মানসম্মত জীবনবৃত্তান্ত বানানোর উপায়

সুন্দর জীবনবৃত্তান্ত (CV) তৈরীর কৌশল
সুন্দর জীবনবৃত্তান্ত (CV) তৈরীর কৌশল

একটি মানসম্মত জীবনবৃত্তান্ত বানানোর উপায়

আপনার জীবনবৃত্তান্ত একটি সম্ভাব্য নিয়োগকর্তার একটি কাজের জন্য একটি প্রার্থী হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন প্রাথমিক মাধ্যম। কিন্তু চাকরিপ্রার্থীরা অনেক সঠিক মনোযোগ দিতে এবং সঠিকভাবে তাদের জীবনবৃত্তান্ত প্রস্তুত না। এর ফলে, অনেক সম্ভাবনাময় চাকরিপ্রার্থীরা তাদের সম্ভাব্য উপস্থাপন ও প্রমাণ করার সুযোগ পেতে কাজের সাক্ষাতকার জন্য কল পাবেন না।

জীবনবৃত্তান্ত তৈরির সময় নিচের বিষয়গুলোতে মনযোগ দিতে হবেঃ

সাধারণত একজন নিয়োগদাতা একটা জীবনবৃত্তান্ত দেখতে ৩০ সেকেন্ডের বেশী সময় দেন না।সুতরাং জীবনবৃত্তান্ত হতে হবে সুনির্দিষ্ট এবং সুস্পষ্ট। অপ্রয়োজনীয় এবং অপ্রাসঙ্গিক তথ্য পরিহার করা উচিত।।

একজন সদ্য পাশ করা অথবা অনভিজ্ঞ চাকুরিপ্রাথীর জীবনবৃত্তান্ত এক থেকে দুই পৃষ্ঠার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকা উচিত।

আপনার জীবনবৃতান্ত হচ্ছে আপনাকে তুলে ধরার একটি উপায়। তাই এটি আকর্ষনীয় হওয়া বাঞ্চনীয়। কিন্তু রঙিন কাগজ বা রঙিন কালির ব্যবহার করা উচিত নয়। কোনো তথ্য হাইলাইট করার জন্য বোল্ড, ইটালিক বা আন্ডারলাইন হতে হবে

মনে রাখবেন জীবনবৃত্তান্তে যেকোন প্রকার ব্যাকারণগত অথবা বানানগত ভুল নিয়োগদাতার মনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া আনতে পারে। এটি থেকে ধারণা লাভ করা যায় যে আপনি কোনো কাজই সঠিকভাবে করতে পারেন না। সুতরাং জীবনবৃতান্ত তৈরি করার পর, খুব ভালোভাবে নিজে এবং ইংরেজীতে দক্ষ এমন কারো দ্বারা যাচাই করে নিন।

যখন কোনো নির্দিষ্ট চাকুরীর বিজ্ঞপ্তিতে আবেদন করবেন, চেষ্টা করবেন চাকুরীর চাহিদানু্যায়ী আপনার জীবনবৃত্তান্তটি সাজাতে। চাকরির বিজ্ঞপ্তিটি ভালোভাবে পড়ুন এবং আনুষাঙ্গিক তথ্য অনুসন্ধান করুন।

সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আপনার উচিত হবে সঠিক এবং সত্য তথ্য দিয়ে জীবনবৃত্তান্তটি সাজানো। ।আপনার এমন কোন তথ্য দেওয়া উচিত হবে না যেটা চাকরি ইন্টারভিউ এ মিথ্যা প্রমাণিতহয়।

একটি জীবনবৃত্তান্তের বিভন্ন অংশ

নিচের তথ্যগুলো জীবনবৃত্তান্তে সুগঠিতভাবে সাজাতে হবেঃ

  • শিরোনাম
  • কর্মজীবনের সারাংশ
  • কর্মজীবনের লক্ষ্য
  • অভিজ্ঞতা
  • শিক্ষা
  • আনুষঙ্গিক
  • ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি
  • রেফারেন্স

শিরোনাম

আপনার নাম প্রথমেই থাকবে। এটা হওয়া উচিত ‘বোল্ড’ ফরম্যাটে এবং ফন্টের সাইজ বড় হবে (ডাক নাম ব্যবহার থেকে পরিহার করুন)। তারপর আপনার ঠিকানা লিখুন (আপনার বর্তমান ঠিকানা যেখানে কিনা আপনার মেইল আসবে)। ফোন নম্বর এবং ইমেইল ঠিকানা লিখুন।এই অংশ দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পৃষ্ঠার কেন্দ্রে থাকা ভালো।

