আওয়ামী লীগের সম্মেলন মানে বাঙালি জাতির মিলন-মেলা, প্রাণের স্পন্দন

ডা: মো: মুরাদ হাসান, ১৯৭৪ সালের ১০ অক্টোবর জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলাধীন দৌলতপুর গ্রামে এক ঐতিহ্যবাহী সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। তাঁর পিতা এড. মতিয়র রহমান তালুকদার ছিলেন একজন বরেণ্য রাজনীতিবিদ ও প্রখ্যাত আইনজীবী। তিনি রণাঙ্গনে সম্মুখ সমরে অংশগ্রহণকারী একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, মহান মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের আহবায়ক (জামালপুর-শেরপুর) ও মুজিব নগর সরকার কর্তৃক নিয়োগকৃত ম্যাজিষ্ট্রেট। তিনি জামালপুর জেলা আওয়ামীলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। এড. মতিয়র রহমান তালুকদার ১৯৮৬-২০০৩ মেয়াদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ছিলেন। তিনি জামালপুর ‘ল কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, জাতীয় আইনজীবী সমিতির সহ-সভাপতি এবং জামালপুর জেলা বার এর ৬ (ছয়) বার নির্বাচিত সভাপতি ছিলেন।

মো. মুরাদ হাসান ১৯৯৪ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের কার্যকরী সদস্য, ১৯৯৭ সালে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং ২০০০ সালে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। তিনি ২০০৩ সালে ৫ম কংগ্রেস এ বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ‘কার্যকরী সদস্য’ নির্বাচিত হন। ২০০৩ সালে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ জামালপুর জেলা শাখার ‘কার্যকরী সদস্য’, ২০১৪ সালে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী উপজেলা আওয়ামী লীগের ‘কার্যকরী সদস্য’, ২০১৫ সালে জামালপুর জেলার ‘স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক’ নির্বাচিত হন। এছাড়াও, ২০১৭ সালে তিনি ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটির কেন্দ্রীয় ‘কার্যকরী সদস্য’ নির্বাচিত হয়ে স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তির বিরুদ্ধে চলমান আন্দোলনে কার্যকর ভূমিকা পালন করে আসছেন।

মো. মুরাদ হাসান স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ) এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এসোসিয়েশন (বিএমএ) এর আজীবন সদস্য। তিনি নিজ নির্বাচনী এলাকায় ২০০১ সাল থেকে লক্ষাধিক দু:স্থ/অসুস্থ রোগীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা প্রদান করে আসছেন।

তিনি ২০০৮ সালের ৯ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জামালপুর-৪ (সরিষাবাড়ী, মেস্টা ও তিতপল্যা) সংসদীয় আসন থেকে প্রথমবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২য় বারের মতো সংসদ সদস্য হন। ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। একই বছর ১৯ মে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে তাকে তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়।

সম্প্রতি দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল পলিটিক্সনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম-এর মুখোমুখি হন তিনি। তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপচারিতায় উঠে আসে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ও সমসাময়িক রাজনীতির নানা দিক। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন পলিটিক্সনিউজের নির্বাহী সম্পাদক সালেহ মোহাম্মদ রশীদ অলক।

পলিটিক্সনিউজ: আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে আপনার ভাবনা কি?

