মুসলিম বিবাহ পদ্ধতি

মুসলিম বিবাহ পদ্ধতি

বাংলাদেশের আইন অনুসারে, ছেলেদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স নির্ধারন করা হয়েছে ২১ বছর এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে সর্বনিম্ন ১৮ বছর। এর কম বয়সে ছেলে কিংবা মেয়ের বিয়ে দেওয়া হলে সেটি বাল্য বিবাহ হিসেবে বিবেচিত হয়। বাল্যবিবাহ আইনত দন্ডনীয় অপরাধ।

বাংলাদেশে ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ-বিচ্ছেদ আইন, ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালের মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন, ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন প্রভৃতি আইনের সমন্বিত নিয়ম-ধারার অধীনে মুসলমান সমাজে আইনী  বিবাহ ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ে কেবলমাত্র একটি ধর্মীয় দায়িত্বই নয়, একটি দেওয়ানী চুক্তিও। এই আইন অনুসারে একটি পূর্ণাঙ্গ বিয়ের জন্য কতিপয় শর্ত পূরণ করতে হয়ঃ

১। উভয়পক্ষের ন্যুনতম বয়স

২। পারস্পরিক সম্মতি

৩। দেনমোহর

৩। সুস্থ মস্তিষ্কের প্রাপ্তবয়স্ক ২ জন সাক্ষী

মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক এবং এই দায়িত্ব পুরুষের। এই দায়িত্ব পালন না করলে ২ বছর পর্যন্ত মেয়াদে বিনা শ্রম কারাদন্ড বা ৩,০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে। বিয়ের অনুষ্ঠানে বিয়ে রেজিস্ট্রেশন করা উত্তম, তবে কোন কারণে তা  না হলে ৩০ দিনের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে।

কোন নারীর ১৮ বছর পূর্ণ না হলে এবং তার সম্মতি ছাড়া বিয়ে হলে, তিনি মুসলিম বিবাহ বাতিল আইন, ১৯৩৯ অনুযায়ী আদালতে বিয়ে বাতিলের আবেদন করতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে দুটি শর্ত অবশ্যই পূরণ করতে হবে-

১। মেয়েটি যদি স্বামীর সাথে দাম্পত্য সম্পর্ক স্থাপন করবে না অর্থাৎ সহবাস করবে না।

২। মেয়েটির বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার পর এবং ১৯ বছর পার হওয়ার আগে বিয়েকে অস্বীকার করতে হবে।

বাল্যবিবাহের শাস্তির পরিমান হলো ১ মাস পর্যন্ত বিনাশ্রম কারাদন্ড বা ১ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় প্রকার দন্ড। শিশু বিবাহকারী পুরুষ, বিবাহ রেজিস্ট্রেশনকারী নিকাহ রেজিস্ট্রার এবং অভিভাবকসহ বাল্যবিবাহের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ এই শাস্তি ভোগ করবে। এক্ষেত্রে কোন নারীকে কারাদন্ড দেয়া যাবে না।

মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্টেশন) আইন, ১৯৭৪-এর ধারা ৫ (২) অনুযায়ী, যেক্ষেত্রে একজন নিকাহ রেজিস্ট্রার ব্যতিত অন্য ব্যাক্তি দ্বারা বিবাহ অনুষ্টিত হয়, সেক্ষেত্রে বর বিবাহ অনুষ্টানের তারিখ থেকে পরবর্তী (৩০) ত্রিশ দিনের মধ্যে সংশ্লিষ্ট নিকাহ রেজিস্ট্রারের নিকট প্রতিবেদন দাখিল করবেন। উক্ত আইনের ৫ (৩) ধারা অনুসারে, প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর তাৎক্ষণিক নিকাহ রেজিস্ট্রার বিবাহটি রেজিস্ট্রি করবেন।

ধারা ৫ (৪) অনুযায়ী অত্র আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে দুই বছর পর্যন্ত মেয়াদে বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা তিন হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবে।

বিবাহ রেজিস্ট্রি হওয়ার পরই, রেজিস্টারের যে পৃষ্টায় বিবাহ রেজিস্ট্রি করা হয়েছে, তার সত্যায়িত নকল তুলে সংরক্ষণ করতে হবে। মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন, ১৯৭৪-এর ধারা ৯ অনুযায়ী, এ ধরনের নকলের জন্য কোন ফিস প্রদান করতে হবে না।

কোনো নারীর স্বামী মারা গেলে অথবা তাকে স্বামী কর্তৃক তালাক দেওয়া হলে, ঐ নারীর গর্ভে আগের স্বামীর সন্তান আছে কিনা সেটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য, ইদ্দত পালন না করে, অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারেন না। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য, তালাকপ্রাপ্ত হলে পরপর ৩টি পূর্নাঙ্গ ঋতুকালীন সময়, আর স্বামী মারা গেলে ৪ মাস ১০ দিন সময় অপেক্ষা করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যদি কোনো গর্ভ সঞ্চার হওয়ার লক্ষণ প্রকাশিত না হয়, তাহলে তিনি ইদ্দত শেষ করে অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবেন। আর যদি গর্ভের লক্ষন প্রকাশিত হয়, তাহলে তার ইদ্দত হবে সন্তান জন্ম দেওয়া পর্যন্ত। সন্তান জন্ম নিলে এর পরে তিনি অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবেন।

আল্লাহর বানীঃ দুশ্চরিত্রা নারীকূল, দুশ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং দুশ্চরিত্র পুরুষকুল, দুশ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। সচ্চরিত্রা নারীকুল, সচ্চরিত্র পুরুষকুলের জন্যে এবং সচ্চরিত্র পুরুষকুল, সচ্চরিত্রা নারীকুলের জন্যে। তাদের সম্পর্কে লোকে যা বলে, তার সাথে তারা সম্পর্কহীন। তাদের জন্যে আছে ক্ষমা ও সম্মানজনক জীবিকা। [সূরাআন-নুরঃ ২৬] সৌজন্যেঃ ল্যান্ডরেজিস্ট্রেশনবিডি