জিয়া কখনই প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ছিলো না: হানিফ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বলেছেন, বিএনপি বলে জিয়া মুক্তিযুদ্ধা ছিলেন। আমরা অস্বীকার করছি না। কিন্তু সে কি স্বাধীনতার চেতনা ধারণ করে মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলো? অবশ্যই তার কর্মকান্ডে সেটি প্রমান হয় না। যদি তিনি সত্যি মুক্তিযুদ্ধর পক্ষের শক্তি হতেন তাহলে বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকান্ডের পর ইনডেমনিটি আইন করে খুনিদের রক্ষা করতো না। জিয়া যদি হত্যা কান্ডে জড়িত না থাকে তাহলে তিনি খুনিদের বিচার কেন করেননি? তাদের বিচার করতে তার কি সমস্যা ছিলো? সে উল্টো তাদের পুরস্কৃত করেছিলো। তাদের রাষ্ট্রদূত বানিয়েছিলো।

তিনি বলেন,জিয়া ৭৫ সালে ক্ষমতায় যাওয়ার পর যারা রাজাকার ও যুদ্ধাপরাধী এবং গণহত্যা ও অগ্নিসংযোগ এর নেতৃত্ব দিয়েছে তাদের কারাগার থেকে মুক্ত করে দিয়েছেন। কুখ্যাত রাজাকার এর প্রধান গোলাম আযমকে তিনি দেশে ফিরিয়ে এনেছেন। জামাতে ইসলামি যারা যুদ্ধাপরাধ, মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল তাদের রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন। জিয়া মুক্তিযুদ্ধের স্লোগান জয় বাংলা নিষিদ্ধ করে পাকিস্তান জিন্দাবাদ এর আদলে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ নিয়ে এসেছিলো। সে বঙ্গবন্ধুর ৭ ই মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। যে ভাষনের মাধ্যমে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাষণ গুলোর মধ্যে একটি হলো ৭ মার্চের ভাষন। একজন মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি কখনো এ কাজগুলো করতে পারে না।

আজ ১৫ আগস্ট সোমবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর ৪৭তম শাহাদতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদ আয়োজিত কেআইবি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

হানিফ বলেন, বিএনপি জন্ম হত্যা ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি দিয়ে। তারা এখনো এ রাজনীতি থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। তারা পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ হত্যা করে। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে। তারা কখনো চায়না দেশের মানুষ ভালো থাকুক। তারা শুধু চায় যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় যেতে। তাদের এখন দেশি-বিদেশি সবখানে ষড়যন্ত্র করে। তারা ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসতে চায়। তাদের নেতারা সব সময় মিথ্যাচার নিয়ে ব্যস্ত থাকে।

তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার জন্ম তারিখ ছিলো ৫ সেপ্টেম্বর। তিনি হঠাৎ করে হঠাৎ করে ১৫ আগষ্ট কেক কাটা শুরু করলো। এর কারন ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুর শাহাদাত বার্ষিকী। গোটা জাতির শোকের ও বেদনার দিন এরা আনন্দ করে, কারণ বঙ্গবন্ধু এ দেশকে স্বাধীন করেছেন আর খালেদা জিয়া পাকিস্তানের পক্ষের শক্তি। সে স্বাধীনতা চায়নি। ১৯৮৪ সালে যখন খালেদা জিয়া বিএনপির নেত্রী হন তখন তার পিতা তৎকালীন পত্রিকা “নিপুন” এ সাক্ষাৎকারে বলেছেন ১৯৪৫ সালে যখন ২য় বিশ্ব যুদ্ধ শেষ হলো ৫ সেপ্টেম্বর সে দিন খালেদা জিয়া জন্ম গ্রহণ করেছিলো। কতটা খারাপ মন মানুষিকতার হলে এ ভাবে কারো শাহাদাত বার্ষিকীতে মানুষ আনন্দ উল্লাস করতে পারে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, ১৫ ই আগস্ট আমাদের জীবনে শুধু ক্ষতের সৃষ্টি করেনি। এ দিন আসলে আমাদেরকে বারবার মনে করিয়ে দেয়, যে মানুষটা আমাদেরকে বীরের জাতি হিসেবে বিশ্ববাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়ার জন্য তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় গুলো কারাগারে ও শাসকদের হাতে অত্যাচারীত হয়ে কাটিয়েছেন সেই মানুষকে তার সন্তানেরা আঘাতে আঘাতে ক্ষতবিক্ষত করে হত্যা করতে পারে। এটি ছিল অকল্পনীয় একটি বিষয়। যা সাধারণ মানুষের চিন্তা ছিল না কিন্তু খুনিদের মধ্যে ছিল। তারা সেদিন বঙ্গবন্ধু পরিবারের ১৮ জন সদস্যকে নির্মমভাবে হত্যা করে। কতটা জঘন্য হলে তারা সেদিন ১০ বছরের ছোট্ট শেখ রাসেলকেও বাঁচতে দেয়নি। এটি ছিলো ইতিহাসের নিষ্ঠুরতম হত্যাকান্ড।

