পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের মধ্যেই শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন: সালমান এফ রহমান

পদ্মা সেতু নিয়ে ষড়যন্ত্রের মধ্যেই শেখ হাসিনা সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আমি তখন তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে ছিলাম। ষড়যন্ত্র যেটা হয়েছে, এটা সত্য। এটা খুবই গভীর মূলের ষড়যন্ত্র ছিল। এটা এমন ছিল না যে, কেউ কাউকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য এমন করেছে। ষড়যন্ত্র ছিল বাংলাদেশে যেন এত বড় অবকাঠামো না হয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।

তিনি বলেন, আর মাত্র তিন দিন পরেই উদ্বোধন হতে যাচ্ছেন স্বপ্নে পদ্মা সেতু। অনেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করলেও শেষ পর্যন্ত তার অনিচ্ছায় ‘পদ্মা সেতু’ নামেই যাত্রা শুরু হচ্ছে দেশের দীর্ঘতম এই সেতুর। তবে সেতুতে নাম থাকুক আর নাই থাকুক, এর নাম ‘শেখ হাসিনা সেতু’ বলে মনে করি।

মঙ্গলবার (২১ জুন) রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক উপ কমিটি আয়োজিত জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর গুরুত্ব শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।

বিশ্ব ব্যাংকের অভিযোগ ভিত্তিহীন ছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘কাজ তখনও শুরু হয়নি, কনস্ট্রাকশন শুরু হয়নি; তারা (বিশ্বব্যাংক) বলছে কনসালটেন্সিতে দুর্নীতি হয়েছে। যেটা (কনসালটেন্ট) তখন নিয়োগই করা হয়নি। সেটা করার আগেই দুর্নীতি করার নাকি ইচ্ছা ছিল! দুর্নীতি হয়েছে -এমনটাও অভিযোগ ছিল না তাদের। দুর্নীতি করার ইচ্ছা ছিল, এই ভিত্তিতে তারা অর্থায়ন বন্ধ করে। তাতে বোঝা যাচ্ছে, এই সেতু যেন বাংলাদেশ না করতে পারে সেটাই ছিল মূল উদ্দেশ্য।’

সালমান এফ রহমান বলেন, কানাডার আদালত পর্যন্ত গড়ালো বিষয়টা। সেখান থেকে রায় আসলো যে, কোনও দুর্নীতি হয়নি। সেই সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাহস করে বললেন, তাদের টাকার দরকার নেই, আমরা নিজের টাকায় করবো। তখন সরকারের অনেকেই বলেছিল যে, না এরকম না করার জন্য, বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ঝামেলা না করার জন্য, তাদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রাখা উচিত। আমাদের মধ্যেই কয়জন ছিল যে, নিজের টাকায় সেতু করতে বাধা দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী তখন বলেছিলেন, যে বিশ্বব্যাংক টাকা দিবে না, তোমরা চেষ্টা করছো করো, কিন্তু আমি বলে দিচ্ছি বিশ্ব ব্যাংক টাকা দিবে না। ঠিকই দিলো না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের বললেন, আমাকে খামোখা ছয় মাস পেছালে। আমি তো আগেই এটা করতে পারতাম।

বিএনপি পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক সমালোচনা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা (বিএনপি) আগে বলেছে, সেতু ভেঙে যাবে, পড়ে যাবে, এটা কনস্ট্রাকশন করা যাবে না। যখন কনস্ট্রাকশন হয়ে গেল তখন তারা ক্রেডিট নিতে চাইলো যে, এটার ভিত্তিপ্রস্তর তারা করেছে। কিছুদিন আগে তাদের আমলের যোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা বিবৃতি দিলেন যে এমন কিছু হয়নি। বিএনপি কী বলছে, সেটা নিয়ে যত কম কথা বলা যায় ততো ভালো।

সালমান এফ রহমান বলেন, ‘আমি সেদিন পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়ার একটি পোস্ট দেখছিলাম। সেটি প্রধানমন্ত্রীকে ফরোয়ার্ড করেছিলাম। যে তারা কীভাবে দেখছে। কয়েকদিন আগে আমাকে একজন পাকিস্তানি ব্যবসায়ী বলছিলেন যে, শেখ হাসিনা পাকিস্তানের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা হয়ে গেছেন। আমি বলবো- প্রধানমন্ত্রীর নাম থাকুক আর না থাকুক এটি শেখ হাসিনা সেতু।’

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম মেম্বার ও এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা কাজী আকরাম উদ্দিন, এফবিসিসিআই সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সিনিয়র সহ সভাপতি সালাম মুর্শেদী, এফবিসিসিআই সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, সিনিয়র সাংবাদিক মনজুরুল আহসান বুলবুল, গ্লোবাল টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, একাত্তর টেলিভিশনের প্রধান সম্পাদক মোজাম্মেল হক বাবু প্রমুখ।