মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলনে শেখ হাসিনা

বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানসহ ছয় শতাধিক নীতি-নির্ধারক, চিন্তাবিদ, ব্যবসায়ীসহ সমাজের অগ্রগামী শ্রেণীর প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে জার্মানিতে চলছে ৫৫তম মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন। এতে অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও।

বৃহস্পতিবার এ সম্মেলন শুরু হলেও শুক্রবার দুপুরে মিউনিখের হোটেল বাইরিশার হফে সম্মেলন আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন নিরাপত্তা সম্মেলনের চেয়ারম্যান ভুলফগ্যাং ইশিংগার।

স্নায়ুযুদ্ধের পটভূমিতে ১৯৬৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে এ সম্মেলন বিশ্ব নিরাপত্তা ও বিভিন্ন পরিবর্তনের প্রেক্ষিত নিয়ে আলোচনা করে আসছে। গত পাঁচ দশকে আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা নীতি নিয়ে বিতর্কের জন্য মিউনিখ নিরাপত্তা সম্মেলন নেতৃস্থানীয় ভূমিকা রেখে চলেছে।

২০১৭ সালে মিউনিখ সম্মেলনে যোগ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের কোনো রাষ্ট্র বা সরকারপ্রধানের অংশগ্রহণ ছিল সেবারই প্রথম।

তিন দিনের এ নিরাপত্তা সম্মেলনে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা প্রতিনিধিরা মানবসভ্যতার বর্তমান ও আগামী দিনের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের ভবিষ্যৎ এবং ডিফেন্স পলিসি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি থাকবে বাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার বিষয়টিও।

এছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের মতো বিষয় এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তায় প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের বিষয়ও আলোচনায় থাকছে এবারের সম্মেলনে।

মিউনিখে স্বাস্থ্যসেবা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মেরকেল, মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসিসহ ইউক্রেন, রোমানিয়া, আফগানিস্তান ও রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট, কাতারের আমীর, চীনের কমিউনিস্ট পার্টির পলিটব্যুরোর সদস্যসহ বিভিন্ন দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন।

৪০টিরও বেশি দেশের পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ন্যাটোসহ বিভিন্ন জোট ও সংস্থার প্রতিনিধিরাও সম্মেলনে অংশ নিয়েছেন। এছাড়া রাশিয়া, ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, ফিলিপিন্সসহ বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা অংশ নিয়েছেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে জার্মানি ও যুক্তরাজ্যের প্রতিরক্ষামন্ত্রীও বক্তব্য দেন।

সম্মেলনে অংশগ্রহণের মাঝে ২০১৭ সালের নোবেল বিজয়ী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেইন টু অ্যাবোলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস-আইসিএএনের নির্বাহী পরিচালক বিয়াট্রিস ফিন এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) প্রসিকিউটর ফাতোও বেনসুদা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন।

পাশাপাশি সিমেন্স এজির প্রেসিডেন্ট ও সিইও জোয়ে কাইজার এবং ভেরিডোস জিএমবিএইচের প্রধান নির্বাহী হ্যান্স উলফগাং কুনজ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। ভেরিডোস জিএমবিএইচ বাংলাদেশে ই-পাসপোর্ট বাস্তবায়ন করছে।

এ সফরে বাংলাদেশে বিদ্যুৎ খাতে বড় বিনিয়োগের প্রস্তাবকারী সিমেন্সের সঙ্গে জয়েন্ট ডেভেলপমেন্ট চুক্তি হতে পারে। ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের প্রেসিডেন্ট বোর্জ বে ন্ডি এবং জিগসর সিইও জারেড কোহেনের দেয়া যৌথ নৈশভোজেও প্রধানমন্ত্রীর অংশ নেয়ার কথা রয়েছে।

আজ ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যাজ এ সিকিউরিটি থ্রেট’ শীর্ষক একটি প্যানেল আলোচনায় যোগ দেবেন শেখ হাসিনা। নিরাপত্তা সম্মেলনে যোগদান শেষে ১৭ থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি আবুধাবি সফর করবেন প্রধানমন্ত্রী। সংযুক্ত আরব আমিরাতে চতুর্দশ আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা প্রদর্শনীতে (আইডিইএক্স-২০১৯) অংশ নেয়ার পাশাপাশি দেশটির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন তিনি।