কৃষি, কৃষক, শিল্পায়ন ও শ্রমিকদের নিয়ে ঐক্যফ্রন্টের পরিকল্পনা

দেশের কৃষি, কৃষক, শিল্পায়ন এবং শ্রমিকের অগ্রগতির জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। সোমবার নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারে এসব পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করা হয়।

সংগঠনটি বলছে, ক্রমাগত কমতে থাকা কৃষি ভর্তুকি উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়িয়ে সার বীজ এবং অন্যান্য কৃষি উপকরণ সহজলভ্য করা, সরকারি ব্যাংক থেকে খুব সামান্য সুদে কৃষকদেরকে ঋণ দেয়া, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর ঋণের একটা নির্দিষ্ট অংশ কৃষকদের মধ্যে বিতরণে বাধ্য করা হবে, ভূমিহীনদের মধ্যে সরকারের খাস জমি বন্টন করা হবে, ভূগর্ভস্থ পানি কম ব্যবহার করতে হয় এমন ফসল উৎপাদনে এবং অর্গানিক পদ্ধতিতে চাষে কৃষককে প্রশিক্ষণ এবং প্রণোদনা দেয়া হবে, সেচের সুবিধার্থে পদ্মা ব্যারাজ নির্মানে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়া হবে, সরকার স্থানীয় ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষিগুদাম ও হিমাগার নির্মাণে ভর্তুকী/ অনুদান দেবে। উৎপাদকদের বিপননক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য প্রত্যেক উপজেলা ভিত্তিক ন্যায্য বিপণন সমবায় স্থাপিত হবে, উৎপাদকগণ সরাসরি এই বিপণন ব্যবস্থার সাথে যুক্ত থাকবেন, এতে মধ্যস্বত্বভোগী সিন্ডিকেটের উপদ্রব কমবে।

ইশতেহারের ১৪ দফায় আরো বলা হয়, ক্রমবর্ধমান নগর আবাসন শিল্পায়নের ফলে আবাদযোগ্য ভূমি ও জলাশয় এর উদ্বেগজনক হ্রাসের হার কমানোর জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া হবে, কৃষিভিত্তিক শিল্প স্থাপনে সরকারি প্রণোদনা থাকবে, স্থানীয় ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি গুদাম ও হিমাগার নির্মাণ এ সরকার প্রণোদনা দেবে, জলমহাল এবং হাওরের ইজারা সম্পূর্ণ বাতিল করে মৎস্যজীবী ও দরিদ্র জনগণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

ঐক্যফ্রন্টের ইশতেহারের ১৫ দফা হচ্ছে- শিল্পায়ন বিষয়ে। এতে উল্লেখ করা হয়, শিল্পায়নের জন্য ভৌত অবকাঠামোগত সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হবে, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ও প্রকল্পের দীর্ঘসূত্রিতা নিরসন করার জন্য ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা এবং আইন ও বিধিমালা সহজ করা হবে, আলোচনার মাধ্যমে ইউরোপ-আমেরিকায় গার্মেন্টসে কোটা বৃদ্ধি করা হবে। গার্মেন্টস পণ্যের মুল্য বৃদ্ধিতে জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হবে। বিভিন্ন দেশের স্থানান্তর করা গার্মেন্টস শিল্প বাংলাদেশে স্থাপনে প্রণোদনা দেয়া হবে, কৃষিনির্ভর এবং শ্রমঘন শিল্পে বিশেষ উৎসাহ দেয়া হবে, দেশের দারিদ্র্যপ্রবণ জেলাগুলোতে শিল্পায়নে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে, বিভিন্ন দেশের শিল্প স্থাপন উৎসাহিত করার জন্য আরও এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন স্থাপন করা হবে, দেশে-বিদেশে পাট পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধিতে ব্যবস্থা নিয়ে আরও পাট শিল্প স্থাপন করা হবে। নতুন শিল্প স্থাপনের ক্ষেত্রে শ্রমিকদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা হবে।

শ্রমিক কল্যাণে নানাবিধ পরিকল্পনার স্থির করেছে ঐক্যফ্রন্ট। তাদের ইশতেহারের ১৬ দফায় বলা হয়, শ্রমিকের স্বার্থে দু’বছরের মধ্যেই গার্মেন্টস শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার টাকা করা হবে, সকল খাতের শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি নির্ধারণ করা হবে, খন্ডকালীন এবং পূর্ণকালীন গৃহকর্মীদের কর্মস্থলে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে এবং তাদের কাজের জন্য উপযোগী নীতিমালা তৈরি করা হবে, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিযুক্ত শ্রমিকদের কল্যাণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে, সকল ক্ষেত্রে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার নিশ্চিত করা হবে, গার্মেন্টসসহ অন্যান্য সকল শিল্প এলাকায় শ্রমিকদের জন্য বহুতল ভবন নির্মাণের মাধ্যমে আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে, স্বাস্থ্যবীমার মাধ্যমে শ্রমিকগণ মাসে ২৫০ টাকার প্রিমিয়ামের মাধ্যমে সকল চিকিৎসা সুবিধা পাবেন। প্রিমিয়ামের ১০০ টাকা দেবেন শ্রমিক নিজে এবং ১৫০ টাকা দেবেন মালিকপক্ষ। ওষুধের অর্ধেক মুল্য শ্রমিককে বহন করতে হবে। রোগ নির্ণয়, অপারেশন ও হাসপাতালে ভর্তি বাবদ শ্রমিকের অন্য কোনো খরচ লাগবে না।

রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীর কনফারেন্স রুমে এ ইশতেহার পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।

ইশতেহার ঘোষণার পূর্বে সূচনা বক্তব্যে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশের মালিক জনগণ। আগামী নির্বাচন হলো জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠার নির্বাচন। নির্বাচনে জিতে এই রাষ্ট্র মেরামত করতে হবে।

সমাপনী বক্তব্যে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাম্প্রতিককালের রাজনীতিতে এটি একটি বৈপ্লবিক ইশতেহার। এই ইশতেহারে জনগণের সকল আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয়েছে।