, যুগ্ম মহাসচিব আলালকে বরিশাল-২ আসনে এবং যুগ্ম মহাসচিব সোহেলকে ঢাকা-৯ আসনে ধানের শীষের মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।

বুধবার সন্ধ্যায় তিন জেলায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে খবর নিয়ে জানা যায়, এই তিনজনের মনোনয়নপত্র জমা হয়নি।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, “এটা তাদেরকে জিজ্ঞাসা করুন। এটা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমি এই বিষয়ে কিছু জানি না।”

আলাল ও সোহেল প্রত্যাশিত আসন পাননি বলে ক্ষুব্ধ ছিলেন। সেজন্য তারা প্রত্যয়নপত্রও নেননি বলে তাদের সমর্থকরা জানান।

মিন্টু বলেছেন, তার নির্বাচন করার ইচ্ছা ছিল না।

আবদুল আউয়াল মিন্টু তিনি বলেন, “আমার কখনোই নির্বাচন করার শখ ছিল না। পরিবারের মধ্যে আমার বাবা-ভাই নির্বাচন করেছেন। অতীতে আমি কখনও নির্বাচনে অংশ নিইনি।

“এখন যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই। দলের নেতা-কর্মী-সমর্থকরা গ্রেপ্তার-মামলা-হয়রানির মুখে পড়ছে প্রতিনিয়ত। এরকম অবস্থায় আমি মনে করেছি, নির্বাচনে অংশগ্রহণের চেয়ে নির্বাচন পরিচালনায় আমার সময় ও অবদান রাখা উচিৎ।

“সেজন্য দলের বৃহত্তর স্বার্থে আমি নির্বাচন না করে দলের নির্বাচনের কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়ার সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কারণ নির্বাচন পরিচালনায় দলে এখন পর্যাপ্ত ও অভিজ্ঞ লোকজনের অভাব রয়েছে। দলও মনে করে যে, নির্বাচন পরিচালনার কাজে আমি সম্পৃক্ত থাকি।”

গণমাধ্যমে খবর বেরিয়েছে, ফেনী-১ আসনে খালেদা জিয়ার বিকল্প প্রার্থী হিসেবে ভোট করতে চাইছিলেন মিন্টু। কিন্তু ওই আসনে প্রত্যয়ন দেওয়া হয় যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মজনুকে। বিষয়টি মেনে নিতে পারেননি তিনি। এছাড়া মিন্টুর দ্বৈত নাগরিকত্ব নিয়ে জটিলতাও রয়েছে।

মিন্টু বলেন, “আমরা মনোনয়নপত্র দাখিল নিয়ে যেসব খবর গণমাধ্যমে আসছে, তা ঠিক নয়। এ নিয়ে মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে একটি মহল।”

হাবিব-উন নবী খান সোহেল সোহেল ২০০৮ সালের নির্বাচনে ঢাকা-৮ (রমনা) আসনে প্রার্থী ছিলেন। এবারও তিনি ওই আসনেই নির্বাচন করতে চাইছিলেন। কিন্তু তাকে দেওয়া হয় ঢাকা-৯ আসন।

তার ঘনিষ্ঠ একজন  বলেন, “সোহেল ভাই ঢাকা-৮ এ গত ৩/৪ বছর একটানা কাজ করছেন। এলাকায় আছেন। তাকে দেওয়া হয়েছে ঢাকা-৯, যেখানে তিনি পরিচিত নন।”

কারাবন্দি সোহেলের পক্ষে মনোনয়ন বোর্ডে উপস্থিত থাকা তার মেয়ে জান্নাতুল ইলমি সূচনা ফেইসবুকে লিখেছেন, “ঢাকা-৮ ছাড়া আর কোথাও থেকে নির্বাচন করবেন না বাবা। শেষ সিদ্ধান্ত, আপস না।”

ঢাকা-৮ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে। ঢাকা-৯ আসনে সোহেলের সঙ্গে আফরোজা আব্বাস ও হাবিবুর রশীদকেও প্রত্যয়ন দেওয়া হয়।

দলের মহাসচিবের পাশে মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল গতবার ঢাকার মোহাম্মদপুর নির্বাচন করা আলাল এবার চেয়েছিলেন বরিশাল-৫ (সদর) আসনে প্রার্থী হতে। কিন্তু সেখানে মজিবুর রহমান সরোয়ারকে দিয়ে আলালকে দেওয়া হয় বরিশাল-২ আসন।

আলাল জিজ্ঞাসায় বলেন, “আমি ব্যক্তিগত নীতিবোধ থেকে মনোনয়নপত্র দাখিল করিনি। কারণ আমাদের নেত্রী মিথ্যা মামলায় কারাগারে, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরকারের প্রতিহিংসায় আজকে বিদেশে নির্বাসিত। এরকম অবস্থায় আমি নির্বাচন করতে স্বস্তিবোধ করছি না।”

তবে দলের নির্বাচন পরিচালনার প্রক্রিয়ার সঙ্গে কাজ করবেন বলে জানান আলাল।

দশম সংসদ নির্বাচন বর্জনকারী বিএনপি ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে।