ছাত্রলীগের শোভন-রাব্বানীর পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকায় যেসব বিতর্কিতরা

ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের ভ্রাতৃপ্রতীম সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সম্মেলন হওয়ার এক বছর পূর্তি হচ্ছে আগামী ১১ মে। দায়িত্ব পাওয়ার প্রায় ১০ মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত কমিটি পূর্ণাঙ্গ করতে ব্যর্থ হয়েছেন সংগঠনের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন এবং সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ অভিভাবক শেখ হাসিনাও বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

এরপর ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ এবং সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসেনকে সঙ্গে নিয়ে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার নির্দেশ দেন। তারপরও দফায় দফায় বৈঠক করেও কোনো সুরাহা করতে ব্যর্থ হয়েছেন শোভন-রাব্বানী।

এরিমধ্যে ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটির যে খসড়া রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানী জমা দিয়েছেন সেখানে অনেক বিতর্কিতরাই ঠাঁই পেয়েছেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে। এমনকি যারা বিতর্কিত, স্থায়ী বহিস্কৃত, বিবাহিত, চাকুরিজীবী এবং মামলার আসামি তারাই নিজেদের অনুসারীদের কাছে বলে বেড়াচ্ছেন আগামী কমিটিতে তারা পদ পাচ্ছেন।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পূণাঙ্গ কমিটির খসড়া তালিকায় পদ পেয়ে গেছেন এমন আভাস দেয়া কিছু বিতর্কিত নেতাদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলার আসামী, বয়স বেশি, চাকুরীজীবি, মাদক ব্যবসা ও জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকা অভিযোগ রয়েছে। কেউ বা কোন নেতার কথিত স্ত্রী হিসেবে ব্যাপক আলোচিত। এসব বিতর্কিতরা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজওয়ানুল হক শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর হাত ধরে পদ পেতে যাচ্ছেন বলে আলোচিত হচ্ছেন।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নিকট ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটির যে খসড়া জমা দিয়েছেন তাতে এসব অভিযোগে অভিযুক্ত নেতা রয়েছে। বিভিন্ন মাধ্যমে এ নামগুলো ফাঁস হওয়া কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ থেকে শুরু করে সর্বত্র এখন এ নিয়ে আলোচনা চলছে।

পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া স্থান পাওয়া এসব বিতর্কিত নেতারা হলেন, বি.এম শাহরিয়ার হাসান (সৃজন ভূইয়া); তিনি অগ্রনী ব্যাংকের সিনিয়র অফিসার হিসেবে ২০১৮ সালের ৩০ এপ্রিল থেকে এখন পর্যন্ত কর্মরত, ছাত্রলীগ সভাপতির রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনের ঘনিষ্ট বন্ধু হিসেবে পরিচিত।

আরেফিন সিদ্দিক সুজন- ইয়াবা ব্যবসার জড়িত থাকার জন্য সূর্যসেন হলে নিজ কক্ষ সিলগালা ও হল থেকে বিতাড়িত।

খসড়া কমিটিতে সহ-সভাপতি পদ পেয়েছেন বলে দাবি করা জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্কিত একজন। তিনি বলেন, হাসানুজ্জামান আপন। অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নিজেকে জবি ছাত্রলীগের (শরীফ-সিরাজ) কমিটির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পরিচয় দিলেও তার কোনো পদ ছিল না। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বদিউজ্জামান সোহাগ এবং সিদ্দিকী নাজমুল আলম স্বাক্ষর করে ছাত্রলীগ থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। তার বয়স ৩১ পেরিয়েছে।

সাদিক খান- বিবাহিত, ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক রাব্বানীর সাথে ঘনিষ্ঠতার দরুন দীর্ঘদিন অনুপস্থিতির পর এই কমিটি আসার পর আবির্ভাব হবার অভিযোগ।

এছাড়া ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর ঘনিষ্ঠ হিসাবে পদ ভাগিয়ে নেয়ার জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা খালেদ হোসেন নয়ন। তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তার বয়স ৩৩ পেরিয়েছে বলেও জানা গেছে।

পদ পাওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন সামিহা সরকার। তার বাড়ি গাজিপুরের কালিয়াকৈর। সামিহা সরকারের নামেও রয়েছে বিতর্ক। তার বাবা সবুর সরকার কালিয়াকৈর বিএনপির সভাপতি এবং বিএনপি থেকে মনোনীত ওয়ার্ড কাউন্সিলর। তাছাড়া সামিয়া সরকার বিবাহিত বলেও প্রমাণ রয়েছে। সামিয়ার ২০১২ সালে বিয়ে হয় এবং ২০১৬ সালে সামিয়া তার স্বামী রাজীবুল ইসলাম রাজীবকে তালাক দেয়।

ইডেন কলেজ ছাত্রলীগের যুগ্ন আহবায়ক মুনমুন বৈশাখী৷ মুনমুন বৈশাখীর বাবার বিরুদ্ধে স্থানীয় পর্যায়ে জামায়াতের রাজনীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহমুদুন্নবী, যিনি মাদক মামলায় তিন মাস জেল খেটেছেন।

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির পদ-প্রত্যাশীদের দাবি এই সকল বিতর্কিতসহ কোন অছাত্র, বয়স্ক, বিতর্কিতদের যেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান দেয়া না হয়।

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক কৃষি শিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক বরকত হোসেন হাওলাদার। তার গ্রামের বাড়ি বরিশালে৷ তিনি দলীয় কোন্দলের জেরে শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের গণরুমে কিছু শিক্ষার্থীকে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখানোর দায়ে ২০১১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রত্ব হারান। পরবর্তীতে একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জার্নালিজমে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শেষ করেন। ছাত্রলীগের একটি বিশেষ মাধ্যমে জানা গেছে তিনিও এবার পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদ পাচ্ছে।

মাজারুল ইসলাম শামীম ছাত্রলীগের সোহাগ-জাকির কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক৷ তার বিরুদ্ধে ২০১৪ সালের ৫ ই জানুয়ারি নির্বাচনের সময় ছাত্রদলকে সুসংগঠিত করার অভিযোগ রয়েছে। শামীমের বাবা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে৷ তার বাবা বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনও করেন৷

কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক কমিটির উপ-সম্পাদক ছিলেন ইডেন কলেজের ছাত্রী সোহানী হাসান তিথী। নাম ছিল ইডেন কলেজ শাখা ছাত্রলীগেও। রাজপথে শ্রম ঘামের মূল্যায়ন পেয়েছেন তিনি।

উপ-সম্পাদক থাকা অবস্থায় বিয়ে করে হয়েছেন সংসারী। তাছাড়া গঠনতন্ত্র অনুসারে ছাত্রলীগ করার বয়সটাও পার হয়েছে তার। গল্পটা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু না! আদর্শিক নেতৃত্ব তৈরির পাঠশালা ছাত্রলীগের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফের ছাত্রলীগের নেত্রী হতে যাচ্ছেন সোহানী তিথী। দুদিন আগে ছাত্রলীগের যে প্রস্তাবিত কমিটি ফাঁস হয়ে সবার সামনে আসে এতে দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ পদে আসছেন নানা বিতর্কের জন্ম দেওয়া সোহানী হাসান তিথী। এ নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশার জন্ম নিয়েছে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মাঝে।