ডা. মুরাদ হাসান: বাংলাদেশের ইতিহাস মানে আওয়ামী লীগের ইতিহাস। ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংগ্রাম এবং গৌরবের অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বাংলাদেশের সকল মানুষের মধ্যে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন ঘিরে উৎসাহ-উদ্দীপনা বাড়ছে। দেশের সর্বত্র আওয়ামী লীগের সম্মেলন ঘিরে আলোচনা হচ্ছে। সম্মেলন বলতে আমরা বুঝি নতুন নেতা নির্বাচিত হবে, নতুন-নতুন নেতৃত্ব আসবে। নবীন-প্রবীণ, অভিজ্ঞ এবং যাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে আওয়ামী লীগকে সমৃদ্ধ করা উচিত তাদের সবাইকে নিয়ে সম্মেলনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের জাতীয় কমিটি গঠিত হবে, যার প্রধান থাকবেন আমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার, চিন্তা-চেতনার শেষ ঠিকানা আমাদের বাঙালি জাতি সত্তার স্বপ্ন সারথি আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কোনও বিকল্প নেই, কেউ চিন্তাও করে না। শুধুমাত্র বঙ্গবন্ধুর রক্তকেই এ বাংলার মানুষ বিশ্বাস করে। তাদেরকেই সুপ্রিম নেতৃত্বে আসতে হবে। আজকে বাংলাদেশ কি চায়? বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশাটা কি? এটা বঙ্গবন্ধুর কন্যাই সবচেয়ে ভালো জানেন, বোঝেন, উপলব্ধি করেন। আমরা যারা আওয়ামী লীগের কর্মী, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ-চেতনাকে বিশ্বাস করি, ধারণ করি, আমরা যারা জন্ম-জন্মান্তরে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী লীগের আদর্শের কর্মী, আমরা বিশ্বাস করি আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন একটি মিলন-মেলা। সারা বাংলাদেশের আদর্শিক নেতাকর্মী, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, যারা বাংলাদেশের স্বাধীনতার মূল্যবোধ ধারণ করে তারা বিশ্বাস করে আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর বাঙালি জাতির মিলন-মেলা, প্রাণের স্পন্দন।

পলিটিক্সনিউজ: আওয়ামী লীগের সম্মেলনে প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটির কি কি কাজ করছে?

ডা. মুরাদ হাসান: আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা উপ-কমিটি সম্মেলনের সকল প্রচার ও প্রকাশনার কাজ করছে। সম্মেলন ঘিরে ইতিমধ্যে ওয়েবসাইট উদ্বোধন করা হয়েছে। সমস্ত দাওয়াতপত্র, পোস্টারের কাজ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। সম্মেলনে আগত সকল ডেলিগেট-কাউন্সিলরদের একটি করে পাটের ব্যাগ দেয়া হবে। ব্যাগে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র, আওয়ামী লীগের ইতিহাস, বাংলাদেশের ইতিহাস, আওয়ামী লীগকে মাতৃস্নেহ-মমতায় নেতৃত্ব দিয়ে চারবার দেশ পরিচালনায় নিয়ে যাওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন ও কর্মের ওপর একটি এলবাম, গত সাড়ে দশ বছরে জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের দেশ গড়ার পথে অদম্য গতির উন্নয়নের একটি তুলনামূলক বিবরণী সম্বলিত পকেট-কার্ড, একটি করে পানির বোতল এবং যাদের ডায়াবেটিস আছে তাদের দিকে লক্ষ্য রেখে দু’টি লজেন্সও থাকবে।

এছাড়া, ২০১৩-১৪-১৫ সালে বিএনপি-জামাত জনগণের ওপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ করে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যাসহ যে নজিরবিহীন সন্ত্রাস পরিচালনা করেছে এবং নানা গুজব ছড়িয়ে মানুষের মাঝে ভীতিসঞ্চারের ষড়যন্ত্র করেছে, সেগুলোর ওপর একটি তথ্যচিত্র এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশের অভূতপূর্ব উন্নয়ন নিয়ে একটি প্রামাণ্যচিত্রের সিডি থাকবে।

পলিটিক্সনিউজ: শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই আওয়ামী লীগের সম্মেলন হচ্ছে, বিষয়টা কীভাবে দেখছেন?

