আন্তর্জাতিক নৌপরিবহনে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা সরকারের

নৌ-যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থানকে কাজে লগিয়ে আন্তর্জাতিক পরিবহন সেক্টরে যুক্ত হওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে দেশে বিকাশমান অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে গণমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের সরকারে দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক এবং টানা তিনবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রথমবারের মতো মন্ত্রিসভায় এসেছেন, দায়িত্ব পেয়েছেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের।

সাক্ষাৎকারে নিজ মন্ত্রণালয়ের ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা, নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, নদীরক্ষা, দুর্নীতি দমন, সংসদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সদস্যদের ভূমিকাসহ বিভিন্ন বিষয়ে মতামত তুলে ধরেছেন তিনি।

নিজের দায়িত্ব সস্পর্কে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার যে এজেন্ডা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছে আমি সেই সরকারের একজন সদস্য। সরকারের সেই এজেন্ডা বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না তা দেখা এবং নির্ভুল ও সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা আমার দায়িত্ব।

বাংলাদেশের নৌ সেক্টরের গুরুত্ব তুলে ধরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নৌ-সেক্টরের উন্নতি করতে পারলে আমরা জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে লাভবান হতে পারি। আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। পূর্ব ও পশ্চিমের মধ্যে গোল্ডেন অবস্থানে। অতীতে দীর্ঘদিন ধরে যে সরকারগুলো এসে গেছে তারা এদিকে নজর দেয়নি। আমরা এখন পর্যন্ত একটি আন্তর্জাতিক সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে পারিনি। চট্টগ্রামে যে সমুদ্রবন্দর রয়েছে সেটা কর্ণফুলি নদীতে। এর ফলে মাদার ভ্যাসেলগুলো বন্দরে আসতে পারে না। লাইটার জাহাজ দিয়ে বন্দরের কাজ চলছে। এজন্য শেখ হাসিনা সরকার কিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে পায়রাতে টার্মিনাল, মাতার বাড়ি বন্দর উল্লেখযোগ্য। নোয়াখালীতে একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়েছে। সেখানে একটি বিমানবন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা আছে সরকারের। সেখানে একটি সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করতে পারলে চট্টগ্রাম বন্দরের চাপ কমে যাবে। সরকারের এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন হলে আমরা আন্তর্জাতিক পরিবহন সেক্টরে যুক্ত হয়ে যাবো।

নদীরক্ষায় পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, আমাদের নদীগুলো দীর্ঘদিন ড্রেজিং হয়নি। যার ফলে নদীর নাব্যতা নষ্ট হয়েছে, নদী মরে যাচ্ছে। ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করা হবে। নদীর পার দখল হয়েছে এর ফলে ধীরে ধীরে নদী সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ কিন্তু এখন নদী রক্ষার জন্য আমাদের যুদ্ধ করতে হচ্ছে। নদীর তীর উদ্ধারে অভিযান চালাতে হচ্ছে। এই অভিযান অব্যাহত রেখে নদীর তীর দখলমুক্ত করা হবে। আমরা নদীকে কাজে লাগাতে পারিনি। শেখ হাসিনার সরকার আমাদের সমুদ্রসীমার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করেছে। এখন সমুদ্রকে কাজে লাগাতে হবে। নদী ও সমুদ্রকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব। ভূ-রাজনীতির ক্ষেত্রেও নদী ও সমুদ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।

জাতীয় সংসদে ১৪ দলের শরিক দলগুলোর সসদস্যদের ভূমিকা প্রসঙ্গে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, জনগণ সংসদে আমাদের নির্বাচিত করেছে দেশের পক্ষে, মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য। সংসদে দেশের পক্ষে, মানুষের পক্ষে কথা বলার জন্য সরকারি দল বা বিরোধী দল বলে কোনো কথা নেই। প্রয়োজন ছাড়া সরকারের বিরোধিতা করা বা অপ্রয়োজনীয়ভাবে সরকারের সাফাই গাওয়ার দরকার নেই। এখানে নির্বাচিতরা জনগণের পক্ষে কথা বলবে এটাই শেখ হাসিনার রাজনৈতিক দর্শন। ১৪ দলের শরিক যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা তো সরকারে ছিলেন, জোটে আছেন। তবে জোটে থাকলে যে সরকারের সমালোচনা করা যাবে না সেটা না। আবার বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা সেটাও সঠিক না।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি বন্ধ প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেননি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তার যে সাহসী বক্তব্য সেটাই আমাদের শক্তি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বে সৎ, যোগ্য ও ডায়নামিক লিডার হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছেন। তিনি কখনও দুর্নীতির সঙ্গে আপস করেন না। তিনি দুর্নীতিকে জিরো টলারেন্স বলেছেন। আমার মন্ত্রণালয়সহ যেখানেই হোক না কেন দুর্নীতি দমন কমিশন যথাযথ ভূমিকা পালন করবে, আমাদের কোনো বাধা নেই। আমি চাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাওয়া ও প্রত্যাশা পূরণ করার ক্ষেত্রে দুর্নীতি দমন কমিশন সঠিক ভূমিকা পালন করুক।