মেডিকেলে নিয়োগ দুর্নীতির প্রমাণ দিলেন ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএসএমএমইউ) ২০০ চিকিৎসকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের চিত্র প্রমাণসহ একটি ফেসবুক পোস্ট দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী। গতকাল সোমবার রাত ২টা ১১ মিনিটে পোস্টটি করেন তিনি।

রাব্বানী তার ফেসবুক পোস্টে মেডিকেল অফিসার নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণেরও আহ্বান জানান।

 

‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে প্রতিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে অতীত এর সকল ইতিহাস ভেঙে শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলনরত চিকিৎসকদের উপর ভিসি স্যারের প্রত্যক্ষ মদদে পুলিশ ও আনসার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলা অত্যন্ত দুঃখজনক। বাংলাদেশ ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে এই হামলার তীব্র নিন্দা জানাই।’

তিনি লিখেন, ‘আজকের এই হামলায় প্রায় ১৫ জন নবীন চিকিৎসক গুরুতর আহত হয়েছে। নবীন চিকিৎসকদের আন্দোলন ও হামলার খবর শুনে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। তাদের আন্দোলনের যৌক্তিকতার কারণগুলো শুনে আমারও মনে হচ্ছে, তাদের দাবি সঠিক।’

রাব্বানী আরও লিখেন, ‘বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০ জন মেডিকেল অফিসার নিয়োগ প্রক্রিয়ায় যে অনিয়ম ও স্বজনপ্রীতি হয়েছে, সেটা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। অবশ্যই এই পরীক্ষার রেজাল্ট বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণ করা উচিত বলে আমি মনে করি।’

কারণ হিসেবে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক উল্লেখ করেন:

১) ভিসি স্যার এর ছেলে পরীক্ষার্থী কিন্তু তিনি এই নিয়োগ কমিটির সভাপতি, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম পরিপন্থী।

২) কন্ট্রোলার স্যার এর মেয়ের জামাই পরীক্ষার্থী হওয়া সত্ত্বেও তিনি পরীক্ষার নিয়ন্ত্রক। এছাড়াও নিয়োগ কমিটির অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন যা স্বজনপ্রীতির মোড়কে দুর্নীতির নজিরবিহীন বহিঃপ্রকাশ।

৩) ডেন্টালের পরীক্ষার্থীর এমবিবিএস এর প্রশ্নে পরীক্ষা প্রদান।

৪) বয়সসীমা ৩২ বছর হওয়া সত্ত্বেও ৩২ বছরের ঊর্ধ্বে অনেকেই পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছেন এবং ৩৮ বছর বয়সী একজন লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন।

৫) রোল নং-৭১৩০৩ তে পরীক্ষা দিয়েছেন একজন ছেলে কিন্তু একই রোলে একজন মেয়েকে মেধা তালিকায় উত্তীর্ণ করা হয়েছে।

প্রশ্ন করে তিনি লেখেন, সাধারণ চিকিৎসকদের এই যৌক্তিক দাবিগুলোর সঠিক সমাধান না করে তড়িঘড়ি করে মৌখিক পরীক্ষার তারিখ নির্ধারণ করার উদ্দেশ্য কী? যৌক্তিক ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে লাঠিচার্জ করার কারণ কী?

পেস্টের শেষে রাব্বানী লেখেন, ‘বাংলাদেশ ছাত্রলীগ পরিবার সকল ন্যায্য দাবি ও যৌক্তিক আন্দোলনের সাথে ছিল এবং থাকবে।’

এদিকে ২০০ চিকিৎসকের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি ও নানা অনিয়মের অভিযোগে আন্দোলনের পর কর্তৃপক্ষ আজ মঙ্গলবার দুপুরে নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য কনক কান্তি বড়ুয়া। তিনি বলেন, ‘ভাইভা স্থগিত করা হয়েছে। এ বিষয়ে সিন্ডিকেট বোর্ডে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

বেশ কয়েকদিন ধরে লিখিত পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগে বিএসএমএমইউর ২০০ মেডিকেল অফিসার নিয়োগ পরীক্ষার ফল বাতিল ও উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন করে আসছেন পরীক্ষার্থীরা।

গত ২০ মার্চ অনুষ্ঠিত ওই পরীক্ষার ফলাফল ১২ মে প্রকাশের পরপরই তাতে অনিয়মের অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ শুরু করেন শতাধিক চিকিৎসক।

তাদের অভিযোগ, ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে নজিরবিহীন অনিয়ম হয়েছে। উপাচার্য ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকসহ তাদের স্বজনদের নিয়োগ দিতে ফলাফল টেম্পারিং করা হয়েছে।