সেই হাসির জন্য সাংবাদিকদের দুষলেন শাহজাহান খান

জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালকের রেষারেষির জেরে গতবছর রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় সারাদেশ যখন উত্তাল, ঠিক তখনই সচিবালয়ে এক হাসিতে আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন তৎকালীন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাহজাহান খান। সেই হাসির ব্যাখা দিয়েছেন সাবেক এই মন্ত্রী নিজেই। তিনি দাবি করেছেন, তার হাসার জন্য সাংবাদিকরা উস্কানি দিয়েছেন ।

সোমবার (১৫ এপ্রিল) সিরডাপ মিলনায়তনে ‘নিরাপদ সড়ক ও মাদকমুক্ত সমাজ গঠন’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এ দাবি করেন। বৈঠকের আয়োজন করে কেন্দ্রীয় ১৪ দল।

আলোচনা সভার প্রায় শেষ ভাগে এসে বক্তব্য রাখা শুরু করেন সাবেক এ নৌপরিবহনমন্ত্রী। তিনি তার বক্তব্যে তাকে নিয়ে বিভিন্ন সময় তৈরী হওয়া সমালোচনার একে একে জবাব দেন। তিনি দাবি করেন, তাকে নৌ-পরিবহন মন্ত্রী করার পর অনেকে মন্তব্য করেছিলেন, ‘যে লোকের হাতে পরিবহন সেক্টর জিম্মি তাকেই করা হচ্ছে মন্ত্রী!’ কিন্তু তিনি সমালোচকদের এমন তীর্যক কটুক্তি ভুল প্রমাণ করেছেন বলে দাবি করেন । উদাহরণ হিসেবে তার দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত কোনো লঞ্চ ডুবিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি এমন পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

শাহজাহান খান বলেন, ‘নিরাপদ সড়কের জন্য যখন কমিটি গঠনের পর অনেকেই বলেছে বিতর্কিত লোককে দিয়ে কমিটি করা হয়েছে। এই যে এখানে উপস্থিত রয়েছেন সৈয়দ আবুল মাকসুদ সাহেব, তিনিই সর্বপ্রথম আমার বিরুদ্ধে কথা বলেছিলেন। আমরা নিরাপদ সড়কের জন্য ১১১টি সুপারিশ রেখেছি। এগুলো যখন প্রকাশ হবে মাকসুদ সাহেব আপনিই বলবেন বিতর্কিত এ লোকটি কী করেছে। আপনারা তো এর আগেও নিরাপদ সড়কের জন্য দুইটি কমিটির সুপারিশ দেখেছেন, এবারের টাও দেখবেন।’

এ বলে বক্তব্য শেষ করেন শাজাহান। তখন সঞ্চালকের দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলের সমন্বয়ক এবং আলোচনার সঞ্চালক শাহজাহান খানকে উদ্দেশ করে বলেন, ‘আপনাকে (শাজাহান) কেউ বিতর্কিত বলেনি। কেউ হয়তো আপনার হাসিকে বিতর্কিত বলে থাকতে পারেন।’

এরপরই আবারও কথা বলা শুরু করেন শাহজাহান খান। তিনি বলেন, ‘আজ আমাকে হাসির ব্যাখা দিতেই হবে। আমি তো এমনিতে বেশি হাসি, প্রোবলেম হলো এইটা- হাসা যদি দোষ হয়ে থাকে তার জন্য আমি দুঃখিত। কিন্তু কি প্রেক্ষাপটে আমি হাসছি? সেটাও সাংবাদিকদের প্রশ্নের কারণে। দুর্ঘটনার কথা তখন আমি জানিও না। ৬৮ বছর পর আমরা মংলা বন্দরে ক্রেন দিচ্ছি, এই সংবাদে আমরা আনন্দিত। সেখানে একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দু’জন স্কুল শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে আপনি কি বলবেন? আপনাদের অনুরোধ করবো পুরো ফুটেজটি আবারও দেখার জন্য। আমি উত্তরে বললাম দুর্ঘটনার জন্য যদি কোন ড্রাইভার দায়ী হয় আমরা তার কোনো প্রতিবাদ করবো না। তখন আরেকজন সাংবাদিক বললো, আপনার আস্কারা পেয়ে ড্রাইভাররা এমন (বেপরোয়া) হয়েছে! তখন স্বাভাবিক ভাবে একটু হাসি আসে। আর আমি একটু হাসিও। আসলে আমার হাসার জন্য উস্কানির দিয়েছে এই সাংবাদিক বন্ধুরা।’

গতবছর ২৯ জানুয়ারি জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের চালকের রেষারেষির জেরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এরপরই নিরাপদ সড়কের দাবিকে স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে আসে।

বৈঠকে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান বিচারপতি মমতাজ উদ্দিন, ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি খন্দকার এনায়েতুল্লাহ, বিশিষ্ট সাংবাদিক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, জাতীয় পার্টির (জাপা) মহাসচিব মশিউর রহমান রাঙা, সাবেক নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, বাংলাদেশ জাতীয় জোটের (বিএনএ) চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সভাপতি হাসানুল হক ইনু, নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) সাধারণ সম্পাদক শিরিন আখতার, জাতীয় পার্টি (জেপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ শহিদুল ইসলাম, সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলীসহ অনেকে।