ঈদে নিজের ছেলেমেয়েদের কিছু কিনে না দিয়ে সেই টাকা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দদের দিতেন বঙ্গমাতা ‘

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, ১৪ দলের মুখপাত্র ও সমন্বয়ক আমির হোসেন আমু বলেছেন, বঙ্গবন্ধু যখন জেলে থাকতেন তখন বঙ্গমাতা আমাদের পরামর্শের পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা করতেন। ঈদের সময় নিজের ছেলেমেয়েদের কিছু কিনে না দিয়ে সেই টাকা ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দদের দিতেন। তিনি প্রেরণা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর রাজনীতিকে এগিয়ে গিয়েছেন।তিনি বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবে কখনো নিজের প্রাপ্যটা নেননি, নেওয়ার চেষ্টা করেননি। তিনি খুব সাদামাটাভাবে নিজের জীবন পরিচালনা করেছেন। আর আড়ালে থেকে দলের কর্মকান্ড পরিচালনা করেছেন।

তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন কারাগারে যেতেন তখন তিনি আমাদের উৎসাহ দিতেন। আমাদের সাহস দিতেন, পরামর্শ দিতেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে কারাগারে দেখা করার পর তিনি তার যাবতীয় নির্দেশনা আমাদের কাছে পৌছে দিতেন এবং পরামর্শ দিয়ে আমাদের কাজ করার জন্য সহযোগিতা করতেন। ৬ দফার সময় তিনি আমাদের সাহস দিয়েছেন। তিনি কখনো বিচলিত হতেন না,কান্না করতেন না।

সোমবার (৮ আগস্ট) বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব এর ৯২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরস্থ বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে বাংলাদেশ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আমু বলেন, মাত্র আট বছর বয়সেই বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের সাথে বঙ্গবন্ধু বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু তখন কোলকাতায় পড়াশোনা করতেন। তিনি কোলকাতায় যাওয়ার সময় বঙ্গমাতা কোন দাবি বা আবদার তার কাছে করতেন না।উল্টো নিজের জমানো টাকা তাকে দিয়ে দিতেন। তখন থেকে বঙ্গমাতা বঙ্গবন্ধুর প্রতি সহণশীল ছিলেন। সব কিছুতে তিনি তাকে সহযোগিতা করতেন। বঙ্গমাতা তার কৈশর ও যৌবন স্বামী ছাড়াই কাটিয়েছেন। কারণ বঙ্গবন্ধু তখন হয় কারাগারে না হয় আন্দোলন সংগ্রাম নিয়ে ব্যস্ত থাকতেন। তিনি বঙ্গমাতাকে সময় দিতে পারতেন না। এ জন্য বঙ্গমাতার কোন আফসোসও থাকতো না। তিনি হাসি মুখে সব বরণ করে নিতেন।

তিনি বলেন, ৭ মার্চের ভাষনের আগে অনেকেই অনেক কিছু ভাষনে বঙ্গবন্ধুকে বলতে বলেছিলো। বেগম মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধুকে বলেছেন, তুমি এত বছর রাজনীতি করেছো একটা লক্ষ ও উদ্দেশ্য নিয়ে। তুমি জানো তুমি কি চাও, তুমি ভাষনে তোমার কথা বলবে। কারও কথায় কান দিওনা। আবার আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হলে তখন তারা সিদ্ধান্ত নেয় বঙ্গবন্ধুকে প্যারোলে মুক্তি দিবে। আওয়ামী লীগ আইয়ুব খানের প্রস্তাব গ্রহণ করলেও বঙ্গমাতা বলেন শেখ মুজিবের সাথে আরো ৩৪ জন বন্দি রয়েছে তাদের কি হবে। তাদের প্যারোলে না সম্মানে মুক্তি দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু বের হলেন না, কিছুদিন পর সকলে সন্মানে মুক্তি পেলেন।

তিনি আরও বলেন, বিএনপি তাদের আন্দোলনে অনেক চেষ্টা করেও মানুষ আনতে পারেনি। বাংলার মানুষ তাদের ষড়যন্ত্র বুঝতে পেরেছে। করোনায় অনেক দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দক্ষ নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ ভালো ছিলো। বর্তমানে ইউক্রেন রাশিয়া যুদ্ধের কারণে সাময়িক অসুবিধা হলেও তা কাটিয়ে উঠতে পারবো। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। সামনে আরও এগিয়ে যাবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের লড়াই-সংগ্রামে তার পাশে বঙ্গমাতা শুধু স্ত্রী হিসেবে নয় একজন সহযোদ্ধা হিসেবে পাশে ছিলেন। তিনি তাঁর পরিবারের সকল সদস্যের দায়িত্বসহ জাতির পিতার প্রাণ প্রিয় সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের দুর্দিনে দায়িত্ব নিয়ে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন এবং পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে দলকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ইতিহাসের পাতায় একজন মহীয়সী নারী। তিনি একজন সাহসী নারী হিসেবে সারা বিশ্বে পরিচিত। তার কর্মময় জীবন, সাহসিকতা, দায়িত্ববোধ, নীতি আদর্শের জন্য স্মরণীয় হয়ে আছেন সকলের কাছে। তার সম্পর্কে আলোচনা করে শেষ করা যাবে না। তিনি ইতিহাসের পাতায় চিরস্মরণীয়।

বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, মাত্র ৮ বছর বয়সে জাতির পিতার সাথে পারিবারিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন বঙ্গমাতা। তিনি ছিলেন তার ভাই-বোনদের মধ্যে সবার ছোট। উনার নাম ছিল রেনু। আজকে তিনি রেণু থেকে হয়ে উঠেছেন মাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। এটি সম্ভব হয়েছে তার সততা, নিষ্ঠা ও আদর্শময় জীবনের কারণে। ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট জাতির পিতাকে যখন খুনির দলেরা হত্যা করে তখন তিনি খুনিদের কাছে প্রাণে বাঁচার জন্য একবারও আকুতি প্রকাশ করেননি। তিনি সেদিন সাহসিকতার সাথে দাড়িয়ে খুনিদের বলেছিলেন,তোমরা যখন জাতির পিতাকে হত্যা করেছ, তোমরা আমাকেও হত্যা করো।

তিনি বলেন, বঙ্গমাতা শুধু সারাজীবন নয় মরণেও জাতির পিতার সহযাত্রী হয়েছিলেন।আমাদের তার জীবন ও কর্মকাণ্ড থেকে এ শিক্ষা নিতে হবে যে কিভাবে মানুষকে ভালবাসতে হয়, কিভাবে পরিবারের সদস্যদের মানুষ করতে হয়, কিভাবে নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াতে হয়। জাতির পিতা যখন কারাগারে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছিলেন তখন জাতির পিতার লক্ষ বাস্তবায়ন করতে বঙ্গমাতা লড়াই করেছেন। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাশে থেকে সাহস দিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, একজন মানুষ যদি সাহসী হয়, একজন মানুষ যদি সত্যিকার অর্থে আদর্শবান হয়, তিনি যদি হন নারী, আমাদের অনুপ্রেরণা ও শক্তিদাতা তিনি হলেন বঙ্গমাতা। যার অনুপ্রেরণায় জাতির পিতা আমাদের সোনার বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছিলেন। আমরা পেয়েছি স্বাধীনতা। আমরা জাতির পিতার আদর্শের কর্মী। আগামী দিনে বাংলাদেশকে এগিয়ে নেয়ার জন্য তার কন্যা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে হবে। শেখ হাসিনার পাশে থেকে বিএনপি জামাতকে প্রতিহত করতে হবে। এই বিএনপি-জামাতের জিয়া মোস্তাক গংরা ১৯৭৫ সালের ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে।তাই এদের প্রতিহত করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে হবে।

আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি গাজী মেজবাউল হোসেন সাচ্চুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক আফজালুর রহমান বাবুর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ সভাপতি আব্দুল আলিম বেপারি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোবাশ্বের চৌধুরী, খায়রুল হাসান জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল সায়েম, আ ফ ম মাহবুবুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক আজিজুল হক আজিজ, গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক মনোয়ারুল ইসলাম বিপুল সহ স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহস্রাধিক নেতৃবৃন্দ।