‘প্রশাসনের আচরণ দেখে নিজেরা আলোচনা করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবো’

কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন

দীর্ঘ সাতাশ বছর পর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল করেছে বিএনপির ভ্যানগার্ড বলে পরিচিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। এতে কাউন্সিলরদের ভোটে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ফজলুর রহমান খোকন। বগুড়ায় জন্ম নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন খোকন ।বর্তমানে তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়েই জাপানিজ স্টাডিজে মাষ্টার্সে অধ্যয়নরত আছেন ।এর আগের কেন্দ্রীয় কমিটিতে তিনি গণশিক্ষা বিষয়ক সহ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ছাত্র রাজনীতি করে আসা খোকনের বিরুদ্ধে বর্তমানে কুড়িটিরও বেশি মামলা রয়েছে। সংগঠনের দায়িত্ব নেয়ার পর ছাত্রদলের ভবিষৎ কর্মপরিকল্পনা, দেশনেত্রীর মুক্তি, ক্যাম্পাসগুলোর সংকট নিয়ে পলিটিক্স নিউজের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন তিনি ।সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন স্টাফ রিপোর্টার শাহাবুদ্দীন ইসলাম জনী ।

পলিটিক্স নিউজ : ছাত্রদলের ২৭ বছর পর কাউন্সিল হল। কতটুকু শক্তিশালী হতে পারে দল এ ব্যাপারে আপনাদের মতামত কি ?  

ফজলুর রহমান খোকন: দীর্ঘ ২৭ বছর পর ছাত্রদলের কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। নিরপেক্ষ ভাবে আমি নির্বাচিত হয়েছি। এ নির্বাচনে দলের মধ্যে কোন বিতর্ক নেই। সকলের সহযোগিতায় আমি দলকে আরো শক্তিশাল করতে চাই।আমাদের মূল লক্ষ একটাই । তা হলো বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা।আমি যেহেতু বগুড়ার ছেলে সেহেতু আমি চাই আমার কারণে বগুড়ার বা তারেক রহমানের এলাকার কোন দূর্নাম যাতে না হয় ।সে দিকে গুরুত্ত দিবো বেশী।

পলিটিক্স নিউজ : ভোটের মাধ্যমে ছাত্রদলের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন । এখন কীভাবে সংগঠনকে এগিয়ে নেবেন?

ফজলুর রহমান খোকন: আমাদের এখন প্রথম কাজ হচ্ছে বিভিন্ন জেলা এবং উপজেলাতে কাউন্সিলের মাধ্যমে কমিটি দেয়া ও দলকে সুসংগঠিত করা এবং দল কে কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাবো তা খুব শীঘ্রই আমরা জানিয়ে দিবো ।কাউন্সিলরাই মূল্যায়ন করবে কাদেরকে কমিটিতে আনা যাবে।কার দ্বারা দল এগিয়ে যাবে।

পলিটিক্স নিউজ : দায়িত্ব নেয়ার পর প্রথম কোন কাজে হাত দেবেন?

ফজলুর রহমান খোকন: দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে বর্তমান সরকার অন্যায়ভাবে জেলে আটকে রেখেছে। দেশে এই মুহূর্তে ভোটাধিকার নেই। গণতন্ত্র নেই। বাক স্বাধীনতা নেই। এই অবস্থায় আমাদের একমাত্র ও প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে, দেশনেত্রীকে জেল থেকে বের করা আনা। পাশাপাশি ছাত্রদের অধিকার রক্ষায়ও আমরা কাজ করে যাব।

পলিটিক্স নিউজ : ছাত্রদল একটি ছাত্রদের সংগঠন। তাহলে প্রধান লক্ষ্য খালেদা জিয়ার মুক্তি কেন? ছাত্রসমাজের অধিকার রক্ষা করাটাই প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত না?

ফজলুর রহমান খোকন: দেখুন, দেশে ভোটাধিকার নেই। গণতন্ত্র নেই। বাকস্বাধীনতা নেই। দেশনেত্রী জেলে। একমাত্র বেগম জিয়ার নেতৃত্বেই দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব। তাই নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করাই ছাত্রদলের প্রধান লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নেত্রীকে মুক্ত করে তার নেতৃত্বে গণআন্দোলনের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাকস্বাধীনতা, ক্যাম্পাসগুলোতে সহাবস্থান ফিরিয়ে আনা সম্ভব।

পলিটিক্স নিউজ : ছাত্রদলকে কীভাবে ক্যাম্পাস মুখী করবেন ?

ফজলুর রহমান খোকন: এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের সহাবস্থান নেই এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও নেই আমার প্রথম পদক্ষেপ হবে, ক্যাম্পাসগুলোতে সহাবস্থান নিশ্চিতে কাজ করা এজন্য প্রশাসনের সঙ্গে সহাবস্থানের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করবো আমরা পরে প্রশাসনের আচরণ দেখে নিজেরা আলোচনা করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করবো

পলিটিক্স নিউজ : বেগম খালেদা জিয়া ২ বছর ধরে কারাগারে। অভিযোগ আছে, তার মুক্তির আন্দোলন পূর্বের ছাত্রদল নেতারা সেভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। আপনি কীভাবে সফল হবেন?

