আবরার হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে: আইনমন্ত্রী

আইন,বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন,বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির সকল ব্যবস্থা করা হবে।

তিনি বলেন, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে যেই জড়িত থাকুক না কেন এবং তাদের পরিচয় যা-ই হোক না কেন সকলকে বিচারের আওতায় আনা হবে এবং ন্যায় বিচারের মাধ্যমে এই মামলার বিচার শেষ করা হবে।

তিনি আজ নোয়াখালীতে ৬০ কোটি ৯২ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত দশতলা বিশিষ্ট চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবন উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, সরকার এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য দ্রুত গতিতে তদন্তের ব্যবস্থা করেছে।

তিনি বলেন, মানুষ যাতে বিচারের জন্য পথে পথে না ঘোরে। মানুষ যেন ন্যায় বিচার পায়। ন্যায় বিচার যেন শুধু মুখের বুলি না হয়। ন্যায় বিচার যেন কাগজে দেখা যায়। সেই ব্যবস্থা সরকার করছে।

মন্ত্রী বলেন, সরকার চায় মানুষ দ্রুত বিচার পাক এবং বিচার না হওয়ার কারণে স্ট্রিট জাস্টিসের জন্ম না হোক।

অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আদালত অঙ্গণে নিরাপত্তা জোরদার করার জন্য দেশের সকল আদালতে সিসি ক্যামেরা স্থাপন করা হবে এবং সেগুলো নিয়মিত মনিটরিং করা হবে।

আনিসুল হক বলেন, উচ্চ আদালতের একটি রায় অনুযায়ী দেশের নির্বাহী বিভাগ থেকে আলাদা হয়ে বিচার বিভাগের পৃথকভাবে পথচলা শুরু হয় ২০০৭ সালের ১লা নভেম্বর।

চলার শুরুতেই আদালতসমূহে বিশেষ করে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেসিতে এজলাসের ব্যাপক অপ্রতুলতাসহ বিচারক সংকট দেখা দেয়। এতে করে বিচারক, আইনজীবী ওবিচারপ্রার্থী জনগণ যেমন ভোগান্তির শিকার হতে থাকেন, তেমনি মামলার জটদিনের পর দিন বাড়তে থাকে।

এমনি অবস্থায় ২০০৯ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার গঠন করেনএবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং পৃথকীকরণকে সুদৃঢ় ও টেকসই করার জন্যবাস্তবমুখী বিভিন্ন পদক্ষেপ নেন। প্রথমেই এজলাজ সংকট দূরীকরণের জন্য
আদালত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়। পাশাপাশি নতুন বিচারক নিয়োগের কার্যক্রম জোরদার করা হয়।

তিনি বলেন, বিগতসাড়ে ১০ বছরে নতুন করে ১ হাজার ২৮ জন বিচারক নিয়োগ দেয়ার পরও অধস্তনআদালতের এজলাস সংকট প্রায় পুরোটাই দূর করা সম্ভব হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, নোয়াখালীতে যে আদালত ভবন উদ্বোধন করা হলো তা আসলে বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের উন্নয়নের একটি খণ্ডচিত্র মাত্র। বর্তমানে বাংলাদেশের এমন কোন সেক্টর খুঁজে পাওয়া যাবে না, যেখানে তাঁর সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি।

তিনি বলেন, আমরা যদি বিচার বিভাগের কথাই বলি, তাহলে দেখা যাবে বৃটিশ আমল, পাকিস্তান আমল এবং জিয়াউর রহমান, এরশাদ ও খালেদা জিয়ার আমলে বিচার বিভাগের যেউন্নয়ন হয়েছে তার সবগুলো যোগ করলেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের সময়কালের উন্নয়নের সমান হবে না।

