সেদিন কেন হরতাল বা কর্মসূচির ডাক দিলেন না: ফখরুলকে মান্না

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের প্রতি ইঙ্গিত করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরীক নাগরিক ঐক্য’র আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘৩০ ডিসেম্বর তো ভোট হয়নি, ভোট ডাকাতি হয়েছে। সেদিন বিকেল বেলা কেন আপনারা ৪/৫ দিনের হরতাল দিতে পারলেন না। ৬ মাস পার হলেও কেন কোনও কর্মসূচি দিতে পারলেন না।’

‘আপনি (ফখরুল) ৩০ তারিখ সকাল বেলা কেন বলবেন যে ভোট ভাল হচ্ছে। কেন দুপুর পর্যন্ত বুঝতে পারলেন না যে ভোট খারাপ হচ্ছে। কেন ৩০ তারিখ বিকেল বেলা ৪/৫ দিনের জন্য হরতাল দিতে পারলেন না। যদি সেদিন এরকম কিছু করা যেত তাহলে সারা বাংলাদেশ অচল হয়ে যেত।’

শুক্রবার (২৮ জুন) বিকেলে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্য’র প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

মান্না বলেন, কেউ কেউ বলতে পারেন, হরতাল দিলেই হরতাল হতো না। আরও নির্যাতন হতো, আরও হামলা-গ্রেফতার হতো। শেষ পর্যন্ত সবাইকে ঘরে ঢুকে যেতে হতো। হতেও পারতো। কিন্তু সেই কারণে আপনি কি প্রতিবাদ করবেন না? বরঞ্চ একটা প্রতিবাদ যদি করা যেত তাহলে উল্টোও ঘটতে পারতো, অথবা সারাবিশ্বের মানুষ জানতো এই ডাকাতির বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সমস্ত মানুষ মাঠে নেমেছিল, হরতাল করেছিল, আন্দোলন করতে চেয়েছিল, জোর করে সেটা তারা বন্ধ করে দিয়েছে।

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের এই নেতা আরও বলেন, ‘নিজেরা নিজেদের প্রস্তুত করতে হবে। অন্য কারও ওপরে ভরসা করে লাভ নেই। আমরা কারও ওপরে ভরসা করে চলিওনি।’

মান্না বলেন, ‘আমাদের শক্তিতেই আমরা চলতে চেয়েছি। তবে আমাদের শক্তি এত বেশি নয় যে একাই পারবো। অতএব অন্যদের সাথে মিলি। অন্যদের সাথে যোগ দিয়ে শক্তিটা বৃদ্ধি করি। শক্তিবৃদ্ধি করে লড়াই করে জয় ছিনিয়ে আনি। আমাদের চিন্তার মধ্যে ভুল ছিল সেটা আমি বলবো না। কিন্তু আমরা যাদের যাদের সাথে এই সম্পর্ক করে সামনের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলাম, তারা মনে মনে আগেই তাদের জায়গায় পৌঁছে গেছে। তারপর স্বপ্ন যখন ভেঙে গেছে তখন মনে হয়েছে একি আমিতো পথের মাঝেই দাঁড়িয়ে ছিলাম। ওরা আমার সাথে থেকে লাভ কি? অতএব নতুন করে ভাবছি। এই কারণে আমি হাফিজ ভাইকে (সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা) বলি, ঠিকই বলেছেন, ৩০ ডিসেম্বর তো ভোট হয়নি, ভোটের ডাকাতি হয়েছে ২৯ ডিসেম্বর।’

বরগুনায় রিফাত হত্যার ঘটনা শুধু হিন্দি ছবিতেই দেখা যায় উল্লেখ করে মান্না বলেন, ‘বরগুনাতে যখন এ ঘটনা ঘটলো তখন সবাই রাতে টিভিতে দেখেছেন অথবা ফেসবুকে দেখেছেন। আমি পরদিন দুইজন মানুষকে ফোন করেছিলাম, তারা কাঁদতে কাঁদতে বললেন, এই কি আমাদের বাংলাদেশ। একটা যুবক ছেলেকে বিনা কারণে বিনা দোষে কুপিয়ে হত্যা করলো। আর শত শত মানুষ তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলো, অথচ এই বাংলাদেশতো মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। এই বাংলাদেশ ৫২’র ভাষার লড়াই করেছিল।’

আবারও বিএনপিকে ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এখনও এক সাথে চলি চলতে চাই, পরস্পর পরস্পরকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু এই প্রশ্ন মানুষ করছে, ৩০ তারিখের পর ছয় মাস পার হয়ে গেলো একটাও কর্মসূচি দিতে পারলেন না কেন?’

মা্ন্না বলেন, ‘যখন নির্বাচন নির্বাচন খেলা চলছিল, একটার পর একটা গায়েবি মামলা দেয়া হচ্ছিল। হাজার হাজার বিরোধী দলের নেতাকর্মীর নামে লাখ লাখ মামলা দেয়া হচ্ছিল। সেই সময় আমরা প্রধানমন্ত্রীর সাথে সংলাপে বসেছিলাম। সংলাপে উনি বললেন, আমাকে একবার বিশ্বাস করেন। আমি বঙ্গবন্ধুর মেয়ে। আমি কথা দিচ্ছি, এই ভোট সম্পূর্ণ ভাল হবে। কোনো রকম হস্তক্ষেপ করা হবে না। আমাদের পক্ষ থেকে বলা হলো সারা দেশের যে পরিস্থিতি, আমাদের নেতাকর্মীরা নির্বাচনী এলাকায় যেতে পারে না, নির্বাচন হবে কিভাবে। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বললেন, কেন? মনে হয় উনি কিছুই জানেন না। ওনাকে বললাম, নেতাকর্মীদের নামে গায়েবি মামলা আছে, এলাকায় গেলেই গ্রেফতার হবে। উনি বললেন, আপনাদের কাছে লিস্ট আছে? আমরা পরের দিন লিস্ট দিয়েছি। সেই লিস্ট উনি পড়ে দেখেছেন কি-না তাতো জানি না। সেই লিস্ট উনি পড়ে দেখেছেন কি-না সেকথা ঐক্যফ্রন্টের কোনো নেতা কি জানেন?’

বিএনপির সংসদে যোগদানের বিষয়ে মান্না বলেন, ‘এটা কোনো দেশ নয় এটা মৃত্যু উপত্যাকা তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে আপনারা কেউ কেউ মনে করেন, একটু জায়গা যদি পাই সেখানে একটু কথা বলতে পারবো। ভুলে যান। ওই সুযোগ নাই। যারা সুযোগ মনে করে ভাবলেন, এই সরকারের কোনো বদান্যতায় কিংবা ঐন্দ্রজালিকতায় হয়তো কোনো জায়গা পেতেও পারি, যেখানে একটা হাত ঢুকিয়ে দিতে পারবো। সেই কথা ভুলে যান। এখানে সংসদে কথাই বলতে দেয় না। সময় দেবে দুই মিনিট এক মিনিট পরে বাতি নিভিয়ে দেয়।’

মাহমুদুর রহমান মান্নার সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সায়িদ, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।