আধুনিকায়ন ও যন্ত্রের ব্যবহারই বিভিন্ন দূষণের কারণ: প্রধানমন্ত্রী

আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিক ব্যবহার বৃদ্ধিতে বায়ুদূষণ থেকে শুরু করে নানা ধরনের দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০১৯ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন।

বাংলাদেশে পরিবেশ বিষয়ক কার্যক্রমের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি প্রাণীর ভালভাবে বেঁচে থাকার অধিকার রয়েছে। যত আধুনিকায়ন হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে আমরা আমাদের সুখ-সুবিধার জন্য প্রকৃতিকে এমনভাবে ব্যবহার করছি, আমাদের এই অবিবেচনা প্রসূত কর্মকান্ডের ফলাফলে দেখা যাচ্ছে বায়ুদূষণ থেকে শুরু করে নানা ধরনের দূষণ সৃষ্টি হচ্ছে।

বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উন্মুক্ত স্থানে বায়ু দূষণের ফলে প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী ২২ লাখ মানুষ মারা যায়। তাছাড়া, বায়ু দূষণের ফলে বিশেষ করে রান্না ও জ্বালানির ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণের ফলে আরও ৩৮ লাখ মানুষ মারা যায়। আমি ঠিক জানি না, শুধুমাত্র রান্না আর জ্বালানির ধোঁয়ার কথাটাই বলা হল কিন্তু আধুনিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য আমরা যা যা ব্যবহার করছি, তার কথা বলা হয়নি।

আধুনিক জীবনযাপনে বিভিন্ন ব্যবহার্য পণ্যের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা গাড়ি ব্যবহার করি, তারও একটা দূষণ আছে, এরোপ্লেন সেটাও কিন্তু ওজোন স্তরে দূষণ সৃষ্টি করছে। শুধু এরোপ্লেন না যুদ্ধ জাহাজ থেকে শুরু করে যুদ্ধ সরঞ্জাম। আমরা ডিটারজেন্ট ব্যবহার করি, এই ডিটারজেন্টও কিন্তু দূষণ সৃষ্টি করে। বডি স্প্রে, হেয়ার স্প্রে, সাবান, শ্যাম্পু যত বেশী ব্যবহার হচ্ছে, সেটাও কিন্তু পানিতে গিয়ে মিশছে এবং সেটাও দূষণ করছে। ঔষধ আমরা সেবন করি কিন্তু আমরা যখন মনুষ্য বর্জন করি এর মধ্যে থেকে সেটাও কিন্তু আমাদের পরিবেশ দূষণ করে।

টয়লেট পরিষ্কারের জন্য কেমিকেল, মেডিকেল বর্জ্য এবং বিভিন্ন ধরনের শিল্প বর্জ্য, শিল্প কলকারখানা, এয়ারকন্ডিশন, মোবাইল ফোন, কম্পিউটারের কথা তুলে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যে আধুনিক প্রযুক্তিই ব্যবহার করি না কেনো, প্রতিটির ক্ষেত্রে কিন্তু একটা দূষণ সৃষ্টি হয়। আরাম আয়েশের জন্য আমরা এসব ব্যবহার করি বলে তা ধর্তব্যে নেওয়া হয় না। কিন্তু এটা হচ্ছে বাস্তবতা। আমি কথাগুলো বললাম একটু চিন্তা করে দেখবেন বলে অনুরোধ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যারা পরিবেশ নিয়ে গবেষণা করেন তাদেরকেও এই বিষয়গুলোকে নিয়ে গবেষণার করার অনুরোধ জানান তিনি।

রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার কারণে পরিবেশগত ক্ষতির কারণ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, মানবিক কারণে স্থান দিতে হয়েছে মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের। প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা এদেশে আশ্রয় নিয়েছে। আমাদের বন আগেই বেশ কিছু ক্ষতি হয়েছিল, এর ফলে এখন প্রায় বন শেষ। যেখানে গভীর বন ছিল সেগুলো প্রায় ধ্বংসের পথে। মানব সভ্যতার যত বিকাশ হয় বা নগরায়ণ হয় সাথে সাথে কিন্তু বনায়নও ধ্বংস হয়, পরিবেশও ক্ষতি হয়। কিন্তু তাই বলে, আমাদের উন্নয়ন কি চলবে না, সভ্যতা কি থেমে থাকবে? থেমে থাকবে না। সভ্যতা এবং তার ক্রমবিকাশ অবশ্যই এটা অব্যাহত থাকবে। কিন্তু সাথে সাথে আমাদের সকল ক্ষেত্রেই একটা বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, আমাদের পরিবেশটাকেও রক্ষা করতে হবে।

পুকুর, ডোবা বা জলাধার দেখে প্রজেক্ট নেওয়ার প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি দেখি যেখানে একটা পুকুর আছে, সেটাই ভরাট করে ওই জায়গায় বিল্ডিং তুলতে হবে, এই করতে করতে ঢাকা শহরে যত গুলি খাল ও পুকুর ছিল তার কিছুই নেই। যে খালগুলো ছিল, একসময় বক্স কালভার্ট করা হলো। কনোন একটা সংস্থার পরামর্শে পূর্বের এক সরকার শুরু করে দিল বক্স কালভার্ট। বক্স কালভার্ট করার প্রয়োজন নেই। আমাদের খালগুলোকে ওভাবে রেখেই কিন্তু দুই পাড় দিয়ে রাস্তা করতে পারি, অথবা সেখানে এলিভেটেড রাস্তাও করে দিতে পারি। তাহলে খাল খালের মতোই থাকবে। যাতে পরিবেশ রক্ষাও হবে এবং বায়ুদূষণ কমবে।

সামাজিক বনায়ন কর্মসূচি থেকে উপকারভোগীর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতে ৬ লাখ ৬৮ হাজার ৬০১ জন উপকারভোগী সম্পৃক্ত রয়েছেন। এরা প্রত্যেকে লভ্যাংশ পান। আর এভাবে উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়াচ্ছি। এ পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার ৫৬৪ জন উপকারভোগীর মধ্যে ৩৫৬ কোটি ৮২ লাখ ৩৪ হাজার ৫২২ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও, নিজ নিজ কর্মসংস্থান ও বাসস্থানে বৃক্ষরোপণ করার পাশাপাশি পরিচর্যা করার আহ্বান জানান।

বক্ততা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শেষে বিআইসিসিতে একটি তেঁতুল গাছের চারা রোপণ করেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর শের-ই বাংলা নগর মাঠে বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এবার ব্যক্তিগত পর্যায়ে জাতীয় পরিবেশ পদক প্রদান করা হয়। পরিবেশগত শিক্ষা ও প্রচার ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে নির্বাচিত হন ড. কাজী খলিকুজ্জামান আহমেদ এবং আইনুন নিশাত। ব্যক্তিগত পর্যায়ে পরিবেশ গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে ড. মোবারক আহমেদ খান, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে গবেষণা ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ক্যাটাগরিতে বাংলাদেশ বন ও গবেষণা ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম, প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে পরিবেশ সংরক্ষণ ও দূষণ নিয়ন্ত্রণ ক্যাটাগরিতে এ্যানকোয়ার টেক্সটাইল লিমিটেড (ভালুকা ময়মনসিংহ) নির্বাচিত হন।