হঠাৎ উত্তপ্ত মাঠের রাজনীতি

আলোচিত-সমালোচিত গত বছরের ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনের পরই বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো নিরবতার পর সবাই ধরেই নিয়েছে আপাতত রাজনীতির মাঠ গরম হচ্ছে না। কিন্তু চলতি সপ্তাহে হঠাৎ করেই রাজনীতির মাঠ গরম হয়ে উঠেছে। বিএনপি ও সরকারের পক্ষ থেকে পাল্টাপাল্টি সূর আসছে। এছাড়াও পুলিশের সঙ্গে বড় ধরনের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে দলটির নেতাকর্মীদের।

মাঝেমধ্যে কারাবন্দি খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে কিছু কর্মসূচি পালিত হলেও সেগুলো তেমন জোরালো ছিল না। দীর্ঘ প্রায় ২ বছরের ধরে কারাবন্দি দলের প্রধান। ‘জামিন’ ‘জামিন’ করেও মুক্তি মিলছে না সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর। ফলে আন্দোলনের মাধ্যমে তাকে মু্ক্ত করতে নেতাকর্মীদের চাপ রয়েছে। সম্প্রতি শীর্ষ নেতারাও কঠোর আন্দোলনের সূরে কথা বলছেন।

রাজনীতির মাঠে এই উত্তপ্তের সূত্রপাত গত ২৬ নভেম্বর, হঠাৎ করেই পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা। এদিন বড় ধরনের বিক্ষোভ করার চেষ্টা করতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। সুপ্রিম কোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় অবস্থান নিতে চেষ্টা করে নেতাকর্মীরা। সেখানে যোগ দিতে গিয়েছিলেন কয়েক শতাধিক বিএনপিপন্থি আইনজীবীও। কিন্তু পুলিশের কঠোর প্রতিরোধে পণ্ড হয় অবস্থান কর্মসূচি।

মামলা-ধরপাকড়
ওই ঘটনায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, যুগ্ম-মহাসচিব খাইরুল কবির খোকন, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেন, মুক্তিযোদ্ধা দলের সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতসহ বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতার নামে মামলা করা হয়।

মামলা দায়ের পরপরই নেতাকর্মীদের ধরপাকড় শুরু হয়। মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, খাইরুল কবির খোকন, ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, ডাকসু নির্বাচনে ভিপি পদে ছাত্রদলের মনোনয়নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা মোস্তাফিজুর রহমান, প্রশিক্ষণবিষয়ক সম্পাদক এ বি এম মোশাররফ হোসেনসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে জামিন নিয়ে মুক্তি পেয়েছেন হাফিজ উদ্দিন আহমেদ ও খাইরুল কবির খোকন।

বিএনপির আন্দোলন সুর
দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ‍মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের সুরে কথা বলছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা।  চারদিকে সরকারের বিদায় ঘণ্টা শোনা যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আগামী ৫ ডিসেম্বর দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে বিএনপি এক দফা আন্দোলনে যাবে বলে সরকারের প্রতি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। সেই আন্দোলন শেখ হাসিনার স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলন।

নির্বাচনের বর্ষপূর্তি
আগামী ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি। বিএনপি-জামায়াতসহ বিরোধী দলীয় দলগুলো এই নির্বাচনকে ব্যাপক কারচুপি ও জালিয়াতি নির্বাচন হিসেবে অবিহিত করে আসছে। তারা এই নির্বাচনকে ২৯ ডিসেম্বর রাতে নির্বাচন বা মিডনাইট নির্বাচন হিসেবেও অভিযোগ করে আসছে।

নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিরোধী রাজনীতিবিদরা সরব হতে দেখা যাচ্ছে। বর্ষপূর্তি ঘিরে কর্মসূচি দেয়ারও চিন্তু ভাবনা করছেন তারা। পেঁয়াজসহ দ্রব্যমূলের মূল্য বৃদ্ধির কারণে সরকার সাধারণ মানুষের চাপে রয়েছে দাবি করে বড় ধরনের কর্মসূচি দিতে পারে বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।

হার্ডলাইন সরকার
বিএনপির এই আন্দোলনের হুঁশিয়ারিতে হার্ডলাইনে সরকার। নৈরাজ্যকে কোনভাবেই বরদাস্ত করা হবে না বলে শক্ত অবস্থানে রয়েছে সরকার।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘বিএনপি যে ধ্বংসাত্নক রাজনীতির পথ থেকে সরে আসেনি এই ঘটনা তার প্রমাণ। সরকার যেকোন মূল্যে সরকারের জানমাল হেফাজতে বদ্ধ পরিকর।’

হুঁশিয়ারি দিয়ে তিনি বলেছেন, ‘আমি পরিষ্কারভাবে বলতে চাই, আন্দোলনের নামে সহিংসতা করলে আমরা জবাব দিয়ে দেব। আপনারা (বিএনপি) যদি মনে করেন সহিংসতা সৃষ্টি করে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবেন, তাহলে আপনারা বোকার স্বর্গে আছেন।’