‘ডাকসু নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজে রাজনীতির সুবাতাস বইছে’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু ) নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজে রাজনীতির একটি সুবাতাস বইতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন,‘আগামীকাল ডাকসু নির্বাচন। এই নির্বাচনে ছাত্রদল অংশগ্রহণ করেছে আমি এটাকে স্বাগত জানাই। কারণ ২৮ বছর ডাকসু নির্বাচন হয়নি। আরেকটি ক্যান্সারের সৃষ্টি করা হয়েছিল। আমাদের দেশে যে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ গড়ে ওঠার কারখানা সেই কারখানা বন্ধ করে দিয়েছিল। তবে এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে ছাত্রসমাজে রাজনীতির একটি সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। এটা যদি চালু রাখা যায় তাহলে আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে আমরা ছাত্ররাজনীতির ব্যক্তি গড়ে তুলতে পারবো।’

রবিবার (১০ মার্চ) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির স্বাধীনতা হলে নবগঠিত জাতীয়তাবাদী কৃষকদলের আহ্বায়ক কমিটির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এমন সময় কৃষক দলের নেতৃত্বে পেলেন যখন দেশে ভয়াবহ সংকট চলছে। এ সংকট শুধু বিএনপির নয়, গোটা জাতির। একটি বণ্য হাতি যখন একটি ক্ষেতে ঢুকে সব ফসল নষ্ট করে তেমনি বাংলাদেশে একটি দানব ঢুকে সমস্ত অর্জন ধ্বংস করে ফেলেছে। একেবারে লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে। আমাদের যা অর্জন, আমাদের চিন্তা-ভাবনা ও মূল্যবোধ। আমরা যে ধারণার উপর ভর করে সারাটা জীবন গণতন্ত্রের জন্য আন্দোলন করেছি, সংগ্রাম করেছি, লড়াই করেছি, একটি মুক্তিযুদ্ধ করে রাষ্ট্র গঠন করেছি সেই সব কিছু এই দানব ধ্বংস করে ফেলেছে।’

দলীয় নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলার বর্ণনা দিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘গায়েবি মামলা কেউ দেখেছে বা শুনেছে বলে আমার জানা নেই। আমাদের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা সংখ্যা ৯৯ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আসামির সংখ্যা এটি ইংরেজিতে বলতে গেলে বলতে হয় ২.৫ মিলিয়ন অর্থাৎ ২৫ লাখ। ওরা(ক্ষমতাসীনরা) চিন্তাও করতে পারে না এমন অবস্থা হয়েছে দেশের।’

দলের চেয়ারপারসন বেগম জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ জানিয়ে মির্জা আলমগীর বলেন,‘একটি ভুয়া, মিথ্যা মামলায় বেগম খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের সাজা দেয়া হলো। নিম্ন আদালতে সেই সাজাকে বাড়িয়ে ১০ বছর করলো। বেগম জিয়া এখন অত্যন্ত অসুস্থ। তিনি বসতে পারেন না। তাকে বিছানা থেকে তুলতে একজন সাহায্যকারীকে দরকার হয়। এটা মানব অধিকারের একটি সুস্পষ্ট লংঘন। এই সরকারের বিরুদ্ধে এই রকম আইন লংঘনের ঘটনা আমি যদি বলতে থাকি সারাদিন বলতে পারেবো।’

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন,‘ডিসেম্বরে একটি সংসদ নির্বাচন হয়েছে। সেই নির্বাচনে আমরা জোট গঠন করে, ঐক্য ফ্রন্ট গঠন করে অংশগ্রহণ করেছিলাম। চিন্তা করেছিলাম জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি আন্দোলনের মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করবো। কিন্তু তারা একটি ক্রিমিনাল মাইন্ড নিয়ে গোটা নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করেছে।’

নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন করার সময় আমরা বলেছিলাম একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করা হোক। রাষ্ট্রপতির কাছে আমরা বলেছিলাম কিন্তু আওয়ামী লীগ তাদের একেবারে পোষ্যদের নিয়ে এ নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে। আর তারা সম্পূর্ণ আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে কাজ করেছে।’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যা করেছে এটা নজিরবিহীন। তারাই নির্বাচনের ব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংস করে ফেলেছে। তাই দেশের জনগণের এখন নির্বাচনের প্রতি আস্থা নেই। যার ফলে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনগণ ভোট দিতে যায়নি। উপজেলা নির্বাচনে জনগণের আগ্রহ নেই। আমরা পত্র-পত্রিকায় দেখতে পাচ্ছি ইতোমধ্যে ৭০-৮০ জন প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আমি অনেককে বলতে শুনেছি, প্রশাসন এখন তাদেরকে (ক্ষমতাসীনদের) বলছে আপনাদেরকে আমরা জয়ী করেছি, নির্বাচন আমরা করেছি। এখন যা করার আমরা করবো, আপনারা চুপ করে বসে থাকেন। এখন এই অবস্থা দাঁড়িয়েছে। মানুষ এখন কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে?’

এসময় তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সবসময়ই গণতন্ত্র ধ্বংসকারী একটি দল। ৭২ সালে তারা ক্ষমতায় আসার পর নিজেদের সংবিধান নিজেরাই ধ্বংস করেছে। তারা মানুষের অধিকারগুলোকে কেড়ে নিয়েছে। তখন ‘রক্ষীবাহিনী’ নামে একটি দল ছিল। যারা গণতন্ত্রকামী ব্যক্তিদেরকে হত্যা করেছে, নির্যাতন করেছে। তারা মুখে মুক্তির কথা বললেও গণতন্ত্রে বিশ্বাস করেন না, তারা সব সময় ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থাকে বিশ্বাস করে। সবচেয়ে মারাত্মক ক্ষতি তারা যেটা করছে বিশ্বাস আস্থা নষ্ট করে ফেলছে। তারা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কি দিচ্ছে?  মিথ্যাচার ও ভোট ডাকাতির মাধ্যমে যারা ভয়াবহভাবে দুর্বৃত্ত তাদেরকে সমাজে প্রতিষ্ঠিত করছে। তারা ইয়াবার বিরুদ্ধে অভিযান করছে, কিন্তু যিনি ইয়াবা সম্রাট তিনি তাদের দলের একটি দায়িত্বে আছেন এবং তিনি বাহিরে আছেন। অথচ আমাদের নিরাপরাধ নেত্রী জেলের ভিতরে আছেন। এখন আমাদের দলের একটাই দায়িত্ব বেগম জিয়াকে মুক্ত করা এবং আমাদের নেতা তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনা।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও কৃষক দলের আহ্বায়ক শামসুজ্জামান দুদু’র সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিনের সঞ্চালনায় সভায় কৃষক দলের যুগ্ম-আহবায়ক তকদির হোসেন মোহাম্মদ জসিম, নাজিম উদ্দিন মাস্টার, জামাল উদ্দিন খান মিলন, সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জিয়াউল হায়দার পলাশ,এস কে সাদি,অ্যাডভোকেট নাসির হায়দার, মাইনুল ইসলাম, মো. আলিম হোসেন, অধ্যক্ষ সেলিম হোসেন, মিয়া মো.আনোয়ার, বায়জিদ বোস্তামী, মোজাম্মেল হক মিন্টু, কে এম রকিবুল ইসলাম রিপন,আব্দুর রাজি,এম জাহাঙ্গীর আলম,কৃষিবিদ মেহেদী হাসান পলাশ,শরিফুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।