মন্ত্রী স্মরণ করিয়ে দেন যে, উন্নয়ন একটি চলমান প্রক্রিয়া হলেও এই প্রক্রিয়া কিন্তু এমনিতেই চলে না, একে চালাতেহয়। এটিকে ভালভাবে চালাতে হলে অবশ্যই দক্ষ চালকের প্রয়োজন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দক্ষ চালকের আসনে থাকার কারণেই বিচার বিভাগের এই অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। কেবল সিজেএম আদালত ভবন নির্মাণের জন্যই বর্তমান সরকার ২ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং এ প্রকল্পের প্রায় ৮৫% ভাগ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে জেলায় সিজেএম আদালত ভবন উদ্বোধনও করা হলো। এছাড়া সরকার পূর্বের জেলা জজ আদালত ভবন গুলো উর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণপ্রকল্পবাস্তবায়নসহ আরও অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। ফলে বিচার বিভাগের এজলাস সংকট তথা অবকাঠামোগত সমস্যা প্রায় দূর হয়েছে।

মন্ত্রী বলেন, বৃটিশ ও পাকিস্তান আমলসহ বাংলাদেশের অন্যান্য সরকারের আমলে বিদেশী প্রশিক্ষণ গ্রহণ বিচারকদের জন্য ছিলো স্বপ্নের মতো। কিন্তু আজ বিদেশী প্রশিক্ষণ গ্রহণ তাঁদের স্বপ্ন নয় বাস্তবে পরিণত হয়েছে। এখন তারা
সরকারিভাবেই অস্ট্রেলিয়া, চীন, জাপান, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে প্রশিক্ষণগ্রহণ করছেন।

অন্যান্য সরকারের সময় জেলা জজ ছাড়া কোন বিচারক গাড়ি পেতেন না। বর্তমান সরকার জেলা জজ ছাড়াও অতিরিক্ত জেলা জজদের গাড়ি বরাদ্দ দিচ্ছে । অধস্তন আদালতে কর্মরত বিচারকগণের যাতায়াতের সুবিধার্থে কেবল ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরেই ১০৯টি সিডান কার ও ৬টি মাইক্রোবাস বরাদ্দ দিয়েছি। চলতি ২০১৯-২০২০ অর্থবছরেও বিজ্ঞ বিচারকগণের ব্যবহারের জন্য আরও ১১৫টি সিডান কার ও মাইক্রোবাসক্রয়ের জন্য অর্থ বরাদ্দ রাখা হয়েছে।

বিচারকগণের পদোন্নতি জট ছিল প্রকট কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের আমলে তারা সময়মতো পদোন্নতি পাচ্ছেন। তাঁদের জন্য আলাদা বেতন কাঠামো করে দেওয়া হয়েছে যাতেতাঁরা আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী থাকতে পারেন।বিচারকদের স্বল্পসুদেগৃহনির্মাণ ঋণ গ্রহণের ব্যবস্থাও করে দেয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের আবাসিক সমস্যা দূর করার জন্য ঢাকার কাকরাইল এলাকায় বিশতলা বিশিষ্ট সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। এখন তাঁদের এজলাস এবং চেম্বারের অবকাঠামোগত অপ্রতুলতা দূর করার জন্য ১৫৬ কোটি টাকা ব্যয়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্ত্বরে ১২ তলা ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া ১১৭ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৫ তলাবিশিষ্ট বাংলাদেশ বার কাউন্সিল ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।

এসব কিছু করার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে বিচার বিভাগের মান উন্নয়ন করে জনগণকে দ্রুত মানসম্পন্ন ন্যায়বিচার প্রদান করা। সরকারের এত পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও আমাদের বেশ কিছু মামলা জট তৈরি হয়েছে। এ জট আসলে পাঁচ কিংবা দশ বছরে তৈরি হয়নি। এটি আমাদের দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা।

নোয়াখালীর জেলা ও দায়রা জজ সালেহ উদ্দিন আহমদ এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় নোয়াখালী ৪ ও ৬ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য যথাক্রমে একরামুল করিম চৌধুরী ও আয়েশা ফেরদাউস, জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য ফরিদা খানম, আইন সচিব মো. গোলাম সারওয়ার, যুগ্ম সচিব বিকাশ কুমার সাহা প্রমুখ বক্তৃতা করেন।