দরকষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন’

কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দরকষাকষি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে আওয়ামী লীগ নেতাদের এমন বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘দরকষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে সেটি আওয়ামী নেতারা নিজেরাই জানেন, আর না জানলে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন।’

মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, ‘আওয়ামী লীগের এক নেতা বলেছেন- খালেদা জিয়ার মুক্তি নিয়ে দরকষাকষি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আওয়ামী লীগের আরেক নেতা বলেছেন-৩০ এপ্রিলের মধ্যে জানা যাবে বিএনপি থাকবে কি থাকবে না। আওয়ামী নেতাদের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই-বেগম খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী হিসেবেই জনগণের নিকট প্রতিষ্ঠিত। সুতরাং তিনি কখনোই কোন অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি, কোন স্বৈরাচারের কাছেই আত্মসমর্পণ করেননি। দরকষাকষির দৃষ্টান্ত কার আছে সেটি আওয়ামী নেতারা নিজেরাই জানেন, আর না জানলে আপনাদের নেত্রীকে জিজ্ঞেস করুন।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতাদের সমালোচনা করে বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, ‘এরশাদের নির্বাচনে যে যাবে সে জাতীয় বেঈমান হবে বলে আপনার নেত্রী দরকষাকষি করে সেই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন। জাতীয় বেঈমানের মুকুট তিনি নিজেই নিজের মাথায় পরে ক্ষমতার হালুয়া-মোরব্বার ভাগ পেয়েছিলেন। কিভাবে একটি অবৈধ ও অসাংবিধানিক ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সঙ্গে দরকষাকষি করে ক্ষমতায় এসেছিলেন সেটিও নিশ্চয়ই আপনি ভুলে যাননি। অগণতান্ত্রিক সরকারের সাথে দরকষাকষি ও দেন-দরবারের ঐতিহ্য আওয়ামী লীগের, বিএনপি’র নয়।

রাষ্ট্রশক্তিকে ব্যবহার করে নির্দোষ গণতন্ত্র ও গণতন্ত্রের প্রতীক দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে যেভাবে বন্দি করে রাখা হয়েছে সেটিই ইতিহাসে কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেন রিজভী ।

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে সমাজে যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে তা ইতিহাসে সর্বকালের সকল রেকর্ড ভঙ্গ করেছে। স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী, গার্মেন্টস শ্রমিক, বাসের যাত্রী, গৃহবধু, মা-বোনসহ সমাজে এখন আর কেউ নিরাপদ নয়। ভোটারবিহীন সরকার, মধ্যরাতের ম্যান্ডেটবিহীন সরকারের কারণে বর্তমানে সামাজিক ভায়োলেন্স এতো তীব্র হয়েছে যে, বাংলাদেশ থেকে ‘সোশ্যাল ফ্রেব্রিক’ ভেঙে গেছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনী নীরব, অথবা এদের মদদদাতা হিসেবে কাজ করছে, অথবা নিজেরাই অপকর্মে মেতে উঠেছে। গোটা রাষ্ট্রকাঠামোই এখন ধ্বসে পড়ার উপক্রম হয়েছে।

অবৈধ মিডনাইট সরকার আইয়্যামে জাহেলিয়াতের মতো পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছে মন্তব্য করে রিজভী বলেন, ‘বর্তমানে সারা দেশে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা ধর্ষণ-নারী নির্যাতন-খুন-দখল ও গুমের উৎসবে মেতে উঠেছে। দেশে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। বিনা ভোটের সরকার কোন কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। সব কিছু এখন তাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। জনগণের ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় জনগণের প্রতি তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই।’

রিজভী অভিযোগ করেন, ‘সোনাগাজীর নুসরাতকে নিপীড়ন চালিয়ে তার মুখ বন্ধ করতে গায়ে আগুন দিয়ে বর্বর কায়দায় হত্যার ঘটনায় সেখানকার আওয়ামী লীগের মিডনাইট এমপি, আওয়ামী সভাপতি থেকে শুরু করে বড় বড় নেতারা জড়িত। তাদের সাথে সহযোগিতা করেছে এসপি থেকে থানার ওসি পর্যন্ত। ফলে তাদের এমপি-নেতা ও পুলিশ প্রশাসনকে জনরোষ থেকে বাঁচানোর জন্য এই ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করছে সরকার। সোনাগাজীর ঘটনার মতোই ক্ষমতাসীন দলের বেপরোয়া নেতা-কর্মীরা গোটা দেশকে ধর্ষণ উপত্যকায় পরিণত করেছে। নারীর প্রতি সহিংসতা এখন ইতিহাসে সর্বকালের সর্ব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। নারী নিপীড়ন ও খুন তাদের অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। ৭২-৭৫ এর চাইতেও এখন দেশের অবস্থা ভয়াবহ। প্রতিদিন একটির পর একটি লোম শিউরে ওঠার মতো ঘটনা ঘটলেও গণবিচ্ছিন্ন এই সরকারের কোনও বিকার নেই। এভাবে দেশ চলতে পারে না।’

ইস্টার সানডের প্রার্থনার সময় শ্রীলঙ্কায় তিনটি গির্জা ও তিনটি পাঁচতারা হোটেলে একযোগে বোমা হামলার জঘন্য, নিষ্ঠুর এবং পাশবিক ঘটনায় বিএনপির পক্ষ থেকে গভীর দুঃখ ও শোক প্রকাশ করে তিনি। বলেন, ‘গত মাসে নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে দুই মসজিদে হামলা এবং রবিবার শ্রীলঙ্কায় গির্জায় ও সোমবার পুত্তালুম জেলায় মসজিদে হামলা অত্যন্ত নিন্দনীয়, অনাকাঙ্খিত ও অগ্রহণযোগ্য। এ ধরনের ঘটনা বিশ্বভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও শান্তির অন্তরায়। যা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। কেবলমাত্র ধর্ম, বিশ্বাস, জাতি ও বর্ণভেদের কারণে এভাবে মানুষকে হত্যা করা যায় না। আর তা চলতে থাকলে মানবতা বিপন্ন হবে, তাতে কোন সন্দেহ নেই।’

‘আমরা (বিএনপি) শ্রীলঙ্কার জনগণ ও সরকারের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করছি। ইতোমধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও হতাহতদের জন্য শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন।’

সংবাদ সম্মেলনে দলটির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শাহিদা রফিক, নাজমুল হক নান্নু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ-দফতর সম্পাদক মুনির হোসেন উপস্থিত ছিলেন।