সমগ্র জাতি আজ শুধু হতাশই নয়, বিক্ষুব্ধ: মির্জা ফখরুল

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ চ্যারিটেবল মামলায় সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আপিল শুনানি ৭ দিন পিছিয়ে দেয়া এবং বেগম জিয়ার আইনজীবীদের মৌখিক আবেদন গ্রহণ না করায় সমগ্র জাতি আজ শুধু হতাশই নয়, বিক্ষুব্ধ হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) সকালে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন।

ফখরুল বলেন, ‘অত্যন্ত বিস্ময় এবং উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, দেশনেত্রীর বিরুদ্ধে মামলার শুরু থেকেই সাধারণ মানুষ যে সুযোগ-সুবিধা পান তাকে সেটুকুও দেয়া হয়নি। এ ধরনের মামলায় সাধারণত ৭ দিনের মধ্যে জামিন হয়। কিন্তু বেগম জিয়ার ক্ষেত্রে এটা হয়নি। তার জামিন পদে পদে বাধা দেয়া হচ্ছে। তার জামিন না দেয়াটা প্রচলিত রীতিনীতির বিরুদ্ধেই শুধু নয়, অমানবিকও বটে।’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য প্রতিবেদন উপস্থাপন না করে আদালত অবমাননা করেছেন দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বিএসএমএমইউ স্বাস্থ্য প্রতিবেদন উপস্থাপনে ব্যর্থ হওয়ায় আদালত অবমাননা করেছেন বলে আমরা মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘আনঅফিসিয়াল সূত্রের খবর অনুযায়ী বুধবার রাতে বেগম জিয়ার স্বাস্থ্য রিপোর্ট রিপোর্ট চূড়ান্ত হয়েছে। কিন্তু এটা জমা দেয়া বন্ধ হয়েছে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপে।’

‘খালেদা জিয়া রাজার হালে আছেন’- গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া এমন বক্তব্যের সমালোচনা করে ফখরুল আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য সরাসরি আদালতের ওপর হস্তক্ষেপের শামিল, আদালত অবমাননার শামিল। প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সরকার চান না দেশনেত্রীর জামিন হোক। তিনি দেশনেত্রীকে ‘গডফাদার’ বলেছেন, বলেছেন ‘রাজার হালে’ আছেন। এর মাধ্যমে তিনি বিএসএমএমইউ’কে ভয় দেখিয়েছেন।’

তিনি বলেন, ‘বিষয়টি কাকতালীয় কিনা জানিনা। একদিকে সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার বিরুদ্ধে চার্জশিট অনুমোদন করা হয়েছে অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্য। তার এ বক্তব্য ‘আদালতের ওপর থ্রেট’ বলে আমরা মনে করি। এটা ফ্যাসিজমের একটি চূড়ান্ত রূপ।’

ফখরুল বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার পরবর্তী চিকিৎসা না হলে তাঁর মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে। তার চিকিৎসার ক্রমাবনতি ও চিকিৎসা না হওয়ার দায়দায়িত্ব এই সরকারপ্রধানকে বহন করতে হবে।’

এদিকে খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি পেছানোর ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ করেছে বলেও জানান বিএনপি মহাসচিব।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বেগম সেলিমা রহমান ও মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় ৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানি ফের পিছিয়ে আগামী ১২ ডিসেম্বর শুনানির জন্য পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আপিল বিভাগ। ১২ ডিসেম্বরের মধ্যে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর ‘শারীরিক অবস্থার সবশেষ অবস্থা’ জানিয়ে প্রতিবেদন দাখিল করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর) জামিন শুনানি শেষে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

এদিকে বেগম জিয়ার জামিন আদেশ পেছানোকে কেন্দ্র করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের এজলাস কক্ষে নজিরবিহীন হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এক পর্যায়ে ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত বেগম জিয়ার জামিন শুনানি মুলতবি করে এজলাস ছেড়ে যান প্রধান বিচারপতি।

আদেশ দেয়ার পরই আদালতে অবস্থানরত বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা ‘এ আদেশ মানি না’ বলে উচ্চস্বরে কথা বলতে থাকেন। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের শ্লোগানের বিরোধিতা করলে শুরু হয় হট্টগোল, দুপক্ষের বাকবিতণ্ডা।