রিজেন্ট হাসপাতালের অপকর্ম সরকারের মদদেই :ফখরুল

রিজেন্ট হাসপাতালের অপকর্ম সরকারের মদদেই হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বৃহস্পতিবার (৯ জুলাই) এক ভার্চুয়াল আলোচনায় বিএনপি মহাসচিব এই অভিযোগ করেন।

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘একটা হাসপাতাল কি করে একটা মিথ্যা সার্টিফিকেট দিতে পারে। কালকে আমি এ যে দেখলাম একাত্তর টেলিভিশনে- আমাদের সমস্ত মন্ত্রীরা তার (রিজেন্ট হাসপাতালের কর্ণধার মো. সাহেদ) সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে পরিচিত, অত্যন্ত ঘনিষ্টভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলছেন, কাজ করছেন। অর্থাৎ পুরোপুরি সরকারের মদদ নিয়ে এই অপকর্মটা তারা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সকালে উঠে শুনতে হয় মৃত্যুর খবর আবার রাতে শোয়ার আগেও শুনতে হয় মৃত্যুর খবর।এভাবে মহামারীতে মৃত্যু হবে কিন্তু তা কোনো রকমের প্রতিরোধ গড়ে উঠবে না এবং চরম উদাসীনতার মধ্য দিয়ে, অবহেলার মধ্য দিয়ে সরকার মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেবে- এটা কখনো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই অবস্থা থেকে তাই মুক্তি পেতে হলে আমাদের জনগণের মতামতকে যদি সত্যিকার অর্থেই গুরুত্ব দিতে হয়, সত্যিকার অর্থেই যদি একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র আমরা তৈরি করতে চাই, সত্যিকার অর্থেই একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র আমরা নির্মাণ করতে চাই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কোনো বিকল্প নাই, সেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোকে গণতন্ত্রকে রক্ষা করবার জন্য, জনগনের অধিকারকে রক্ষা করবার জন্য তাদের আজকে একটা জায়গায় আসতে হবে এবং নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে শুদ্ধ করে আনার জন্যে নির্বাচনকালীন সময়ে নিরপেক্ষ কালীন সরকার এবং এই সরকারকে চলে যেতে হবে-এই দাবি তুলতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাজনৈতিকদলের নিবন্ধন আইনের সংশোধনের উদ্দেশ্য একটাই- সেটা হচ্ছে আওয়ামী লীগকে বার বার ক্ষমতায় নিয়ে আসা, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় রাখা। নির্বাচন কমিশন তারা তাদের দায়িত্ব পালন করছে, তারা তাদের প্রভুদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য সমস্ত আইন তৈরি করছে।’

‘আমরা আসুন আমাদের দায়িত্ব পালন করি। জনগণের কাছে আমাদের যে কমিটমেন্ট আছে, সেই কমিটমেন্ট নিয়ে আমরা ঐক্যবদ্ধ হই এবং এই সরকারকে চলে যেতে বাধ্য করি নির্বাচন কমিশন নতুন করে গঠন করার প্রক্রিয়া শুরু করতে পারি।’

আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা এবং তাদেরকে ক্ষমতায় রাখার প্রক্রিয়াটি ২০০৭ সালের এক-এগারোর সেনা সমর্থিত সরকার থেকে শুরু হয়ে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এই প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে এক এগারো থেকে। বিরাজনীতিকরণের একটি প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো অত্যন্ত পরিকল্পিতভাবে রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে, রাজনৈতিক দলগুলোকে একেবারে অকার্য্কর করে। এখনো পরিকল্পিতভাবে সচেতনভাবে সেই কাজ চলছে।’

লক্ষ্য করে দেখা যাবে যে, ২০০৮, ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচন একইভাবে নির্বাচন কমিশনগুলো তাদের দায়িত্ব পালন করেছে সেই দায়িত্বটা ছিলো যে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় নিয়ে আসা। সংবিধান থেকে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা বাতিল করার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থাকে ভেঙে দিয়ে ক্ষমতাসীন দলকে ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

একই অনুষ্ঠানে নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এখন বড় ক্রাসিস হচ্ছে- এক কোটি থেকে আরো বেশি লোক বেশি দরিদ্র হয়ে গেছে, দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। প্রতিদিন দৃশ্যমান ন্যুনতম ১০/২০ পরিবার ঢাকা থেকে  বাইরে চলে যাচ্ছে। এদের সেইভ করা হবে কিভাবে? সরকারের কোনো প্ল্যান নেই।’

সরকারের প্রণোদনা নিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই যে বলতো না- আকাশ দিয়ে উড়ে গেলে নিচে ঢাকার দিকে তাকালে লস অ্যাঞ্জেলসের মতো শহর মনে হয়। সব উন্মাদ কতগুলো ফরটোয়েন্টি ভদ্রলোক মন্ত্রী-টন্ত্রী হয়েছেন এবং উনারা একটার পর একটা কথা বলে যাচ্ছেন। এখন দেখা যাচ্ছে- সরকারের কাছে কোনো টাকাই নেই্। সরকার টাকার জন্য কী করছে? প্রধানমন্ত্রী নিজেও বলেছেন, দেখেন তো ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভ থেকে নেয়া যায় কিনা। ক্যান ইউ ইমাজিন দেশ কত বড় ক্রাসিসে পড়লে ফরেন এক্সচেঞ্জ রিজার্ভে হাত দিতে চায়।’

মান্না বলেন, ‘আপনি এখান থেকে অনুমোদন দিয়েছেন হসপিটাল চালানোর জন্য, তাকে টেস্ট করতে দিয়েছে এই করোনা ভাইরাসের এবং তার ফিকস্ট করা লোকজন বাইরে গেছে, গিয়ে ধরা খেয়েছেন…। সারা দুনিয়াতে বদনাম হয়েছে।’

মানা আরও বলেন, ‘সেই (সাহেদ) লোকটা যে আওয়ামী লীগের একজন মদদপুষ্ঠ লোক, আওয়ামী লীগের উচ্ছিষ্ট লোক। আর সে রীতিমতো গানম্যানসহ পুলিশ প্রটেকশন নিয়ে পেতো। সরকার তাকে তৈরি করেছে। এরকম একটা দুইটা না। আপনার এন-নাইটি ফাইভ যারা করেছে তারাও। মানুষের যখন মৃত্যুর আহজারি, ক্ষুধার্তের আর্তনাদ সেই সময়ে মানবতার সাথে এতো বড় বেইমানী করার দল পৃথিবীতে বেশি নাই।’

বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশনের উদ্যোগে ‘রাজনৈতিক দলসমূহের নিবন্ধন আইন: করোনা ভাইরাস বিপর্য়য়ের মধ্যে নির্বাচন কমিশনের আবারো সংবিধান বিরোধী পদক্ষেপ’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল আলোচনা সভা হয়। আলোচকরা নিজ নিজ বাসা থেকে এই আলোচনায় যুক্ত হন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সাবেক সাংসদ জহিরউদ্দিন স্বপনের পরিচালনায় আলোচনায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসুর মাহমুদ চৌধুরী, বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক বজলুর রশীদ ফিরোজ ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব আবদুর রশিদ সরকার বক্তব্য রাখেন।