কেন উত্তপ্ত সংসদ, আড়াই মিনিটের বক্তব্যে কী বলেছিলেন রুমিন?

সদ্যই বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসন থেকে এমপি হিসেবে শপথ নিয়েছেন দলটির সহ-আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা। গত রবিবার শপথ নেয়ার দুদিনের মধ্যেই গতকাল মঙ্গলবার সংসদে দাঁড়িয়ে তার যোক্তিক বক্তব্যে গোটা রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়ে গেছে।

ওইদিন স্পিকার শিরিন শারমিন চৌধুরী তার জন্য ২ মিনিট সময় বেঁধে দেন। শুভেচ্ছা বক্তব্যের শুরুতেই রুমিন ফারহানা বলেন, ‘আজ এমন একটি সংসদে দাঁড়িয়ে জনগণের কথা বলতে এসেছি, যে সংসদ জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়।’

তার এই প্রথম বাক্যটির পরই সংসদে উপস্থিত ক্ষমতাসীন দলের এমনপিরা ‘না না, মানি না মানি না’ বলে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। এমনকি রুমিনের এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করার দাবি জানান রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

প্রায় আড়াই মিনিট মহান সংসদে দাঁড়িয়ে জনগণ ও গণতন্ত্রের কথা বললেও সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিদের চিৎকার, চেঁচামেচি ও প্রতিবাদে রুমিনের রুমিনের বক্তব্য কেউই ভালো করে শুনতে পারেননি। এসময় স্পিকার বারবার সরকারদলীয় মন্ত্রী-এমপিদের উদ্দেশ্যে বলছিলেন- ‘আপনারা ধৈর্য ধরুন, শান্ত হোন’। কিন্তু স্পিকারের কথায়ও কেউ কর্ণপাত করছিলেন না।

পাঠকের জন্য রুমিন ফারহানার আড়াই মিনিটের বক্তব্যটি হুবহু তুলে ধরা হলো:

আজকে সংসদে আমার প্রথম দিন। যে কোনো রাজনীতিবিদের মতোই সংসদে আসা, সংসদে দেশের কথা, মানুষের কথা বলা আমার স্বপ্ন ছিল। কিন্তু আমার দুর্ভাগ্য, আমি এমন একটি সংসদে প্রতিনিধিত্ব করছি, যেই সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। নির্বাচনের পরপরই যদি আপনারা টিআইবির রিপোর্ট দেখেন, যদি আপনারা বিদেশি গণমাধ্যম দেখেন, যদি আপনারা বিদেশি পর্যবেক্ষকদের দেখেন, যদি আপনারা নির্বাচন কমিশনের রিপোর্ট দেখেন, আপনারা দেখবেন এই সংসদটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত নয়। সুতরাং আমি খুশি হবো যদি এই সংসদের মেয়াদ আর একদিনও না বাড়ে।

মাননীয় স্পিকার আমি এমন একটি সংসদে দাঁড়িয়ে আছি যেই সংসদে তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী, আপসহীন নেত্রী, গণতন্ত্রের জন্য যিনি বারবার কারাবরণ করেছেন, বাংলাদেশের মানুষের, গণমানুষের নেত্রী, যিনি জীবনে কোনো দিন, কোনো আসন থেকে কোনো নির্বাচনে পরাজিত হননি- সেই বেগম খালেদা জিয়া এই সংসদে নেই। তাকে পরিকল্পিতভাবে, একটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মিথ্যা মামলায় আজকে কারাগারে ১৬ মাসের অধিক সময় আটকে রাখা হয়েছে। একজন আইনজীবী হিসেবে আমি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই যে, বেগম খালেদা জিয়ার মামলার যে ম্যারিট, তার শারীরিক অবস্থা, তার সামাজিক অবস্থান এবং তার যে বয়স, সবকিছু বিবেচনায় তিনি তাৎক্ষণিক জামিন লাভের যোগ্য।

সরকারের হুমকিতে আমাদের অ্যাকটিং চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারেন না। আমাদের শীর্ষ থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত একেকজনের নামে শত শত মামলা। মাননীয় স্পিকার তিনি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছে একজন সজ্জন রাজনীতিবিদ হিসেবে পরিচিত।

তবে এরইমধ্যে নির্ধারিত ২ মিনিট সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় স্পিকার বারবার রুমিনকে ধন্যবাদ জানিয়ে বক্তব্য শেষ করার আহ্বান জানাচ্ছিলেন। স্পিকার তার উদ্দেশ্যে বলছিলেন, ‘মাননীয় সংসদ সদস্য আপনার সময় শেষ। বক্তব্য শেষ করুন। পরে পরে আবার বলার সুযোগ পাবেন।’