চাকরীর সারাংশ

৪-৫ বছরের অভিজ্ঞতা আছে এরকম ব্যাক্তিদের জন্য এটি উপযুক্ত। সর্বোচ্চ ৬ থেকে ৭ লাইনের মধ্যে আপনার অভিজ্ঞতা তুলে ধরুন। আপনার কর্ম জীবনের অর্জন ছোট করে তুলে ধরুন (যদি থাকে)

কর্মজীবনের লক্ষ্য

এই অনুচ্ছেদ সাধারণত সদ্য চাকরি প্রার্থীদের জন্য উপযুক্ত অথবা যাদের ১ থেকে ২ বছরের অভিজ্ঞতা আছে। আপনার কর্ম জীবনের লক্ষ্য এই অণুচ্ছেদ এ তুলে ধরুন। সাথে তুলে ধরুন কিভাবে আপনার অভিজ্ঞতা এবং পদবীর জন্য কার্যকর অর্জনের মিল রয়েছে। চাকুরির বিজ্ঞপ্তির সাথে মিল রেখে আপানার কর্মজীবনের উদ্দ্যেশ্য ঠিক করুন। আপনি কিভাবে কোম্পানির কাজের জন্য উপযুক্ত এবং আপনি কোম্পানি থেকে কি আশা করেন তাতে জোড় দিন।

অভিজ্ঞতা

যাদের চাকরির অভিজ্ঞতা আছে তাদের জন্য এই অনুচ্ছেদ শিক্ষাগত যোগ্যতার আগে আসবে।যেসকল জিনিস এই অনুচ্ছেদে বিবরণ করতে হবেঃ

  • প্রতিষ্ঠানের নাম।
  • পদবি
  • সময়সীমা – শুরু ও শেষ তারিখ
  • চাকরীর দ্বায়িত্বাবলী
  • বিশেষ অর্জন

আপনার যদি একই প্রতিষ্ঠানে বিভিন্নক্ষেত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা থেকে থাকে তাহলে সেগুলো আলাদা আলাদাভাবে বর্ণনা করুন। আপনার সর্বপ্রথম কাজের ক্ষেত্রটি এক্ষেত্রে সবার শেষে রাখুন। ছোট এবং অর্থহীন অভিজ্ঞতা উল্লেখ না করাই ভাল। কর্মসংস্থানের মধ্যে ফাঁক যেন দীর্ঘ সময় না হয় সেটার চেষ্টা করুন।

শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ

  • শিক্ষা এবং প্রশিক্ষণ বিষয়ক তথ্যটি অভিজ্ঞতা অংশের আগে আসবে নতুন চাকুরী প্রার্থীর জন্য।
  • ডিগ্রীর নাম (যেমন এস.এস.সি, এইস.এস.সি, বি.কম)।
  • কোর্সের সময়কাল।
  • প্রতিষ্ঠানের নাম এবং বোর্ড।
  • পরীক্ষা পাসের সাল এবং ফলাফল প্রকাশের তারিখ(যদি প্রয়োজন হয়)।
  • ফলাফল এবং কোন বিশেষ অর্জন(যদি থাকে)।

আপনার সদ্যপ্রাপ্ত অথবা অধ্যয়নরত ডিগ্রী নাম অভজ্ঞতা অংশের মতো সর্বপ্রথম উল্লেখ করা উচিত এবং তারপর ক্রমানুসারে অন্যান্য ডিগ্রীসমূহ তুলে ধরুন।মনে রাখুন, যদি আপনার চূড়ান্ত ফলাফল না প্রকাশিত হয় তবে আপনার উচিত হবে “Appeared” উল্লেখ করা। যদি আপনি কোন প্রোগ্রাম এ অধ্যয়নরত থাকেন তবে “Ongoing” লিখুন। যদি কোন ডিগ্রীর ফলাফল ভাল না হয় তবে আপনার এটি উল্লেখ করার প্রয়োজন নেই। মনে রাখবেন যে, যদি আপনি একটি ডিগ্রীর ফলাফল উল্লেখ করেন এবং অন্য একটির ফলাফল এড়িয়ে যান তাহলে এটা খারাপ দেখাবে।আপনার কর্ম অভিজ্ঞতাকে সমর্থন করে এমন কোন প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম এ যদি আপনি অংশগ্রহণ করে থাকেন তাহলে এটি উপস্থাপন করুন। প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান,বিষয় এবং প্রশিক্ষণের সময়কাল তুলে ধরুন। শিক্ষা অংশের পরে আপনার প্রশিক্ষণের তালিকা উপস্থাপন করতে পারেন।

