নতুন ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) নতুন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেলেন পুলিশ স্টাফ কলেজের রেক্টর অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার গোলাম ফারুক।

রোববার (২৩ অক্টোবর) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ-১ শাখার এক প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে প্রজ্ঞাপনে সই করেন উপসচিব হারুন-অর-রশীদ।

খন্দকার গোলাম ফারুক ১৯৬৪ সালের ১ অক্টোবর টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ঘাটানদি গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন।তার বাবা মৃত খন্দকার হায়দার আলী ছিলেন একজন কৃষক এবং মা মোসাম্মৎ ফাতেমা বেগম ছিলেন গৃহিনী । তিনি ভুঞাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বারই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর ভুঞাপুর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৯ সালে এস.এস.সি সম্পন্ন করে ভুঞাপুর ইব্রাহিম খাঁ সরকারি কলেজ থেকে ১৯৮১ সালে এইচ.এস.সি সম্পন্ন করেন। শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.এস.সি সম্পন্ন করেন ১৯৮৮ সালে । পরে ২০০৭ সালে এশিয়ান ইউনিভার্সিটি,ঢাকা থেকে এম.এ সম্পন্ন করেন ।

এসএসসি ও এইচএসসিতে ভালো ফলাফল করার পর ঢাকার শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলেন খন্দকার গোলাম ফারুক। বিশ্ববিদ্যালয়ে মেধা তালিকায় দ্বিতীয় হয়ে প্রথম শ্রেণীতে পাশ করার পর সেখানে শিক্ষক হওয়ার প্রস্তাব পান। তখন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের জীবন সীমাবদ্ধ মনে হয় খন্দকার গোলাম ফারুকের কাছে। এ কারণে সিদ্ধান্ত নেন বিসিএস দেওয়ার। তবে পুলিশের চাকরি পেতে অনেক চ্যালেঞ্জের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে খন্দকার গোলাম ফারুককে। নবম বিসিএসে অংশ নিয়েছিলেন তিনি। প্রথম পছন্দ দিয়েছিলেন পুলিশ ক্যাডার, দ্বিতীয়ত প্রশাসন। নবম বিসিএস পরীক্ষায় সম্মিলিত মেধা তালিকায় প্রথমদিকে অবস্থান করেও পুলিশের চাকরি পাননি খন্দকার গোলাম ফারুক। তাকে প্রশাসন ক্যাডারে যোগ দিতে বলা হয়। কারণ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান বিসিএসে পুলিশ ক্যাডারে নিয়োগ হঠাৎ বন্ধ রাখেন; তার বক্তব্য ছিল, সেনা কর্মকর্তাদের যেভাবে নিয়োগ দেয়া হয়, ঠিক সেভাবেই পুলিশে উক্ত পদে নিয়োগ দেয়া হবে।

পুলিশ ক্যাডার না পেয়ে হতাশ হওয়ার পরিবর্তে একদম জিদ চেপে গেল খন্দকার গোলাম ফারুকের। প্রশাসন ক্যাডারে যোগদান না করে পুলিশের চাকরির জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলেন। এরইমধ্যে দশম বিসিএসের মাধ্যমে আবার পুলিশ ক্যাডার নিয়োগের ঘোষণা দেয়া হয়। খন্দকার গোলাম ফারুক দশম বিসিএসেও প্রথম পছন্দ দেন পুলিশ, দ্বিতীয় পছন্দ প্রশাসন ক্যাডার। তবে সেবারও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদুল হাসান বিসিএস পুলিশ উঠিয়ে দিয়েছিলেন। দশম বিসিএসে সম্মিলিত মেধাতালিকায় দ্বিতীয় ও প্রশাসন ক্যাডারে প্রথম হন ফারুক। কিন্তু পুলিশ ক্যাডার না থাকায় দশম বিসিএসেও তিনি যোগদান করেননি। তাই তৃতীয়বার আবার দিলেন বিসিএস পরীক্ষা। ১২তম বিসিএস-এ নির্বাচিত হলেন কাঙ্ক্ষিত সেই পুলিশ ক্যাডারে। ১৯৯১ সালের ২০ জানুয়ারি পুলিশে যোগদান করেন তিনি।

কেন পুলিশ হয়েছেন এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ যখন হয়েছে তখন আমি অনেক ছোট ছিলাম। যুদ্ধ কী তেমন করে বুঝিনি। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী বিধস্ত সময়ের দারিদ্রের সাথে মানুষের যুদ্ধ দেখেছি। দেখেছি গ্রামের হতদরিদ্র মানুষগুলোর বেঁচে থাকার লড়াই। বাবা আমাকে প্রায়শ্চই বলতেন, বড় হয়ে হতদরিদ্র এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে হবে। বিপদে সাহায্য করতে হবে। বাবার সে আদেশ পালন ও বিপদগ্রন্ত মানুষের সেবা করার জন্য এবং মানবসেবায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করতেই আমি পুলিশ হয়েছি।

খন্দকার গোলাম ফারুকের প্রথম কর্মস্থল ছিল বগুড়া এপিবিএন। ১৯৯৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে দায়িত্ব পালন শুরু করেন খন্দকার গোলাম ফারুক। ১৯৯৯ সালে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পান তিনি। পুলিশ সুপার হিসেবে পদোন্নতি পান ২০০৩ সালে। ঠাকুরগাঁও, কিশোরগঞ্জ, ঝালকাটি, জামালপুর ও ময়মনসিংহে একে একে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে দায়িত্বপালন করেন খন্দকার গোলাম ফারুক। ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ছিলেন। এরপর ২০১৬ সালে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশের রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি হন।এবং সর্বশেষ ২০২০ সালের ৯ নভেম্বর অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি পেয়েছেন।এছাড়াও ভালো কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ দুইবার ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’ এবং একবার ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ পেয়েছেন তিনি।

পুলিশে দীর্ঘ চাকরিজীবনে নানা চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করেছেন খন্দকার গোলাম ফারুক।তিনি তার ৩১ বছরের কর্মময় জীবনে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় আমি বড় বড় অনেক কাজ করেছেন। ২০০৫ সালে সারাদেশের ৬৩ জেলায় যখন একযোগে বোমা হামলা হয়েছে, তখন তিনি ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের এসপি।তিনি তখন তার দক্ষতার মাধ্যমে জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়ক আবদুর রহমানের জামাতা আবদুল আউয়ালকে ঠাকুরগাঁও থেকে আমি গ্রেফতার করেন। এজন্য সরকারের কাছ থেকে তিনি পুরষ্কারও পেয়েছিলেন।

ডিএমপি কমিশনার মোহা. শফিকুল ইসলামের চাকরির মেয়াদ ২৯ অক্টোবর শেষ হচ্ছে। বুধবার শফিকুল ইসলামের অবসর সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ। এর আগে ২০১৯ সালের ৭ সেপ্টেম্বর ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মোহা. শফিকুল ইসলাম। ২০২১ সালের ২১ অক্টোবর তাকে চাকরি থেকে অবসর দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। পরে তা বাতিল করে একই মাসের ২৮ তারিখে একবছরের জন্য ডিএমপি কমিশনার হিসেবে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হয়।

শফিকুল ইসলামের পর ডিএমপি কমিশনার হিসেবে নিয়োগের জন্য পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে বেশ কয়েকজন আলোচনায় ছিলেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ও দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় পুলিশের এ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ নিয়ে জল্পনা কল্পনা ছিল পুলিশ মহলেই। অবশেষে এ পদে নিয়োগ পেলেন অতিরিক্ত আইজিপি খন্দকার গোলাম ফারুক। ডিএমপির ৩৫ তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করবেন তিনি।