ডা. মুরাদ হাসান: প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ভিশন ২০২১ ও ২০৪১ বাস্তবায়নে নেতৃত্ব দিবে আওয়ামী লীগ। সুতরাং দায়িত্ব অনেক বেশি। আমি মনে করি— মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা অসম সাহসিকতা নিয়ে নিজের দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ে নেতাকর্মীদেরকে দুর্নীতিমুক্ত করার অভিযান চালাচ্ছেন, অন্যায়-অনিয়ম অপরাধের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। ক্যাসিনো থেকে শুরু করে নানান অবৈধ এবং অসামাজিক বিষয়গুলোতে কাউকে একবিন্দুও ছাড় দিচ্ছেন না।

তিনি (শেখ হাসিনা) পরিষ্কার বলে দিয়েছেন ‘আমি কোন দলের নেতাকর্মী ও ব্যক্তির পরিচয় কিছুই দেখবো না। যিনি অপরাধ করবেন, তিনি শুধু অপরাধী হিসেবেই বিবেচিত হবেন। আইন আছে, আইন অনুযায়ী বিচার হবে।’ কঠোর ভাবে সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এটা কিন্তু একটা ম্যাসেজ। এই ম্যাসেজ যে বুঝবে, ধারণ করতে পারবে, আত্মউপলব্ধিতে নিতে পারবে তাদেরই দলের নেতৃত্ব আসা উচিত। যে বুঝতে পারে না, কি চান বঙ্গবন্ধু কন্যা, উনার চোখ দিয়ে উনি কিভাবে বাংলাদেশকে দেখেন, এটা যার বইবার ক্ষমতা নাই, তাদের তো রাজনীতিতে না থাকলেই ভাল; অন্তত নেতৃত্বে না। আমরা এভাবেই ভাবি। এটাই বাংলাদেশের মানুষ চায়। একজন নেতা; একজন শুদ্ধ মানুষ হবে। নৈতিকতা-বোধবিহীন নেতৃত্ব কখনো সফলতা বয়ে আনতে পারে না।

পলিটিক্সনিউজ: জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলার পথে বাংলাদেশ কতটুকু এগিয়েছে বলে মনে করেন?

ডা. মুরাদ হাসান: প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন, যে স্বপ্ন জাতির পিতা দেখিয়ে গেছেন, তা হলো- বাংলাদেশ হবে সোনার বাংলা। এক কথায় উনি বুঝিয়েছে দিয়েছেন। সোনার বাংলা এই দুটি শব্দের মধ্যে হাজার কোটি অনুভূতি। সোনার বাংলার ব্যাখ্যা, এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য, এর পরিধি অনেক গভীরে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ, আধুনিক, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। ক্ষুধা দারিদ্র সন্ত্রাস দুর্নীতি রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, মাদকমুক্ত বাংলাদেশ- যা বলি না কেন সব কথার মূল কথা সোনার বাংলা, এর মধ্যেই সব আছে। আমাদের নেত্রী তো বলেন, ‘আমি নতুন করে কিছু করছি না। আমার পিতা উনি যা করে গেছেন, আমি শুধু সেটাকে কন্টিনিউ করছি, তার স্বপ্নগুলো পূরণ করছি, আমার একটাই দায়িত্ব, আমার এই জীবন দিয়ে পিতার স্বপ্নগুলো পূরণ করে দিয়ে যাবো।’ বঙ্গবন্ধু ৫৫ বছর জীবনে সব স্বপ্ন দেখেছেন, আর কোন স্বপ্ন দেখার মত স্বপ্নবাজ নেই, এটা আমি বিশ্বাস করি— বঙ্গবন্ধু কন্যা হিসেবে জননেত্রী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন ধারণ করেন, বহন করেন। তাঁর (শেখ হাসিনা) চেয়ে পরিশুদ্ধ নেতা, তার চেয়ে সাহসী, প্রজ্ঞাবান, মেধাবী, দূরদর্শী নেতা বঙ্গবন্ধুর পরে এই বাংলাদেশে কোনদিন আসেনি, আর কেউ আসবেও না। এটা আমি বিশ্বাস করি। অলৌকিক ধরনের ক্ষমতা, অলৌকিক পরিশ্রম করা, ধৈর্য-সহ্য, উনি যেন দীর্ঘায়ু হোন, শতায়ু হোন। বাংলাদেশকে তার স্বপ্নের তীরে ভিড়িয়ে যেতে পারেন।

পলিটিক্সনিউজ: সময় দিয়ে কথা বলার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
ডা. মুরাদ হাসান : আপনাকে ও পলিটিক্সনিউজ টুয়েন্টিফোর ডট কম পরিবারকেও ধন্যবাদ।