৫ দিনের মধ্যে ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের নির্দেশ নানকের

আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ঢাকা-৫ আসনের উপনির্বাচনি এলাকায় প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠনের নির্দেশ দিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ও ঢাকা-৫ উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক।

তিনি বলেন, বিএনপি কিন্তু এবারের নির্বাচনকে ঘিরে গাঁটছাড়া বেঁধে নেমেছে। শুধু এই জায়গা নয়, তারা প্রত্যেকটি উপ নির্বাচনে অংশ নেবে। নির্বাচনকে তারা একটা আন্দোলনের হাতিয়ার হিসাবে এবং তাদের রাজনীতির একটা কূটকৌশল হিসাবে গ্রহণ করেছে। আমি নৌকা পেয়েছি সেই কারণে জিতে যাবো। এই ধ্যান-ধারণাটা মাথার ভিতর থেকে নামিয়ে দেয়ার ফেলতে হবে।

রবিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঢাকা-৫ আসনে নৌকার প্রার্থী কাজী মনিরুল ইসলামের নির্বাচনী কার্যালয় মিরহাজীরবাগ দেশ কাজী টাওয়ারে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।  ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবু আহমেদ মান্নাফীর সভাপতিত্বে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রাখেন সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে   সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম।

প্রসঙ্গত, আসন্ন ৩টি উপ-নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন পরিচালনায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের ৫জন নেতাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। এই দায়িত্ব প্রদানের অংশ হিসাবে রবিবার সন্ধ্যা ৭টায় রাত সাড়ে দশটা পর্যন্ত ঢাকা-৫ আসনের নৌকার প্রার্থীর প্রধান নির্বাচনি কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী মোর্শেদ কামালসহ যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতারা মতবিনিময় করেন।

আওয়ামী লীগের সভাপতির পক্ষে নির্বাচনি দায়িত্ব প্রদানের কথা জানিয়ে জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, মূলত নির্বাচনি কাজটি আমরা আজকে থেকে শুরু করলাম। এই নির্বাচনের পারিপারশ্বিক পরিস্থিতি এই নির্বাচনি আবহাওয়া,এই নির্বাচন কোন পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, সবাই আমরা জানি।

তিনি করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরে বলেন, মানুষ সহসাই ঘর থেকে বের হতে চায় না।এমন একটি পরিস্থিতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। অনেক ভোটারের বাড়িতে যাবেন, বসবেন, বাড়িতে ঢোকার অনুমতি দিচ্ছে না। তাহলে আমাদের নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণার কৌশল কি হবে? নির্বাচনটি আমাদেও কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এবারের নির্বাচন কিন্তু প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ নির্বাচন হবে। বিএনপি কিন্তু এবার নির্বাচনকে ঘিরে গাঁটছাড়া বেঁধে নেমেছে। শুধু এই জায়গা নয়, তারা প্রত্যেকটি উপ নির্বাচনে অংশ নেবে।সব মিলিয়ে নির্বাচনকে কিন্তু তারা একটা আন্দোলনের হাতিয়ার হিসাবে, তারা তাদের রাজনীতির একটা ক’টকৌশল হিসাবে গ্রহণ করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন কিন্তু খুব স্পর্শকাতর হয়ে যেতে পারে।

তিনি আরও বলেন, আমাদের মস্তিষ্কে যদি থেকে থাকে, নির্বাচনে আমি প্রার্থী হয়েছি, সে কারণে আমি জিতে যাবো। আমি নৌকা পেয়েছি সেই কারণে জিতে যাবো। এই ধ্যান-ধারণাটা মাথার ভিতর থেকে নামিয়ে দেয়ার ফেলার জন্য অনুরোধ করছি।

নির্বাচন পরিচালনার বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে নানক বলেন, ৫দিনের মধ্যে ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে। যেখানে আওয়ামী লীগের পূণাঙ্গ ওয়ার্ড কমিটি নাই সেখানে আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করতে হবে এবং এই ওয়ার্ড পরিচালনা কমিটি যখন গঠন করবেন, তাদের ভিতর থেকে ভাগ ভাগ করে দায়িত্ব দিয়ে একটি কেন্দ্রের দায়িত্ব দিতে হবে। বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। তবে কমিটি করার সময় আমরা যেন আমাদের শুধু ভাতিজা, ভাগ্নে, শ্যালক, শ্যালার শালা;বাড়ির কামলাকে যেন না বানাই; এগুলো যেন না করি।

