সরকার খালেদা জিয়াকে হত্যার চক্রান্ত করছে: রিজভী

দখলদার আওয়ামী সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে গণতন্ত্রের কণ্ঠস্বর বেগম খালেদা জিয়াকে কারারুদ্ধ রেখে বিনা চিকিৎসায় হত্যার চক্রান্ত করছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।

সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) দুপুরে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন,’গুরুতর অসুস্থ দেশনেত্রীর কি চিকিৎসা হচ্ছে এটি কেউ কিছুই জানতে পারছে না। পূর্বের মেডিকেল বোর্ডের সিদ্ধান্ত বদলে সরকারি দলের সমর্থক ডাক্তারদের তৈরি বানোয়াট রিপোর্ট আদালতে পেশ করা হয়েছে। বেগম জিয়ার নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ডাক্তার শামীম ও ডাক্তার মামুনকে অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। বিনা চিকিৎসায় তার জীবনকে বিপন্ন করার কলা-কৌশল হচ্ছে কি না এজন্য জনগণ উদ্বিগ্ন। আমরা বেগম জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সু-চিকিৎসার দাবি জানাচ্ছি।’

আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দেওয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের সমালোচনা করে রিজভী বলেন,’আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি ভেবেছিলাম, আপনারা আমাকে ছুটি দিবেন।’ ছুটি অন্যরা দিবে কেন ছুটি আপনি নিজেই নিয়ে নিতে পারতেন। আসলে আপনার এ সমস্ত কথা জনগণের সাথে ‘ডার্ক হিউমার’। রাজনীতি থেকে অবসরের কথা আপনি এর আগেও বলেছিলেন কিন্তু সে কথাও রাখেননি। অর্থাৎ আপনি মুখে যা বলেন অন্তরে পোষণ করেন অন্যটি। দলীয় প্রধানের পদসহ দখল করা মসনদের প্রধান আপনি। সুতরাং আপনি আপনার কুক্ষিগত কোন পদ থেকে সরে যাবেন এটা পাগলেও বিশ্বাস করে না।’

তিনি বলেন,’বাংলাদেশের মানুষের সব গণতান্ত্রিক, মৌলিক অধিকার মানবাধিকার সব দলিত-মথিত করে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল করা হয়েছে। সমস্ত মৌলিক অধিকার কেড়ে নিয়ে ভোটাধিকার ডাকাতি করেছে ক্ষমতাসীনরা। দেশের সম্পদ লুটপাট করে বিদেশে পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে কাউন্সিলের নামে জনগণের সাথে ঠাট্টা করা হয়েছে।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘ জনগণ আশা করেছিল এ দেশের গণতন্ত্র কিভাবে ফিরে আসবে, বাংলাদেশের মানুষের ভোটাধিকার কিভাবে ফিরে আসবে, খুন-গুম-হত্যা প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে সরে আসার ইঙ্গিতের প্রত্যাশা করছিল জনগণ। গোটা জাতির প্রত্যাশা ছিল ২৯ ডিসেম্বর রাতে ভোট ডাকাতির জন্য তাদের অনুশোচনা হবে। এতে গণতন্ত্র উত্তরণের একটা পথ দেখানো হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন, রাজনৈতিক সংকট উত্তরণের জন্য কোনো দিক নির্দেশনা থাকবে। কিন্তু জাতি চরমভাবে হতাশ হয়েছে। কোন পথ কিংবা আশার আলো দেখাতে ব্যর্থ হয়েছে এই কাউন্সিল। ‘

রিজভী বলেন,’জাতিকে এই মিডনাইট সরকার যে গভীর সংকটে পতিত করেছে সেই সংকট উত্তরণের ইতিবাচক কিছু আসেনি। বরং শেখ হাসিনা সভাপতি ও ওবায়দুল কাদের সাহেব সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পর দিনই ঢাকা বিশ্বদ্যিালয়ে ছাত্রলীগ সমহিমায় আবির্ভূত হয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের নজিরবিহীন সন্ত্রাসী কায়দায় আক্রমণ করেছে, ছাত্রদের রক্তে রক্তাক্ত হয়েছে ক্যাম্পাস, চালের দাম ও পেঁয়াজের দামি বৃদ্ধি পেয়েছে, বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের হত্যার হিড়িক চলছে, বিচার বর্হিভূত হত্যা বৃদ্ধি পেয়েছে।’

তিনি বলেন,’একদলীয় শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে গত এক দশক ধরে তারা যে অপকর্মগুলো করে আসছে তারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল এই কাউন্সিলে। তাদের নেতা-নেত্রীদের বক্তব্যে ছিল একনায়কতন্ত্র ও ফ্যাসিবাদের জয়ধ্বনী। রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রের কোটি কোটি টাকায় খরচ করা এই কাউন্সিল জাতিকে আতঙ্কিত করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে রিজভী আরও বলেন,’ গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস ও সাধারণ সম্পাদক ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেন ও ছাত্রলীগের দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির হোতা রব্বানির নেতৃত্বে কথিত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতারা ভিপি নুরুল হক নুরু ও সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের নেতা-কর্মীদের ওপর নারকীয় হামলা চালিয়েছে। রক্তাক্ত হয়েছেন নুরসহ অন্তত: ৩০ জন শিক্ষার্থী। তাদের মধ্যে চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়েছে। মেধাবী ছাত্র তুহিন ফারাবি মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছেন। আমরা এই ন্যক্কারজনক হামলায় জড়িত ও চিহ্নিত ছাত্র নামধারী সন্ত্রাসীদের দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলু,সহ- সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল খালেকসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।