আ. লীগ পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে আছে: আলাল

২০০৯ সাল থেকে এই পর্যন্ত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে আছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল।

র‌বিবার (২১ জুন) সন্ধ্যায় বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন আয়োজিত এক ভার্চুয়াল সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।

আলাল বলেন, ২০০৯ সালের পিলখানা ট্রাজেডি থেকে আজকে পর্যন্ত বেগম খালেদা জিয়াকে বাড়ি থেকে উৎখাত করা, ইলিয়াস আলী সহ আমাদের লোকজনকে গুম করা, বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো, জিয়া পরিবারকে ধ্বংস করার উন্মত্ততা এবং জাতীয় পর্যায়ের বড় বড় দুর্যোগ- চুড়িহাট্টা অগ্নিকাণ্ড, কালশীতে মানুষ পুড়ে কয়লা হয়ে যাওয়া- একেকটি বড় দুর্ঘটনা আমাদের জাতীয় জীবনে এসেছে; এর শোক ভুলতে না ভুলতেই আরেকটি বড় দুর্ঘটনা আমাদের সামনে উপহার দিয়েছে এই অভদ্র অনির্বাচিত সরকার।

তিনি বলেন, মেডিকেল টার্ম অনুযায়ী যদি বলি তাহলে বলবো বাংলাদেশে ২০০৯ সালে এই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডারে আছে। এই ডিজঅর্ডার থেকে বেরোনোর জন্য যে সাহসী নেতৃত্ব, যে সোচ্চার কণ্ঠ দরকার, তা আমাদেরকে যথাসময়ে প্রয়োগ করতে হবে।

ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুকে উদ্দেশ্য করে আলাল বলেন, আপনি সরকারকে একটা মেসেজ পাঠান যে করোনা কিন্তু চরিত্রগতভাবে সাম্যবাদী। এটা কিন্তু শাসক-শোষক কাউকে বাছবিচার করে না। কখন কাকে ধরে বসবে ঠিক নাই, সুতরাং সাম্যবাদী করোনাকে গুরুত্ব দেন।

তিন হাজার কোটি টাকায় সারাদেশে পর্যাপ্ত পরিমাণে আইসিইউ বেড স্থাপন করা সম্ভব উল্লেখ করে সাবেক এই আইন প্রণেতা বলেন, দেশের সরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড নেই, বেসরকারি হাসপাতালে হাতেগোনা যা আছে তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল।

তিনি বলেন, এই বাংলাদেশের মতো জায়গায় আমরা হিসাব করে দেখেছি উপজেলা পর্যায়ে যদি পাঁচটি করে আইসিইউ বেড করা হয় এবং জেলা পর্যায়ে যদি কুড়িটি করে করে আইসিইউ বেড করা হয় তাহলে সর্বমোট অক্সিজেন এবং ভেন্টিলেটরসহ খরচ লাগে মোট মাত্র তিন হাজার কোটি টাকা। কিন্তু কষ্ট লাগে মুজিববর্ষে আতশবাজি উড়িয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা উড়ানো হয়, সোফিয়া নামক রোবট এনে ১২ হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়, জিয়াউর রহমান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নাম পরিবর্তন করতে হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ করা হয়। পানামা পেপারস কেলেঙ্কারিতে কাজী জাফরুল্লাহর হাজার কোটি টাকার কথা আসে, জি কে শামীম তারা এখন কোথায়?

বিএনপি’র এই নীতিনির্ধারক আরো বলেন, বিএনপি তার সর্বাঙ্গীণ শক্তি যতটুকু ছিল সবটুকু তারেক রহমান সাহেবের নির্দেশনায় কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা চালিয়েছে।  আমরা আমাদের আন্তরিকতা প্রমাণ করেছি। এই অনুষ্ঠান টেলিভিশনে অনুষ্ঠিত হলে আমি দুজন লোকের কাছে কৈফত চাইতাম! অনির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমামের কাছে যে কেন সাতক্ষীরায় বিএনপি’র ত্রাণ কার্যক্রমের উপর হামলা হলো? এটা আওয়ামী লীগ করলো, নাকি আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা করেছে। দয়া করে বলুন তারপর আমি জানতে চাইব, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মাহবুবুল আলম হানিফ সাহেবের কাছে কারণ উনিও তো ওই অঞ্চলের নেতা সাতক্ষীরার পাশে তিনি কানাডায় চলে গেছেন এখন আমরা কাকে জিজ্ঞেস করবো?

আলাল বলেন, এখন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদকে জিজ্ঞেস করতে হয়, কিন্তু হাসান মাহমুদ সাহেব যা যা বলেন তাতে তো আমাদের ওই পুরান ঢাকার যারা ঘোড়ার গাড়ি চালায় তারা হাসে।

তিনি বলেন, এই অবস্থার মধ্য দিয়ে আমরা চলছি। মানুষের জীবন নিয়ে যে তান্ডব চালানো হচ্ছে যে অবহেলাটা করা হচ্ছে। আজকের পত্রিকায় আছে আজিমপুর কবরস্থানে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। পোস্তগোলা শ্মশান থেকে শুরু করে ঢাকার সমস্ত শ্মশান গুলোতে দাহ করার মত জায়গা হচ্ছে না। কোন দিকে আমাদেরকে ঠেলে নিয়ে নেয়া হচ্ছে। ডেমোক্রেসি ডিভিডেন্ট বলতে একটা কথা আছে যে, জনসংখ্যার সমষ্টিকে ভালো কাজে লাগানো যেটা জিয়াউর রহমান করেছিলেন হাজার হাজার শ্রমশক্তি রপ্তানি করে।

করোনা প্রেক্ষাপটে দলের কার্যক্রম সম্পর্কে আলাল বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় নিবিড়ভাবে এবং নিয়মিতভাবে এগুলো পর্যবেক্ষণ করছেন এবং একই সঙ্গে ইকবাল মাহমুদ হাসান টুকু ভাই এখানে আছেন নিয়মিত আমাকে তাগিদ দিচ্ছেন।

তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া এবং তারেক রহমান দূরদৃষ্টির মধ্য দিয়ে দেখতে পেরেছিলেন। সরকার তখন মুজিববর্ষ নিয়ে বিভিন্ন আলোকসজ্জা উপলক্ষে মানুষের কাছ থেকে টাকা-পয়সা নেয়ার চেষ্টায় মত্ত ছিল। আপনাদের পরিষ্কার মনে আছে, বাংলাদেশের চায়নার রাষ্ট্রদূত তিনি ডিসেম্বর মাসে প্রেস কনফারেন্সে পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছিলেন বাংলাদেশের এয়ারপোর্ট এবং ল্যান্ড পোর্ট গুলোকে থার্মাল স্ক্যানিংয়ের ব্যবস্থা করেন। আমরা দেখলাম সেটা অনেক বিলম্বে শুরু হল এবং ঢাকায় এয়ারপোর্টের তিনটা থার্মাল স্ক্যানিং এর মধ্যে দুইটাই দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল।

বিএনপি’র কেন্দ্রীয় কারোনা পর্যবেক্ষণ সেলের আহ্বায়ক ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নেতা জহির উদ্দিন স্বপনের সঞ্চালনায় আলোচনায় দলের ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডাক্তার এজেডএম জাহিদ হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য অধ্যাপক ডাক্তার ফরহাদ হালিম ডোনার, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী আহমেদ এ সময় বক্তব্য রাখেন।