আনুষঙ্গিক তথ্য

যেই তথ্যগুলো আপনার উপরের উল্ল্যেখিত অনুচ্ছেদে আসেনি কিন্তু আপনার চাকুরির সাথে সম্পৃক্ত সেগুলো এই অনুচ্ছেদে উল্ল্যেখ করতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ:

  • পেশাগত সাফল্য
  • পুরষ্কার
  • ভাষাগত দক্ষতা
  • কম্পিউটার জ্ঞান
  • অনুমতিপত্র, সরকারী পরিচয়পত্র, প্রকাশনা, কর্তৃত্বদান
  • সেচ্ছাসেবকমূলক কাজ ইত্যাদি

ব্যাক্তিগত তথ্যাবলি

আপনি আপনার বাবা মায়ের নাম, বর্তমান এবং স্থায়ী ঠিকানা, ধর্ম, ভ্রমনকৃত জায়গা (দেশ) যদি থাকে, শখ ইত্যাদি এই অনুচ্ছেদে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।

রেফারেন্স

আপনার অতি নিকট আত্মীয়কে রেফারি অথবা রেফারেন্স অংশে উল্ল্যেখ করা উচিত না। রেফারি হতে হবে সে যে কিনা আপনাকে খুবই কাছ থেকে আপনার ছাত্রজীবন এবং কর্মজীবন দেখেছে। আপনাকে অবশ্যই তাঁর ফোন নাম্বার, ঠিকানা, এবং ই-মেইল এড্রেস (যদি থাকে) উল্ল্যেখ করতে হবে। দুই থেকে তিনজনকে রেফারি হিসাবে উল্ল্যেখ করা ভালো। রেফারিদেরকে জানিয়ে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি তাদেরকে রেফারি হিসাবে জীবনবৃত্তান্তে রেখেছেন।

কার্যকর জীবনবৃত্তান্ত তৈরির টিপস

যখন একজন নিয়োগকর্তা আপনার জীবনবৃত্তান্ত দেখেন, তখন আপনার কাছে শুধুমাত্র ৩০ সেকেন্ড আছে তাকে প্রভাবিত করার । এটা হলো একটি গড় সময় যা একজন নিয়োগকর্তা আপনার জীবনবৃত্তান্ত পড়তে ব্যয় করেন । পাঠক এর মনোযোগ আকর্ষণ এর জন্য আপনাকে পরিষ্কার এবং মূল বিষয়বস্তু সাপেক্ষ হতে হবে। শুধু তাই নয় , নিম্নোক্ত বিষয়গুলো আপনার বিবেচনায় আনতে হবে।

অর্থবহ তথ্য ব্যবহার আর অপ্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান থেকে বিরত থাকুন

নিয়োগকর্তারা আপনার জীবনের সাফল্যের রচনামূলক কোনো ইতিহাস শুনতে চান না। তাদের কাছে জীবনবৃত্তান্তের ভাণ্ডার পড়ে আছে এবং তারা দ্রুত জানতে চায় আপনি তাদের প্রতিষ্ঠানের জন্য যোগ্য কি না। তাই সংক্ষিপ্ত আকারে আপনার যোগ্যতা , দক্ষতা ও সাফল্য তুলে ধরুন ।একটি জীবনবৃত্তান্তে শুধুমাত্র সেইসব তথ্য থাকা উচিত যা তাদেরকে উপলুদ্ধ করবে আপনাকে ইন্টারভিউ তে ডাকার জন্য। দক্ষতা ও সাফল্যের বর্ণনা হওয়া উচিত সংক্ষিপ্ত ও প্রাসঙ্গিক। অপ্রয়োজনীয় অভিজ্ঞতার বর্ণনা আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও নষ্ট করে দিবে। ব্যক্তিগত তথ্য শুধু মাত্র তখনি ব্যবহার করবেন যখন তা আপনার ব্যক্তিগত গুণ বা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করবে । একটি জীবনবৃত্তান্তে থাকা উচিত আপনি কর্মক্ষেত্রে কি করতে পারবেন ।আপনার ব্যক্তিগত জীবনে কি করেতে পারেন তা নয়।