তিনি বলেন,বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বাঁচানোর সকল চেষ্টাই করেছে জিয়া। তাদের রক্ষায় জিয়া ইনডেমনিটি আইন জারি করেছিলো। জিয়া দেশের সংবিধানকে কলঙ্কিত করেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটি জঘন্যতম এক অধ্যায়। প্রিয়া বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুরস্কৃত করে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরি দিয়েছিল। পরবর্তীতে স্বৈরশাসক এরশাদ ও খালেদা জিয়াও খুনিদের বাঁচানোর সব আয়োজন করেছে। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার আগমনের মধ্য দিয়ে তিনি খুনিদের বিচারের কাঠগড়ায় নিয়ে এসেছেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ অসাংবিধানিক সামরিক আইন বাতিল করে। কিন্তু অপপ্রচারকারীরা এর আগে বলে বেড়িয়েছে এটি জটিল আইন এটি বাতিল করা সম্ভব না। তারা চায়নি কখনো বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হোক’।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতার সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন ছিল। তিনি বলেছিলেন আমরা ভিক্ষার জাতি হয়ে বাঁচতে চাই না। আমরা বিশ্ব দরবারে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যেতে চাই। সে জন্যই পাকিস্তানের আইএসআই এজেন্ট এর সাথে দেশের মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী শক্তিরা আঁতাত করে জাতির পিতাকে হত্যা করেছে। তারা চায়নি দেশ কখনো উন্নত হোক। আজ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে খুনিদের বিচার হয়েছে। কয়েকজন পলাতক আছে, তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হবে। ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিয়ে আমাদের তৈরি হতে হবে। আমাদের জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে সকলকে ঐক্যবদ্ধবাবে কাজ করে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।

আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, বিএনপি-জামাত এখনো দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচার করে। তারা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও অশুভ শক্তির উত্থান করে নিজেদের ফায়দা লুটতে চায়। এদের বিরুদ্ধে আমাদের সচেতন হতে হবে এবং সকলকে একসাথে এদের প্রতিহত করতে হবে। বর্তমানে সারা বিশ্বেই সংকট চলতেছে। এ সংকট আর বেশিদিন থাকবে না। আমরা আরো উন্নত ও সমৃদ্ধির দিকে এগিয়ে যাব। কেউ যদি দেশে খুনের রাজনীতি করে তাদের আমরা উপযুক্ত জবাব দেবো।আমরা আর হারাতে চাই না। আমরা অনেক হারিয়েছি।যারা আমাদের উপর আঘাত আনতে চায় তাদের বলবো এটা ১৯৭৫ সাল না, এটা ২০২২ সাল। কেউ যদি আমাদের বিন্দু মাত্র ক্ষতি করতে চায় আমরা তাদের উপযুক্ত জবাব দিবো।

কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ মহাসচিব কৃষিবিদ মোঃ খায়রুল আলম প্রিন্সের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব কৃষিবিদ এম. আমিনুল ইসলাম। সভাপতির বক্তব্য রাখেন বঙ্গবন্ধু কৃষিবিদ পরিষদের সহ-সভাপতি কৃষিবিদ প্রফেসর এ. কে. এম. সাইদুল হক চৌধুরী।

আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন নাহার চাঁপা, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ সভাপতি কৃষিবিদ ড. মোঃ শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ এর সাবেক মহাসচিব কৃষিবিদ মোঃ মোবারক আলী, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী কৃষিবিদ মসিউর রহমান হুমায়ূন প্রমুখ।