যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা

যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা
যুবলীগের চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারা

১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে স্বাধীনতার সংগঠক শেখ ফজলুল হক মনির হাতে গড়া সংগঠন আওয়ামী যুবলীগের সম্মেলন (৭ম কংগ্রেস) আগামী ২৩ নভেম্বর বেলা ১১টায় রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

সাম্প্রতিক ক্যাসিনো ও দুর্নীতি বিরোধী অভিযানে  ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গসংগঠন যুবলীগের অনেক শীর্ষ নেতার বিরুদ্ধে এসেছে বিস্তর অভিযোগ । সংগঠনের ঢাকা মহানগর কমিটি থেকে শুরু করে শীর্ষ নেতৃত্ব অনেকের বিরুদ্ধে উঠেছে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ জুয়া পরিচালনা কিংবা এই অবৈধ ব্যবসা থেকে সুবিধাভোগের অভিযোগ। এ সব অভিযোগে কয়েকজন গ্রেফতার হয়েছেন, বহিষ্কারও হয়েছেন। যারা বহিষ্কার কিংবা গ্রেফতার হননি তারাও আছেন আতঙ্কে। এ কারণে এবারের কংগ্রেসে পদপ্রত্যাশী অনেক নেতা চুপসে গেছেন। প্রার্থিতা ঘোষণা নিয়ে ভয়ে আছেন। তবে এর মাঝে ক্লিন ইমেজের প্রার্থীরা অনেকটাই চাঙ্গা। তারা নানা মাধ্যমে অনানুষ্ঠানিকভাবে জানান দিচ্ছেন প্রার্থিতা।

সম্মেলনকে সামনে রেখে আলোচনা শুরু হয়েছে কারা আসছেন নতুন নেতৃত্বে। সম্ভাব্য পদ প্রত্যাশীরা নিজেদের মতো করে লবিং করছেন, চলছে দৌড়ঝাঁপ, চেষ্টা করছেন নেত্রীর নজরে আসতে।

যুবলীগের চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় যারাঃ

শেখ ফজলুর রহমান মারুফঃ যুবলীগের ২ নং প্রেসিডিয়াম সদস্য মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুর রহমান মারুফ বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনি এবং যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছোট ভাই। শেখ মারুফ ঢাকা মহানগর যুবলীগের সদস্য, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির ক্রিড়া সম্পাদক ও প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। গত কয়েক দফায় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।

শেখ ফজলে নূর তাপসঃ যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে শেখ ফজলে নূর তাপস ইংল্যান্ড থেকে বার এট ল ডিগ্রী নিয়ে আইন পেশায় প্রবেশ করেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় সরকার পক্ষের আইনজীবি ছিলেন। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় শেখ হাসিনার পক্ষে তিনি মামলা পরিচালনা করেন এবং সবগুলো মামলায় বিজয় লাভ করেন। তাপস ২০০৮ সালে প্রথমবারের মত সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন এবং পরপর তিনবার ধানমন্ডি, নিউমার্কেট, হাজারীবাগ এলাকা (ঢাকা-১২) থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সাম্প্রতিক ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে যুবলীগের অনেক শীর্ষ নেতা বিতর্কিত হয়ে যাওয়ায় ক্লিন ইমেজের নেতা শেখ ফজলে নূর তাপস চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় এসেছেন।

মজিবুর রহমান চৌধুরীঃ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত যুবলীগের এক নং যুগ্ম সম্পাদক এবং এক-এগারোর সময় দুই বছর যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

শহীদ সেরনিয়াবাদঃ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট সাইদুর রহমান শহীদ মূলত শহীদ সেরনিয়াবাদ নামে পরিচিত। বিগত কমিটিতেও তিনি  প্রেসিডিয়াম সদস্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং বরিশাল জেলা ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। শহীদ সেরনিয়াবাদ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর কবির নানক এর খালাতো ভাই।

মাহবুবুর রহমান হিরণঃ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মাহবুবুর রহমান হিরণ ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত যুবলীগের এক নং সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ১৯৯৩ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। মাহবুবুর রহমান হিরণ ভোলা জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক,  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের এজিএস, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরেবাংলা হল ছাত্রলীগের সভাপতি, ভোলা জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি এবং ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের (জালাল – জাহাঙ্গীর) সদস্য ছিলেন।