কমিটিগুলো গঠন করার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ৫দিনের মধ্যে ওয়ার্ড অফিসও আমরা দেখতে চাই। আমরা ৫দিন পরে ফোন দেয়া শুরু করবো। আমাদের কাছে সকলের ফোন নাম্বার আছে। কমিটি হয়েছে, না হয় নাই, অফিস হয়েছে, না হয় নাই। যদি বলেন হয়েছে, তাহলে বলবো, মাগরিবের নামাজ আপনার এলাকার মসজিদের মধ্যে আদায় করবো।

দুই থানায় দুইটি নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন করার নির্দেশ দেন। সে কমিটি দুইটা আগামীকালের মধ্যে গঠন করতে হবে বলেও জানান নানক। পাশাপাশি যারা দায়িত্ব পালনে অবহেলা করবে, তাদেরকে আগামী কমিটিতে রাখা যাবে না। কাউন্সিলরদের ওয়ার্ড কমিটির সঙ্গে যুক্ত করতে হবে এবং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাথে যুক্ত হয়ে সমস্ত নির্বাচনি কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করতে হবে।এছাড়া সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোকে আলাদা করে কমিটি গঠন করে নির্বাচন পরিচালনার কাজে সম্পৃক্ত হওয়ার গাইডলাইন দেন। সব জায়গায় ঘোরাঘুরি করার দরকার নাই। নিজ নিজ এলাকায় সম্পৃক্ত থেকে সুপারভিশন করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি বলেন, ৫দিনের মধ্যে ওয়ার্ড নির্বাচন পরিচালনা কমিটি করবেন, সেই ওয়ার্ড কমিটি গঠন করার সময় আপানদের খেয়াল রাখতে হবে, চিহ্নিত করে রাখতে হবে। কে ভোটারদের কাছে গিয়েছে, কে কি কাজ করেছে? সেই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে রাখতে হবে। তাদেরকে পরবর্তীতে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কমিটিতে স্থান করে দিতে হবে।

নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় মহিলা নেতাকর্মীদের কাজে লাগাতে দুইটি থানার সাধারণ কর্মীসভা করার নির্দেশনাও দেন। এই নির্বাচনে আমরা যদি পরাজিত হই, নৌকা যদি পরাজিত হয় তাহলে কি ক্ষমতাচ্যুত হয়ে যাবে আওয়ামী লীগ? কিন্তু মারাত্মক ক্ষতি হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে সেই বিএনপি বিদেশীদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে, এই দেখো, আওয়ামী লীগ জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কাজেই এই নির্বাচনগুলি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সেই কারণে নেত্রী চুলচেরা বিশ্লেষণ করে মনোনয়ন দিয়েছেন। আপনারা অনেকে প্রার্থী ছিলেন। অনেকে এখানে উপস্থিত আছেন। যিনি প্রার্থী হয়েছেন তিনি কলঙ্কবিহীন একটি মানুষ। নেত্রীর যে শতভাগ আস্থা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেই সিদ্ধান্তকে আপনারা স্বাগত জানিয়েছেন।

ঢাকা-৫ আসনে দলীয় প্রার্থীর নির্বাচন পরিচালনায় যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনুর রশীদ মুন্নাকে নির্বাচন পরিচালনার প্রদান করেন তিনি।

মনোনয়ন প্রাপ্ত হয়ে প্রয়াত হাবিবুর রহমান মোল্লার বাড়িতে দেখা করার জন্য তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য নৌকার প্রার্থীর কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে ধন্যবাদও জানান তিনি।

দলীয় নেতাদের উদ্দেশে বলেন, আমাদের দুজনের কিন্তু খারাপ অভ্যাস বা খাসিলত আছে, সেই খাসিলতটি হলো যখন যে কাজে নামি, সেইটা নিয়েই নামি। তাই আপনারা সবাই ওয়ার্ড ওয়ার্ড অফিসে থেকে উপস্থিত থেকে কাজ করবেন, ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে কাজ করবেন। যদি নির্বাচনি বিধিনিষেধ না থাকে তাহলে প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে নির্বাচনি সভা করতে হবে। আগামী নির্বাচনে আমরা বিপুল ভোটে জয়লাভ করবো। কারণ আমরা জননত্রেী সরকার এই ডেমরা যাত্রাবাড়ীর মানুষকে যা দিয়েছেন মানুষ নৌকার সাথে শেখ হাসিনার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।