আপনার লক্ষ্য সর্বদা মনে রাখুন

আপনার জীবনবৃত্তান্ত লিখার জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে আপনার ক্যারিয়ারের লক্ষ্য প্রস্তুত করুন। এটা পরিষ্কার এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ হওয়া জীবনবৃত্তান্তে আপনার সকল ধরনের যোগ্যতার বর্ণনা আপনার লক্ষ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে ।

আপনার সূচনা হওয়া উচিত সুন্দর বিবৃতি দিয়ে

আপনি যদি সাম্প্রতিক স্নাতক পাশ করে থাকেন তাহলে আপনার জীবনবৃত্তান্তের প্রথমেই একটি ক্যারিয়ার লক্ষ্য থাকা উচিত, যা আপনার পাঠকের মনোযোগ আকর্ষণে সাহায্য করবে এবং বোঝাবে আপনি কোন ধরনের পদের চাকরি করতে প্রস্তুত।আপনি যদি আপনার পেশায় অভিজ্ঞ হন তাহলে আপনার দরকার একটি শক্তিশালী বিবৃতির যা উক্ত পদের জন্য আপনার যোগ্যতা ভালোমতো বর্ণনা করবে। জীবনবৃত্তান্তে একটি সুন্দর সূচনা পাঠককে আরো পড়ার জন্য প্রভাবিত করে।

ব্যবসায়িক পরিভাষা ব্যবহার করুন

ব্যবসায়িক শব্দ ও বাক্য ব্যবহার করা উচিত যা নিয়োগকর্তাকে বুঝতে সাহায্য করবে যে আপনি কাজটির সাথে পরিচিত। কিন্তু সাথে খেয়াল রাখা উচিত যেন তা আপনার জীবনবৃত্তান্তকে দুর্বোধ্য করে না তুলে। ব্যবসায়িক পরিভাষা বোঝার জন্য আদ্যক্ষরও ব্যবহার করা যেতে পারে যদি তা বুঝতে সাহায্য করে। যেমন: TQM (Total Quality Management).

আপনার সুবিধাগুলো নিয়োগকর্তার কাছে তুলে ধরুন

আপনার অভিজ্ঞতাগুলো এমনভাবে তুলে ধরুন যেন তা হয় পদটির সাথে সম্পর্কযুক্ত। আপনার প্রাপ্তিগুলোকে হাইলাইট করুন যা নিয়োগকর্তাকে উদ্ভুদ্ধ করবে আপনার জীবনবৃত্তান্ত আরো পড়ার জন্য। প্রশ্নটি একবার ভাবুন : “কিভাবে এই প্রার্থী দায়িত্বগুলো পালন করতে পারবে এবং একটি প্রতিষ্ঠানের জন্য ভালো একটি প্রভাব রাখবে ?” যদি একটি প্রতিষ্ঠান এমন প্রার্থী খুঁজে যে নেতৃত্ব প্রদানে সক্ষম তাহলে আপনার ব্যবস্থাপনা বা প্রশিক্ষণের ক্ষমতাকে তুলে ধরা উচিত।অবশ্যই মনে রাখবেন আপনার প্রাথমিক লক্ষ্য হলো ইন্টারভিউর জন্য ডাক পাওয়া।

কীওয়ার্ড ব্যবহার করুন

আপনার জীবনবৃত্তান্তের উপর মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারেন কিছু কীওয়ার্ড (শব্দ)দিয়ে যা আপনার দক্ষতা প্রকাশ করে । বর্ণনামূলক কীওয়ার্ড ব্যবহার করা দিন দিন অপরিহার্য হয়ে যাচ্ছে কারণ প্রতিষ্ঠানগুলো কম্পিউটার ডাটাবেস থেকে কীওয়ার্ড দিয়ে বিভিন্ন ধরনের জীবনবৃত্তান্ত খোঁজে। যেইসব চাকরির জন্য আবেদন করেছেন তা আপনার ব্যবহৃত কীওয়ার্ড এর সাথে সম্পর্কযুক্ত হওয়া উচিত।

কর্মে ফলপ্রসু হয় এমন বিবৃতি ব্যবহার করুন এবং ক্লান্তিকর তালিকা ব্যবহার থেকে বিরত থাকুন

সবচেয়ে ভালো জীবনবৃত্তান্তে অভিজ্ঞতার বর্ণনা দেয়া হয় কাজ ও কাজের ফলাফল দিয়ে, যেখানে একধরনের চ্যালেঞ্জ বা সুযোগ হিসেবে আপনি কাজ নিয়েছেন এবং তা কিভাবে আপনার প্রতিষ্ঠানের জন্য লাভজনক হয়েছিল। এই পদ্ধতিতে আপনার বর্ণিত অভিজ্ঞতাগুলো এক অন্য উচ্চতায় চলে যায় এবং ব্যাখ্যা করে কিভাবে আপনি সাফল্য ও ফলাফল আনতে পারেন।কাজ-ফলাফল ব্যাপারটা হতে পারে এমন যে: “Analyzed declining sales and developed campaign that increased orders by 30% in less than one month”. এই বক্তব্যটি দ্বারা আপনার পরিস্থিতি ও চ্যালেঞ্জ কে বোঝায়, যে পদক্ষেপ আপনি গ্রহণ করেছেন এবং পরিস্থিতি সামাল দিয়ে যে সাফল্য আপনি বয়ে আনতে পেরেছেন তা বোঝায়।

আপনার সাফল্যগুলো সংখ্যায় প্রকাশ করুন

আপনি আপনার ক্যারিয়ার এ কি করেছেন তার একটা ধারণা পাঠক কে দিতে হবে। কিন্তু আপনার প্রতিদিনের দায়িত্ব বা কাজের বিবরণ না দিয়ে বরং আপনার প্রাপ্তি বা সাফল্যের কথা বলুন এবং তা পরিমেয় হতে হবে। “Responsible for increasing sales in my territory,” লেখার পরিবর্তে “Increased sales in my territory 150% over 6 months. Managed 30 accounts increasing revenues from $1.5M to $2M annually.” লেখাই শ্রেয়।

ক্রিয়াপদ

নিজেকে সক্রিয়, মার্জিত বুদ্ধিমান, এবং অবদান রাখতে সক্ষম হিসেবে নিজেকে তুলে ধরুন। যেমন : “Managed, Launched, Created, Directed, Established, Organized, and Supervised”. একই ক্রিয়াবাচক শব্দ বারবার ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। একই শব্দ যেমন ‘directed’ ব্যবহার করার বদলে সমার্থক শব্দ ব্যবহার করুন , যেমন: controlled, supervised, guided, or managed. শব্দকোষ ব্যবহার করতে পারেন। আপনি যদি একই কথা ভিন্ন ভাবে বলতে চান ক্যারিয়ার বিষয়ক বিভিন্ন ওয়েবসাইট দেখতে পারেন।

পেশাদারিত্ব বজায় রাখুন

নিজেকে প্রমান করার খুব বেশি সুযোগ জীবনবৃত্তান্তে নেই। তাই অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে জায়গা নষ্ট করার কোন মানে নেই। কর্ম ও যোগ্যতার উপর জোর দিন এবং কখনই ব্যক্তিগত তথ্যের উপর যেমন : ধর্ম, বয়স, রাজনৈতিক চেতনা ইত্যাদির উপর জোর দেয়া ঠিক না। যদিও এর কোনটির উপর বিশেষ গুরুত্ব থাকে তাহলে তা নিয়োগকারীর জন্য হবে অনৈতিক। অবশ্যই হাস্যরস জাতীয় কোনো ব্যাপার এর অবতারণা ঘটানো জীবনবৃত্তান্তের জন্য ঠিক নয়। অবশ্যই হাস্যরস জাতীয় কোনো ব্যাপার এর অবতারণা ঘটানো জীবনবৃত্তান্তের জন্য ঠিক নয়। আপনি অবসরে ভৌতিক ছবি দেখতে পছন্দ করেন এই ধরনের তথ্য সমীচীন নয়।

ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যসমূহ

আপনি যদি ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্যসমূহ যেমন: “Dependable, Highly-Organized, Self-Motivated, and Responsible,” ইত্যাদি বলতে চান তাহলে শুধুমাত্র তালিকা আকারে দেখিয়ে নয় বরং তার একটি উদাহরণ বা পরিস্থিতি দিয়ে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করুন।যেমন “Dependable” না লিখে আপনি লিখতে পারেন “Never missed an important deadline in five years as a project manager.”

সর্বদা ইতিবাচক থাকার চেষ্টা করুন

আপনার জীবনবৃত্তান্তে থাকা উচিত আপনার ইতিবাচক চরিত্র। আপনি যদি নিয়োগকারীর সবগুলো চাহিদা পূরণ করতে না পারে তাহলে আপনার দুর্বলতা নিয়ে নিজের মধ্যে ব্যস্ত থাকবেন না। আপনি চেষ্টা করবে বলতে যে আপনি কি কি করতে পারেন।

সততা বজায় রাখুন

নিজের দক্ষতা সম্বন্ধে মিথ্যা বা প্রয়োজনের অতিরিক্ত বললে তা পরে নিজের জন্যই খারাপ বয়ে আনে।

সংঘঠিত ও যুক্তিপূর্ণ থাকুন

আপনার জীবনবৃত্তান্তটির মান নির্ধারণের জন্য নিয়োগকর্তারা এও বোঝার চেষ্টা করেন যে আপনি যুক্তিপূর্ণ এবং সংঘবদ্ধ কি না। তাই অবশ্যই চেষ্টা করুন এটিকে সুষম, দৃষ্টিনন্দন ও ধারাবাহিক রাখতে। বিভাগগুলো আলাদা রাখুন এবং শিরোনামগুলো বোল্ড করুন।

যোগাযোগের মাধ্যম

অতিরিক্ত ও তীব্র শব্দের ব্যবহার পরিহার করুন। অন্যকথায় আপনার কঠিন শব্দভাণ্ডার এর প্রমাণ না দিয়ে এমন শব্দ ব্যবহার করুন যা সবাই সহজেই বুঝতে পারে।

বিভাগগুলো একত্রিত রাখুন

সম্ভব হলে জীবনবৃত্তান্তের বিভিন্ন অংশ একত্রিত রাখুন এবং এটি সংক্ষিপ্ত রাখুন। যেমন আপনার ট্রেনিং এর ভেতর যদি একটি মাত্র পয়েন্ট থাকে তাহলে তার জন্য আলাদা একটি প্যারার প্রয়োজন নেই। তা আপনি “Education and Training” বিভাগের ভেতর আনতে পারেন।

প্রচলিত শিরোনাম ব্যবহার করুন

প্রচলিত শিরোনাম ব্যবহার করুন। যেমন: Objective, Experience, Employment, Work History, Skills, Summary, Summary of Qualifications, Accomplishments, Achievements, Capabilities, Education, Professional Affiliations, Publications, Licenses and Certifications, and Honors

বেতন বিষয়ক তথ্যাদি

আপনার বর্তমান বেতনের তথ্য কখনই দেয়া যাবে না। এটা আপনি আপনার ইন্টারভিউর জন্য রেখে দিবেন।

উত্তম পুরুষ ব্যবহার করা যাবে না (“me” or “I”)

আপনার জীবনবৃত্তান্ত কোনো ব্যক্তিগত পত্র নয় , তাই “I” “my” or “me” ধরনের শব্দ এখানে থাকা উচিত নয়।ক্রিয়াবাচক কোনো শব্দ দিয়ে এই ধরনের সর্বনাম বদলে দেয়া উচিত।”I wrote several articles for the company newsletter,” এই বাক্যের বদলে “Researched and wrote several articles for the company newsletter.” লিখলেই ভালো হয়। বরং নামবাচক বিশেষ্যগুলো কভার লেটার এ ব্যবহার করা যেতে পারে।

পেশাগত নাম ব্যবহার

অনেক জায়গায় আপনার পেশাগত নাম বা পদবি ব্যবহার করা যেতে পারে। আপনার নাম লিখতে পারেন অনেকটা এইভাবে: “Ahmed Abdullah, FCA.”. এছাড়া আপনি ব্যবহার করতে পারেন শিক্ষা, লাইসেন্স / সার্টিফিকেশন ইত্যাদি বিষয়। আপনার শিরোনামটি যদি চাকরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয় তাহলে তা অবশ্যই ব্যবহার করা উচিত।

Including References in Your Resume

You do not have to include references on your resume. Most employers will assume you can provide references if they are requested.

