ইভিএম নিঃশব্দে ভোট ডাকাতির যন্ত্র: মির্জা ফখরুল

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনকে (ইভিএম) নিঃশব্দে ভোট ডাকাতির যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে এ ব্যবস্থা থেকে সরে আসার জন্য নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।

রোববার (০৫ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ আহ্বায়ন জানান দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘ইতিমোধ্য সমগ্র বিশ্বের নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় অস্বচ্ছতার কারণে বিতর্কিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ হিসেবে অভিযুক্ত হয়ে অনেক গণতান্ত্রিক দেশে যে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রত্যাখাত হয়েছে, নুরুল হুদা কমিশন আসন্ন ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেই ইভিএম ব্যবহারের একতরফা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যে ধরনের সংলাপ, পরামর্শ, নিবিড় যোগাযোগ আবশ্যক তার কিছুই করেনি নির্বাচন কমিশন।’

ইভিএম ব্যবাহারের সিদ্ধান্তকে ডিজিটাল কারচুপির নতুন ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের বিধ্বস্ত নির্বাচনি ব্যবস্থার কফিনে শেষ পেরেক হিসেবে গণ্য হবে এই ইভিএম। বাংলাদেশে ইতোপূর্বে ইভিএম ব্যবহারের অভিজ্ঞতায় যা প্রমাণিত।’

ইভিএম সাম্প্রতিক বিশ্বে ব্যাপকভাবে সমালোচনার বিষয়বস্তু হয়ে দাঁড়িয়েছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘প্রোগ্রামিং ভ্রান্তি, যান্ত্রিক ত্রুটি এবং বিদ্বেষাত্মক ট্যাম্পারিং বা কারসাজি, কম্পিউটারভিত্তিক ভোট প্রদান যন্ত্রের অন্তর্নিহিত দুর্বলতা, উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে ইভিএম নিয়ন্ত্রণের সুযোগ ও সম্ভবনা এবং নির্বাচন পরিচালনার সাথে সম্পৃক্তদের বিশেষ দলের পক্ষে নির্বাচনি ফলাফল পাইয়ে দেওয়ার সুযোগসহ নানা নেতিবাচক কাজ সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়েছে।’

‘সুতরাং নাগরিক সমাজের সঙ্গে কোনো প্রকার আলোচনা ছাড়াই এবং স্টেকহোল্ডারদের বিরোধিতা সত্বে ঢাকা সিটির সবকটি কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারের একতরফা সিদ্ধান্তকে আমরা ডিজিটাল কারচুপির এক মহা ষড়যন্ত্র বলে মনে করি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হচ্ছে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনায় রাষ্ট্রের ওপর জনগণের মালিকা প্রতিষ্ঠার সর্বোৎকৃষ্ট পদ্ধতি। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হচ্ছে, রাষ্ট্রের ওপর জনগণের মালিকানা প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসযোগ্য, গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ এবং সহজতর কর্মকৌশল ও পরিবেশে ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ। জনগণের অধিকার নিশ্চিতের এই গুরুদায়িত্ব যাতে যথাযথভাবে পালিত হয়, সেই কারণেই নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক ক্ষমতা প্রদান করা হয়েছে।’

‘আমরা অত্যন্ত সুস্পষ্টভা ভাষায় বলতে চাই, বর্তমান দলবাজ নির্বাচন কমিশনের প্রতি এ দেশের মানুষের ন্যূনতম আস্থা নেই। অতএব এ দেশের মানুষ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন পদ্ধতিতে তার ভোট প্রয়োগ করবে, এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো নৈতিক অধিকার নির্বাচন কমিশনের নেই’— বলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

ইভিএম প্রকল্পের সঙ্গে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত না করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা গভীর হতাশা ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, এই চক্রান্ত বাস্তবায়নে আমাদের দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীর ভাবমূর্তিকেও ব্যবহার করার ঘৃণ্য তৎপরতা চলছে। যার অংশ হিসেবে ইভিএম প্রকল্পে সেনা সদস্য নিয়োগের প্রচার চালিয়ে বর্তমান ফ্যাসিস্ট সরকার ও বশংবদ নির্বাচন কমিশন এক গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি রক্ষায় সদা নিয়োজিত বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষের শেষ ভরসাস্থল দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে সকল বিতর্কের বাইরে রাখা সকল নাগরিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের দায়িত্ব ও কর্তব্য।’

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মির্জা আব্বাস, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু।