দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে নেতাদের মাঠে চায় বিএনপি

দেশের জনসাধারণের সাথে সম্পৃক্ত হবার জন্য বিএনপির হাইকমান্ড তাদের নেতাদের মাঠে দেখতে চায়। তাদের এ বার্তা আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি অংশ। তবে এখনো নির্বাচনের বাকি আগামী ২ বাছর ৪ মাস। গুঞ্জন রয়েছে দলটির যে সকল নেতারা নির্বাচনী আসনের জন্য সিট চেয়েছে তাদের ব্যক্তিগত ভাবে নির্দেশ দিয়ে চিঠি দেওয়া হয়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে নিজ নির্বাচনি এলাকায় করোনা আক্রান্তদের পাশে থাকার আহ্বান জানানো হয়। নির্বাচনি আসনের নাম উল্লেখ করে গত নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য আবেদনকারী নেতাদের কাছে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়নের জন্য আবেদনকারীকে নিজ জেলা/মহানগর বিএনপির করোনা হেল্প সেলের কার্যক্রমে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রদান করবেন। একই সঙ্গে নিজ নির্বাচনি এলাকায় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে নিজ উদ্যোগ ও ব্যবস্থাপনায় করোনা আক্রান্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানানো হয়।

সূত্র জানায়, নিজ নির্বাচনি এলাকায় করোনা আক্রান্তদের পাশে থাকার কথা চিঠিতে বলা হলেও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে নেতাদের এখন থেকেই সক্রিয় রাখাই হচ্ছে বিএনপির মূল উদ্দেশ্য। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য যারা আবেদন করেছিলেন তাদের সবার কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এই চিঠি তারা পেয়েছেন কিনা-তা কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ফোন করে নিশ্চিত করা হয়েছে। মাঠে থেকে জনগণের পাশে দাঁড়ানোসহ কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। নিজ নির্বাচনি এলাকায় কেন্দ্রের নির্দেশনা মতো প্রার্থীরা কাজ করেছেন কিনা- তাও মনিটরিং করবে কেন্দ্রীয় দপ্তর। সে অনুযায়ী সক্রিয় থাকা নেতাদের তালিকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের কাছে পাঠাবেন।

জানতে চাইলে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য আবেদনকারী অনেকে করোনার শুরু থেকেই নিজ নির্বাচনি এলাকার মানুষের পাশে রয়েছেন। গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য আবেদনকারী সবাইকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে যারা মারা গেছেন, বহিষ্কার হয়েছেন কিংবা দলবদল করেছেন তাদের চিঠি দেওয়া হয়নি। তবে এদের সংখ্যা একবারেই কম।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য জানান, গত নির্বাচনে ২৪১টি আসনে বিএনপি দলীয় মনোনয়ন দেয়। বাকি আসন ছেড়ে দেওয়া হয় ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শরিকদের। এবারও নির্বাচনের আগে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতেই ঠিক করা হবে শরিকদের কতটি আসনে ছাড় দেওয়া হবে। তবে আগামী নির্বাচনে বিএনপির তিনশ আসনের টার্গেট নিয়েই সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আপাতত গত নির্বাচনে মনোনয়নের জন্য আবেদনকারী নেতাদের সক্রিয় করা হচ্ছে। কারণ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়া মূল প্রার্থীদের অনেকে এবার বাদ পড়তে পারেন। আবার কয়েকজন মারা গেছেন, দু-একজন দলবদলও করেছেন। এবার প্রাধান্য দেওয়া হবে নির্বাচনি এলাকায় যার জনপ্রিয়তা বেশি, জনগণের পাশে থেকে যিনি কাজ করেছেন, দলীয় নেতাকর্মীরা দুর্দিনে যাকে পাশে পেয়েছেন এমন নেতাদের। প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কয়েকটি বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে জরিপেরও পরিকল্পনা রয়েছে। ডিসেম্বরের আগেই প্রথম জরিপের পরিকল্পনা আছে। সব কিছু মিলে চূড়ান্ত প্রার্থী ঠিক করা হবে।

স্থায়ী কমিটির ওই সদস্য আরও জানান, বিএনপির ৯০ থেকে ১০০ জনের মতো সিনিয়র ও মধ্যম সারির নেতা আছেন যাদের নির্বাচনি আসন আগে থেকেই নির্ধারণ করা আছে। আগামী নির্বাচনে এসব আসনে তারাই মনোনয়ন পাবেন এটা নিশ্চিত। বাকি আসনগুলোর ক্ষেত্রে চূড়ান্ত প্রার্থী ঠিক করতে যাচাই-বাছাই করা হবে।

সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নানা ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি। দ্রুতই সাংগঠনিক পুনর্গঠনের কাজ শেষ করতে চায় দলটি। পরে আন্দোলনের ডাক দেওয়ার পরিকল্পনাও করা হচ্ছে। তবে সবার আগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) পুনর্গঠনের দিকে বেশি নজর দলটির। এ ইস্যুতে সরকারবিরোধী দলগুলো সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে চলার চিন্তা করছেন নেতারা। এর অংশ হিসাবে ইসি পুনর্গঠনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেওয়ার কথাও ভাবা হচ্ছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ও ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বরের দিকে খেয়াল করলেই বোঝা যাবে, শুধু নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেই যে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে নিরপেক্ষ সরকারের কোনো বিকল্প নেই। এটিই আমাদের মূল দাবি। বৃহস্পতিবার এক অনুষ্ঠানেও এসব দাবি আদায়ে নেতাকর্মীদের আগাম আন্দোলনের প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কূটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছেন বিএনপির দায়িত্বশীলরা। এরই মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ দুই দেশের কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন দলের দায়িত্বশীল দুই নেতা। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপির এক ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ২০২৩ সালের শেষ দিকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা রয়েছে। দেশে ভোটের যে সংস্কৃতি চালু হয়েছে, তার সমাধান শুধু মুখে মুখে সম্ভব নয়- এটা প্রমাণিত। এ অবস্থায় আন্দোলনই একমাত্র বিকল্প পথ। আর সেই আন্দোলনকে কার্যকর পর্যায়ে নিয়ে যেতে বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন হবে। তাই এখন থেকেই সেই প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। এরই অংশ হিসাবে সম্ভাব্য প্রার্থীদের সক্রিয় করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।