এডভোকেট বেলাল হোসেনঃ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য এডভোকেট বেলাল হোসেন ২০১৬ সালে যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ইতিপূর্বে তিনি যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এবং সহ দপ্তর সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্র রাজনীতি থেকে যুব রাজনীতিতে পদার্পণ করা অ্যাডভোকেট বেলাল ১৯৮৬ সালে সুলতান-রহমান কমিটিতে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন।

ফারুক হোসেনঃ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোঃ ফারুক হোসেন ইতিপূর্বে যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সম্পাদক, কেন্দ্রীয় সদস্য এবং ফরিদপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। এরশাদ সরকারের সামরিক আইন চলাকালীন  সময়ে নির্বাচন বয়কটের কারণে তাকে ১৪ বছরের জেল দেয়া হয় এবং সাত বছর জেলে থাকার পর শেখ হাসিনার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় তিনি মুক্তি পান।

শেখ ফজলে ফাহিম এবং শেখ ফজলে নাঈমঃ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য শেখ ফজলে ফাহিম এফবিসিসিআই এর বর্তমান সভাপতি। যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য তরুণ নেতা শেখ ফজলে নাঈম। দুজনই আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ছেলে।

নূরে আলম চৌধুরী লিটনঃ জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূরে আলম চৌধুরী লিটন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য।

মির্জা আজমঃ সাম্প্রতিক ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে যুবলীগের অনেক শীর্ষ নেতা বিতর্কিত হয়ে যাওয়ায় যুবলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী মির্জা আজম এমপি যুবলীগ চেয়ারম্যান পদে আলোচনায় এসেছেন।

এছাড়াও আলোচনায় আছেন যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে এবং শেখ ফজলে নূর তাপসের বড় ভাই শেখ ফজলে শামস পরশ, আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপির ভাই খোকন সেরনিয়াবাদ, শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও মাশরাফি বিন মর্তুজা।

সাধারণ সম্পাদক পদে আলোচনায় যারাঃ

মহিউদ্দিন আহমেদ মহিঃ যুবলীগের এক নং যুগ্ম সম্পাদক মহিউদ্দিন আহমেদ মহি। তিনি ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ২০০২ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত। ২০১২ সালের কাউন্সিলে যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদকের সাথে শুধুমাত্র তার নাম ঘোষণা করা হয়েছিলো। মহিউদ্দিন মহি সমবায় ব্যাংকের চেয়ারম্যান এবং ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাবের সভাপতি। সাম্প্রতিক ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে অনেক ক্লাবের নাম আসলেও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব ছিল ক্যাসিনো মুক্ত।

সুব্রত পালঃ যুবলীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক সুব্রত পাল ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত যুবলীগের প্রচার সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন। ছাত্র রাজনীতিতে তিনি তিতুমীর কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

আবুল বাশারঃ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আবুল বাশার ২০০১ সালে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের আহ্বায়ক এবং ২০০৩ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

ফারুক হাসান তুহিনঃ ফারুক হাসান তুহিন যুবলীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক।  তুহিন ২০০৪ সালে সরাসরি ভোটে ঢাকা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০১২ পর্যন্ত ঢাকা জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

সুভাষ চন্দ্র হাওলাদারঃ যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির অর্থবিষয়ক সম্পাদক সুভাষ চন্দ্র হাওলাদার ২০০৩ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন।

মাইনুল হোসেন খান নিখিলঃ ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সভাপতি মাঈনুল হোসেন খান নিখিল ইতিপূর্বে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

রফিকুল ইসলাম চৌধুরীঃ তৃনমূলে জনপ্রিয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় উপ ত্রান ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম চৌধুরী কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ নেতা ছিলেন।

মিজানুর রহমান মিজানঃ কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহ সম্পাদক, বরিশাল মুলাদী উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সদস্য  মিজানুর রহমান মিজান যুবলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের (১৯৯৩-১৯৯৭) দায়িত্ব পালন করেন।