ভারতের সঙ্গে চুক্তিগুলোর ‘খুঁটিনাটি’ প্রকাশ করার দাবি মান্নার

ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যর্থ হয়েছেন দাবি করে নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, ‘ভারতের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে তাতে দেশের স্বার্থ রক্ষা হয়নি। সর্বপ্রথম আমাদের দাবি এই চুক্তিগুলোর ‘খুঁটিনাটি’ জনগণের জন্য প্রকাশ করা হোক। আমরা বিশ্বাস করি তাতে আমাদের সামনে আরো অনেক ভয়ঙ্কর তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

তিনি বলেন, এই চুক্তির মাধ্যমে সরকার যে বড় রকমের অপরাধ করেছে তা ক্যাসিনো অভিযানের মাধ্যমে চেপে রাখা যাবে না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এ চুক্তির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

সোমবার (৭ অক্টোবর) দুপুরে নাগরিক ঐক্যের পক্ষ থেকে জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

মান্না বলেন, সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই বিশেষ করে ২০১৪ সালে ভোট ছাড়াই ক্ষমতা দখলের পর থেকেই কোনো দেশের সঙ্গেই দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে পারেনি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়া হয়েছে।
এবারও সেটার ব্যতিক্রম হয়নি।

তিনি বলেন, ‘একটা দ্বিপাক্ষিক আলোচনা উভয় পক্ষের জন্য মঙ্গলকর হতে হবে। কোনো পক্ষ কতটা লাভবান হবে সেটাতে কিছুটা তারতম্য মেনে নেয়া যায়, কিন্তু এবার যেসব চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে সেগুলোর দিকে তাকালে দেখা যাবে এতে বাংলাদেশের নূন্যতম স্বার্থ রক্ষিত হয়নি। তাই সর্বপ্রথম আমরা দাবি করব এই চুক্তিগুলোর খুঁটিনাটি জনগণের জন্য প্রকাশ করা হোক। আমরা বিশ্বাস করি তাতে আমাদের সামনে আরো অনেক ভয়ঙ্কর তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

তিনি বলেন, সরকার এর মধ্যেই এই সফরে সাফল্য অর্জিত হয়েছে বলে প্রচারণা শুরু করে দিয়েছে বরাবরের মতো। কিন্তু খুঁজলে দেখা যাবে হাতেগোনা যেসব বিষয়ে বাংলাদেশ লাভবান হতে পারে সেগুলো খুব তুচ্ছ। দুটো রাষ্ট্রের মধ্যে অতি নিচু লেভেলে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে, প্রধানমন্ত্রীর লেভেলে এগুলো নিয়ে কথা বলা বাদ চুক্তি স্বাক্ষর করার কিছু নেই।

মান্না বলেন, বছরের-পর-বছর তিস্তা চুক্তি ঝুলে আছে। ভারতের কোনো রাজ্যের এই ব্যাপারে বিরোধিতার কথা বাংলাদেশেও আলোচিত। উপকূলের সার্বক্ষণিক মনিটরিং ব্যবস্থার বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে দুই দেশ এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের উপকূলে কুড়িটি স্টেশন স্থাপন করবে ভারত। আমাদের দেশের শক্তিশালী এবং সার্ভাইলেন্স সহ সকল দিক থেকে সক্ষম নৌ-বাহিনী থাকার পরও কেন আমাদেরকে ভারত সহায়তার রাডার স্টেশন স্থাপন করতে হবে সে বিষয়টি স্পষ্ট নয়। আর স্থাপন করা হলে সেখানে মনিটরিংয়ে বাংলাদেশের কর্তৃত্ব কতক্ষণ থাকবে এবং এর দ্বারা আমরা কতখানি উপকৃত হব তা পরিষ্কার করার প্রয়োজন। ভারতে তরলীকৃত গ্যাস রফতানি করা নিয়ে এখনো পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যে অস্পষ্টতা আছে। এই গ্যাস আমদানিকৃত এলপিজি বা এলএনজি নাকি আমাদের প্রাকৃতিক গ্যাস তরলীকৃত করে রফতানি করা হবে সেটা স্পষ্ট না। বলাবাহুল্য ভয়ংকর গ্যাস সংকটে থাকা বাংলাদেশ যদি তার প্রাকৃতিক গ্যাস কি তরল করে ভারতে রফতানি করে তাহলে সেটা ভয়ঙ্কর খারাপ খবর আমাদের জন্য।

