সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনাকালে তিন শান্তিরক্ষী নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার বিকেলে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরের (আইএসপিআর) সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আইএসপিআর জানিয়েছে, সোমবার স্থানীয় সময় রাত ৮টা ৩৫ মিনিটে (বাংলাদেশ সময় ৪ অক্টোবর রাত ১টা ৩৫ মিনিট) বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি গাড়ি ইমপ্রোভাইজভ এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণের শিকার হয়। এতে তিনজন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন এবং একজন আহত হন।

নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন সৈনিক জসিম উদ্দিন (বয়স ৩১, গ্রাম : কাটিজা, থানা : বিজয়নগর, জেলা : ব্রাহ্মণবাড়িয়া), সৈনিক জাহাংগীর আলম (বয়স : ২৬, গ্রাম : দক্ষিণ টিট পাড়া, থানা : ডিমলা, জেলা : নিলফামারী) ও সৈনিক শরিফ হোসেন (বয়স : ২৬, গ্রাম : বাড়াক রুয়া, থানা : বেলকুচি, জেলা : সিরাজগঞ্জ)।

এ ঘটনায় টহল কমান্ডার মেজর আশরাফুল হক আহত হন।

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের পশ্চিম সেক্টরে বোয়ার এলাকায় মোতায়েন করা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্যাটালিয়ন (ব্যানব্যাট-৮) ২০২১ সালের ৯ নভেম্বর থেকে শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত রয়েছে।

দুর্গম এলাকায় অবস্থিত অন্যতম অস্থায়ী ক্যাম্প ‘কুই’ থেকে পরিচালিত যান্ত্রিক টহলের একটি দল মেজর আশরাফের নেতৃত্বে গতকাল সন্ধ্যা ৭টায় কাইতা এলাকায় টহলে যায়। বাংলাদেশ সময় রাত ১টা ৩৫ মিনিটে ফেরার পথে টহল কমান্ডার মেজর আশরাফকে বহনকারী প্রথম গাড়িটি মাটিতে পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে পড়ে। এতে গাড়িটি প্রায় ১৫ ফুট দূরে ছিটকে পড়ে।

ঘটনাস্থলেই সৈনিক শরিফ, সৈনিক জাহাংগীর ও সৈনিক জসিম মারাত্মকভাবে আহত হন। ঘটনার পরপর আহত শান্তিরক্ষীদের জরুরি ভিত্তিতে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। দুর্গম এলাকা, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া এবং ঘন অন্ধকারের মধ্যেও তাদের উদ্ধার করে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা নেওয়া হয়।

মিশন সদর, জাতিসংঘ সদর এবং সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দ্রুততার সঙ্গে ১৪৪ কিলোমিটার দূরে বোয়ারে অবস্থিত মিনুসকা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। স্থানীয় সময় ৬টা ৩০ থেকে ৭টা ৫ মিনিটের মধ্যে (বাংলাদেশ সময় ১১টা ৩০-১২টা ০৫) কর্তব্যরত চিকিৎসক সৈনিক মো. জসিম উদ্দিন, সৈনিক মো. জাহাংগীর আলম এবং সৈনিক শরিফ হোসেনকে মৃত ঘোষণা করেন।

অপর আহত শান্তিরক্ষী মেজর মো. আশরাফুল হক চিকিৎসাধীন রয়েছেন। বর্তমানে তার অবস্থা স্থিতিশীল। সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকে নিয়োজিত অন্যান্য শান্তিরক্ষীরা নিরাপদে আছেন। শাহাদাৎ বরণকারী সেনাসদস্যদের মৃতদেহ দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে আনার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শান্তিরক্ষীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আফ্রিকার আটটি দেশে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে সর্বোচ্চ পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কাজ করছেন। তারা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশের মর্যাদা অক্ষুণ্ণ রেখে চলেছেন। জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে।