হুমায়ুন কবির: একবিংশ শতাব্দীর এই সময়ে এসে বাঙালী চিরাচরিত গ্রামীণ সমাজের যৌথ পরিবার ভেঙে ছোট পরিবার ব্যপক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে তবে ঠিক একই সাথে হ্রাস পাচ্ছে মানুষের মানবিক মূল্যবোধ আর এরই বলি হচ্ছেন বৃদ্ধ বাবা-মা।
স্বাধীনতা উত্তর বাংলাদেশী সমাজ ব্যবস্থায় সন্তান প্রতিপালনে নিজ সক্ষমতার বাহিরে যেয়ে সন্তানের কল্যানে নিজেদের বিলিয়ে দেয়াটা স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। তাই বৃদ্ধ বয়সে নিজেদের জন্য সন্তানদের উপর নির্ভর করা ছাড়া কোন পথ তৈরি হয় নি কিন্তু শিক্ষার আলো পেয়েও কিছু সন্তান আলোকিত হতে পারে নি, শেষ বয়সে মা-বাবার আশ্রয়ের ঠিকানা হয়ে উঠতে পারে নি৷ আর তাই বৃদ্ধ বাবা-মাকে পোহাতে হয় অসহনীয় কষ্ট, যন্ত্রণা৷
তেমনি এক অসহায় বৃদ্ধ মায়, মতলব দক্ষিণ থানাধীন উত্তর বার-গাঁও গ্রামের নূর-জাহান বেগম৷ মোঃ হুমায়ুন প্রধান সেলিম প্রধান, আলমগীর, মহিউদ্দীন, নিজাম প্রধান নামের পাঁচ ছেলে সন্তানের মা তিনি ৷ তার মধ্যে চার ছেলেই নিজ জায়গায় সুপ্রতিষ্ঠিত, বেশ অর্থ সম্পদের মালিক তারা তবে গরিব হয়ে উঠেন মায়ের দেখাশোনার ক্ষেত্রে৷
তুলনামূলক কম বিত্তবান ছেলে সেলিম প্রধানের কাছে মাকে রেখে গিয়ে তারা দায়মুক্ত থাকার চেষ্টা করছেন নামমাত্র টাকার বিনিময়ে৷ অসুস্থ মায়ের জরুরি চিকিৎসা যেখানে প্রয়োজন সেখানে মৃত্যু ঘটলে গ্রামে দাফন করতে পারবে না এই অজুহাতে চিকিৎসাহীন মাকে রেখে গেছে গ্রামের ভিটেমাটিতে৷ এমন নির্মম মনের অধিকারী সন্তান জন্ম দেয়াই যেন পাপ হয়েছিলো এই নারীর৷
এই বিষয়ে অসুস্থ বৃদ্ধের নাতি জানায়, চাচা-জেঠারা রমজানের শুরুতে দাদিকে গ্রামে এনে রেখে যায় এই বলে যে, বেশিদিন বাঁচবে না তাই আগেই গ্রামে নিয়ে এলাম যেন লকডাউনের ঝামেলায় পড়তে না হয়!
জরুরি ভিত্তিতে যথাযোগ্য চিকিৎসা দিতে না পারলে এক সাগর চাপা দুঃখ বুকে নিয়েই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়তে পারেন এই অভাগা নারী৷