মান্না বলেন, ফেনী নদীর পানি ভারতকে দেয়ার প্রশ্নে মানবিক কারণে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রসচিব। সীমান্তে হত্যার মতো অমানবিক কাজ দিনের পর দিন চলছে। এবার সফরে যাওয়ার আগে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছিল এই বেপারেও খুব দৃঢ় ভাবে কথা বলা হবে। সীমান্তে হত্যা পুরোপুরি বন্ধ হবে এরকম কোন মানবিক সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ অপর পক্ষ থেকে আদায় করতে পারিনি, ন্যূনতম কূটনৈতিক আশ্বাসও ছিল অনুপস্থিত।

তিনি বলেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব সময় উঁচু গলায় দাবি করা হয় বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক স্মরণকালের সবচেয়ে উঁচুতে অবস্থান করছে। সবচেয়ে কাছের প্রতিবেশীর সাথে সম্পর্ক থাকা খুবই ভালো কথা। কিন্তু সেই সম্পর্ক শুধুমাত্র দেয়ার আমাদের পাবার নয় তাই সেটা আমাদের দেশের জন্য বিপর্যয় কর। দেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দলটি এখন পর্যন্ত ভারতের সাথে যেসব দ্বিপাক্ষিক চুক্তি এবং সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে তার প্রায় সবগুলোই শেষপর্যন্ত একপাক্ষিক ই থেকেছে।

তিনি বলেন, নিজের অবস্থান থেকে ভারত সঠিক কাজটাই করেছে। সে দরকষাকষির মাধ্যমে তার পক্ষে সর্বোচ্চ অর্জনটা করে নিচ্ছে। নিজ দেশের প্রতি মমত্ববোধ এবং দায়বদ্ধতা থাকলে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর উচিত পাল্টা দরকষাকষি করা এবং আমাদের স্বার্থে সব কিছু না হলেও অনেক কিছু অর্জন করে নিয়ে আসা। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ঠিক এভাবেই নির্ধারিত হয়। এরমধ্যে চ্যারিটির কিছু নেই। সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছেন এটা নিশ্চিতভাবেই বলা যায়।

দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চলমান অভিযান নিয়ে মান্না বলেন, কিছুদিন আগেই হঠাৎ করে সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু করেছে। এই দেশের পরিস্থিতি না জানলে যে কারো কাছে ব্যাপারটা মনে হবে অনেকটা এই রকম গত এক দশক অন্য কোনো দল ক্ষমতায় ছিল এবং সেই সরকারগুলোর এই দেশে দুর্নীতি প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে তাই এই অবস্থায় নিয়ে গেছে এবং একটা অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে এই সরকার ক্ষমতায় এসে এখন সেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযানে নেমেছে।

অথচ গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই দলটি ক্ষমতায় আছে এবং বাংলাদেশকে দুর্নীতির অভয়ারণ্য বানিয়ে ফেলা হয়েছে এই সময়টাতেই। এই দেশে দুর্নীতি সব সময় ছিল কিন্তু এটা যে ব্যক্তি এবং তীব্রতার এই মুহূর্তে আছে সেটার সাথে আর কোনো সময় কোনো ভাবেই তুলনীয় নয়।

তিনি বলেন, মূল দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে যাদেরকে ধরা হচ্ছে তারা আসলে চুনোপুটি।এমনকি এই চুনোপুঁটিদের সরদারকে ধরতেও সরকারের অবিশ্বাস্য গরিমসি আমরা দেখলাম। সম্প্রতি ক্যাসিনো ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি গ্রেফতারের জন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা করছে এমন রিপোর্ট আমরা দেখছিলাম বেশ কয়েকদিন ধরেই। দেশের আইন এবং বিচার ব্যবস্থা কতটুকু দেউলিয়া হলে কতটুকু সরকারি দলের আজ্ঞাবহ হলে সম্রাট কে ধরার জন্য সবুজ সঙ্কেতের অপেক্ষা করতে হয়, সেটা বোঝাই যায়। অবশেষে গতকাল সম্রাট গ্রেফতার হয়েছেন।