জীবনবৃত্তান্তের বাহ্যিক বিষয়গুলো লক্ষ্য করুন

জীবনবৃত্তান্তের দৈর্ঘ্য

আপনি যে ধরনের চাকরি খুঁজছেন তার জন্য আপনার উত্তম এবং অধিক প্রাসংগিক যোগ্যতাগুলো তালিকাভুক্ত করতে একটি জীবন বৃত্তান্তের দৈর্ঘ্য যতটুকু প্রয়োজন সেই অনুযায়ী হওয়া উচিত।সাম্প্রতিক যারা স্নাতক পাশ করেছেন বা মাত্র কয়েক বছরের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন , তাদের উচিত হবে এক পৃষ্ঠার মধ্যে প্রাসঙ্গিক অভিজ্ঞতাগুলো তুলে ধরা । যদি আপনার ব্যাপক অভিজ্ঞতা থাকে তাহলে এগুলো তালিকাভুক্ত করতে দুই পৃষ্ঠার একটি জীবনবৃত্তান্ত প্রয়োজন হতে পারে । জীবনবৃত্তান্তের পরিসর বিবেচনা করার পরিবর্তে এটা নিশ্চিত করুন যে, আপনার উল্লেখিত তথ্য-বিবরণ আপনার অনুসন্ধানকৃত কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকে। একটি জীবনবৃত্তান্তের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয় হলো এটি কাজটির জন্য যথেষ্ট পরিমাণে আপনার যোগ্যতার বর্ণনা করে কিনা, দৈর্ঘ্য নয়।

কাগজের আকার

স্ট্যান্ডার্ড A4 অথবা (8½” x 11″) সাইজের অফসেট কাগজ বাবহার করুন। নিয়োগকারীরা শত শত জীবনবৃত্তান্ত পেয়ে থাকেন; তাই যদি আপনার কাগজের আকার ছোট হয় তবে এটি হারিয়ে যেতে পারে এবং যদি খুব বড় হয় তাহলে প্রতিষ্ঠানের ফাইলের মধ্যে রাখা ঝামেলাপূর্ণ হবে।

কাগজের রং

কভার লেটার এবং জীবনবৃত্তান্তের জন্য শুধু সাদা ও আইভরি গ্রহণযোগ্য রং হিসেবে বিবেচিত হয়।

কম্পিউটার এবং শব্দ প্রক্রিয়াকরণ

আপনার জীবনবৃত্তান্ত লেখার সবচেয়ে সহজ উপায় হলো এটি একটি কম্পিউটার বা ওয়ার্ড প্রসেসরে লেখা।এর মানে আপনি তাত্ক্ষণিকভাবে প্রায় সবধরনের পরিবর্তন করতে এবং ডিস্কে বিভিন্ন খসড়া জীবনবৃত্তান্ত সংরক্ষণ করতে পারবেন। এছাড়াও ওয়ার্ড প্রসেসিং সিস্টেম আপনাকে গুরুত্বারোপ করার জন্য কোন কিছু বোল্ড করা, বিভিন্ন ফন্ট বা বর্ণের ধরন এবং যাচাইযোগ্য মার্জিন সহ অনেক ধরনের অপশন দেবে।

জীবনবৃত্তান্ত ছাপানো

শ্রেষ্ঠমানের অফসেট প্রিন্টিং প্রসেস খুঁজুন এবং আপনার অনুলিপিগুলো ফটোকপি মেশিনে তৈরি করবেন না ।শুধু কর্মকর্তাদের কার্যালয় আপনার মেইল করা জীবনবৃত্তান্ত দেখতেপারেন; বাকিদের প্রত্যেকে এটির একটি কপি দেখতে পারেন। অনুলিপির অনুলিপিগুলো দ্রুত অস্পষ্ট হয়ে।

পর্যবেক্ষণ অপরিহার্য

জীবনবৃত্তান্তে ভুল বিব্রতকর হতে পারে এবং এতে কোন সন্দেহ নেই যে ভুল থাকলে আপনি ব্যর্থ হবেন। সুতরাং যতটা সম্ভব সাবধানতার সাথে আপনার জীবনবৃত্তান্ত পর্যবেক্ষণ করুন এবং তারপর এটা করার জন্য আপনার একজন বন্ধুকে দিন ।নিশ্চিত করুন আপনার বানান এবং ব্যাকরণ নির্ভুল আছে । কম্পিউটার বা ওয়ার্ড-প্রসেসর সমূহের বিল্টইন বানান যাচাইকারী প্রোগ্রামের উপর সম্পূর্ণরূপে নির্ভর করবেন না, সবধরনের ত্রুটিই ভুল বানান নয় এবং একটি বানান যাচাইকারী আপনার জীবনবৃত্তান্ত পর্যবেক্ষণের জন্য বিকল্প নয় ।সঠিকভাবে শব্দও তখনও অনুচিতভাবে ব্যবহৃত হতে পারে ।মনে রাখুন যে একটি বানানচেকার “দুই (two)” জন্য “টু (to)” বা “দক্ষতা” জন্য “বিল” এর মত ত্রুটিগুলো চিন্হিত করতে পারেনা ।

বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার

আপনার জীবনবৃত্তান্তে দীর্ঘ অনুচ্ছেদের পরিবর্তে বুলেট পয়েন্ট ব্যবহার করুন। বরং এটি দ্রুত পাঠযোগ্য এবং সহজবোধ্য হবে।একজন পাঠককে আকর্ষণ করতে আপনি যে কোন কিছু করুন সেটা একটি সাক্ষাত্কার পেতে আপনাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে

সঙ্গতিপূর্ণ বিন্যাসকরণ

সহজ পাঠযোগ্য ফন্ট নির্বাচন করুন এবং শিরোনাম ও বুলেট পয়েন্ট এর জন্য সুসংগত বিন্যাস ব্যবহার করুন। উপরন্তু, আপনি বোল্ড বা বড় হাতের অক্ষরসহ প্রতিটি বিভাগের মধ্যে যেন সঙ্গতিপূর্ণ পর্যাপ্ত ফাঁক থাকে সেটা নিশ্চিত করুন। আপনার জীবনবৃত্তান্তের সবচেয়ে প্রাসঙ্গিক তথ্য তুলে ধরতে বোল্ড, ইটালিক্স এবং আন্ডারলাইন ব্যবহার করুন।যদি আপনি একটি অত্যন্ত সৃজনশীল অবস্থান না চান, সেই ক্ষেত্রে, চটকদার বিন্যাসকরণ বা রীতিবিরুদ্ধ ফন্ট অথবা গ্রাফিক্স দিয়ে মাত্রাতিরিক্ত সৃজনশীল জীবনবৃত্তান্ত থেকে দূরে থাকুন। আপনার জীবনবৃত্তান্তটি সহজ এবং দক্ষতাপূর্ণ রাখুন।

এড়িয়ে চলুন মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার: বোল্ড / ইটালিক্স / আন্ডারলাইন

সবকিছুতে মনোযোগ আকর্ষণ করা এবং কোন কিছুতেই মনোযোগ আকর্ষণ না করা মূলত একই ব্যাপার। আপনি যে নির্দিষ্ট অঞ্চলসমূহে দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চান সেটার উপর একটি কার্যকরী প্রভাব ফেলার জন্য বোল্ড, ইটালিক্স এবং আন্ডারলাইন ব্যবহার করে হাইলাইট করুন এবং আপনার হাইলাইটিং টেকনিকের মধ্যে একটি ধারাবাহিকতা বজায় রাখুন।

একটি জীবনবৃত্তান্ত পাঠানোর উত্তম মাধ্যম

একজন নিয়োগকর্তার কাছে আপনার জীবনবৃত্তান্ত পাঠানোর বেশ কয়েকটি উপায় আছে: ফ্যাক্স, ইমেইল, রেগুলারমেইল ও এক্সপ্রেস মেইল। এটি কোনভাবে পাঠানো হবে যখন এই সিদ্ধান্তটি নিতে হয় তখন নিয়োগকর্তা এর নির্দেশাবলী অনুসরণ করা সর্বদাই ভাল।যদি চাকরির বিজ্ঞাপনে উল্লেখ না থাকে, তাহলে আপনার সম্ভাব্য নিয়োগকর্তাকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নিন তারা কোন ফরম্যাট পছন্দ করেছেন এবং তারপর তাদের নির্দেশাবলী অনুসরণ করুন।অন্যান্য ক্ষেত্রে, এখানে কিছু জিনিস বিবেচনা করতে হয়: পোস্টাল মেইল এর সুবিধা হলো আপনার জীবনবৃত্তান্ত সঠিকভাবে বিন্যস্ত ও গুণগত মানের কাগজে ছাপানো, তার শ্রেষ্ঠ রূপে দেখা হবে কি না তা আপনি নিশ্চিত করতে পারেন। ইমেইল এবং ফ্যাক্স এর সুবিধা হলো আপনার জীবনবৃত্তান্ত সাধারণত একই দিনে, তৎক্ষনাৎ দেখা যাবে। এক্সপ্রেস অথবা কুরিয়ার মেইল সম্ভবত অপ্রয়োজনীয় সেহেতু বেশিরভাগ জীবনবৃত্তান্ত নিয়োগকর্তার ডেস্কে পৌছানোর আগেই সরিয়ে ফেলা হয় সুতরাং তারা আপনার অতিরিক্ত প্রচেষ্টা দ্বারা প্রভাবিত হবে না।

তথ্যসূত্রঃ বিডিজবস