ফজলুর রহমান খোকন: স্বীকার করতেই হবে যে, নেত্রীর মুক্তির আন্দোলনে ছাত্রদলের ব্যর্থতা আছে। সেভাবে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারিনি আমরা। তবে দায়িত্ব যখন এবার নিয়েছি, আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করেবো আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে নেত্রীকে জেল থেকে মুক্ত করার। এবং ইনশাল্লাহ আমরা সেটা পারবো।

পলিটিক্স নিউজ : দেশের যে পরিস্থিতি এখন, তাতে কতটা সফল হওয়া সম্ভব বলে মনে হচ্ছে?

ফজলুর রহমান খোকন: দেখুন, এখানে মনে হবার কিছু নাই। সফল হবো নাকি ব্যর্থ হবো, এই ভেবে আন্দোলন-সংগ্রাম করা যায় না। দেশের মানুষের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার জন্যই আমাদের সংগ্রাম। সেজন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আন্দোলন সংগ্রাম গড়ে তুলতে আমাদের কঠোর পরিশ্রম করতে হবে। এই লক্ষ্যে ছাত্রদল কর্মীরা নিজ নিজ জায়গা থেকে প্রত্যেকেই কাজ করছে। পরিবেশ পরিস্থিতি অনুযায়ী এই বিষয়ে সহযোদ্ধাদের আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে আমরা আন্দোলন সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

পলিটিক্স নিউজ : বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলনে কী ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছেন?

ফজলুর রহমান খোকন: দেখুন, আমরা মাত্র কদিন হলো দায়িত্ব নিয়েছি। শিগগিরই আমরা দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিব। কর্মপরিকল্পনা ঠিক করবো। এরপরে শিগগিরই আপনাদের এ বিষয়ে অবহিত করা হবে ।

পলিটিক্স নিউজ : ২৭ বছর পর কাউন্সিল হল সামনের দিকে আপনারা এ ধারা অব্যাহত রাখতে পারবেন কি??

ফজলুর রহমান খোকন: ধারা অবশ্যই অব্যাহত থাকবে।এর মাধ্যমে ছাত্রদল নতুন নেতৃত্ব পাবে।খুব শীঘ্রই নতুন গঠণতন্ত্র করা হবে ।ছাত্রদলের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার জন্য আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বদ্ধ পরিকর।

পলিটিক্স নিউজ : আপনাদের কি মনে হয় অতীতের তুলনায় আপনাদের এই কমিটি আন্দোলন জোরদার করতে পারবে সরকারের বিপক্ষে?

ফজলুর রহমান খোকন: এ ব্যাপারে বলব সরকারের ভালো কাজ গুলোকে সমর্থন করা হবে ।আর খারাপ কাজ গুলোকে প্রতিহত করা হবে ।

পলিটিক্স নিউজ : ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি কবেনাগাদ হতে পারে?

ফজলুর রহমান খোকন: ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি খুব শীঘ্রই হবে।

পলিটিক্স নিউজ : ছাত্রদলের কমিটি তে একটা কমন অভিযোগ থাকে সেটা হল কমিটিতে হয় ছাত্র বাণিজ্য আর না হয় ছাত্রত্ব শেষ হওয়া লোকদেরকে কমিটি তে রাখা। এ ব্যাপারে আপনারা কি ধরনের পরিকল্পনা করছেন ?

ফজলুর রহমান খোকন: আমাদের কমিটি হবে কাউন্সিলরের মাধ্যমে । কাউন্সিলরা ঠিক করবে কাদের কে নেতৃত্বে আনা যায় ।সে ক্ষেত্রে কমিটি বাণিজ্যের কোন সুযোগ নেই।যারা ছাত্র না তাদের ডুকারও কোন সুযোগ নেই।

পলিটিক্স নিউজ : পূর্বের কমিটির কী কী ব্যর্থতা আছে বলে মনে করেন?

ফজলুর রহমান খোকন: সরকারের দমন পীড়নের কারণে পূর্বের কমিটির অনেক কর্মসূচি হয়তো সফলতা পায়নি। এগুলোকে ব্যর্থতা বলা উচিত হবে না। এই সময়কালে মিছিলে হামলা করা হয়েছে, গুলি করা হয়েছে, নেতা-কর্মীদের নামে শত শত মামলা হয়েছে। এতে ছাত্রদলের আন্দোলনের সফলতা কিছুটা ম্লান হয়েছে। এসব থেকে শিক্ষা নিয়ে অবশ্যই আমরা সামনে এগিয়ে যাব।

পলিটিক্স নিউজ : বগুড়া থেকে আপনি প্রথম ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতা এ ব্যাপারে কী বলবেন :

ফজলুর রহমান খোকন: বগুড়ার নেতা কর্মীরা সব সময় অবহেলিত।কারণ বগুড়া থেকে কাউকে কমিটিতে দিলে অনেকে সমালোচনা করে বলেন তারেক রহমান তার নিজের এলাকা থেকে লোক দিয়ে কমিটি গঠণ করেছে।তার কারণে পুর্বের কমিটিতে বগুড়ার নেতা কর্মীদের মূল্যায়ন করা হতো কম।কিন্তু এবার গণতান্ত্রিক ভাবে নির্বাচন করার কারণে এমনটি আর হয় নি। এবং বর্তমান কমিটি নিয়ে দলের ভিতরে কোন সমালোচনাও নেই ।